২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার তিন কুশীলব

-

জ্যারেড কুশনার, ডেভিড ফ্রিডম্যান ও জেসন গ্রিনব্লট। এই তিনজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ায়। তিনটি বিষয়ে তাদের মধ্যে মিল রয়েছে। তারা সবাই অর্থডক্স ইহুদি এবং তাদের প্রত্যেককে নিয়োগ দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের কারোরই আগে থেকে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদের তিনজনেরই ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা পশ্চিম তীরে ইহুদি দখলের পক্ষে।
ফ্রিডম্যান ও কুশনার উভয়ই রামাল্লায় ইহুদি বসতি স্থাপনায় হার্ডলাইনে ছিলেন। তাদের মধ্যে কুশনার ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা। গ্রিনব্লট ১৯৮০-এর দশকে জেরুসালেমের কাছাকাছি ইহুদিদের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেন। এ সময় অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল দিয়ে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো।
এই তিনজনের ব্যাপারে ট্রাম্প মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন পরিকল্পনা প্রণয়নে যদিও প্রচুর রাজনৈতিক দক্ষতা প্রয়োজন; কিন্তু তাদের জন্য সুযোগের দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন উদ্যোগকে ‘শতাব্দীর সেরা সুযোগ’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। যেখানে বলা হচ্ছে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব এমনভাবে সমাধান করতে হবে যেখানে সর্বাধিক বাস্তব রাজনৈতিক নিষ্পত্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সমাধান পছন্দ করে। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাজধানী হিসেবে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ওপর ভিত্তি করে ফিলিস্তিনের পাশাপাশি একটি ইসরাইলি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তবে কুশনার একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করেন। তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করেন। এসব নিয়ে আলোচনা হবে একটি অজানা ভবিষ্যৎ পর্যন্ত। বাহরাইনের রাজধানী মানামায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের কর্মশালায় এই অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে। ফিলিস্তিন বা ইসরাইল কেউই এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছে না। কর্মশালায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ তহবিলের সৃষ্টি ঘটাতে পারে, যার প্রায় তিন হাজার কোটি বিনিয়োগ করা হবে পশ্চিম তীরে। যদিও ফিলিস্তিন এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, ‘কুশনার ও অন্য মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইলের আরব স্বীকৃতির জন্য শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সংযুক্ত করেছেন এবং ‘সার্বভৌমত্বের বিপরীতে ফিলিস্তিনের স্বায়ত্তশাসনের’ মতো অবস্থানটির স্বীকৃতি দিয়েছে। ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ট্রাম্পের এই উদ্যেগের সমালোনা করেছেন। তারা চান ইসরাইলের দখল থেকে মুক্তি, যা কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের দৈনন্দিন জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
জ্যারেড কুশনার
কুশনার হোয়ইট হাউজের সিনিয়র উপদেষ্টা। ৩৮ বছর বয়সী কুশনার ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় ইভাঙ্কাকে বিয়ে করেছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টায় ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সবার সামনে তুলে ধরতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি চীন, মেক্সিকো ও কানাডা সম্পর্কিত প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। সরকারি ভূমিকার আগে তিনি একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। যেটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তার পিতা চার্লস। তিনি অবজার্ভার মিডিয়ার চেয়ারম্যান ও প্রকাশক ছিলেন, যেটি ২০০৬ সালে তিনি ক্রয় করেন। কুশনারের পরিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পারিবারিক বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে নেতানিয়াহু তাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন।
জেসন গ্রিনব্লট
জেসন গ্রিনব্লøট একজন আইনজীবী। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি আইনি প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। ইসরাইল বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্প তাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘গ্রিনব্লøট এমন একজন ব্যক্তি যিনি সত্যিকারভাবে ইসরাইলকে ভালোবাসেন। ইসরাইলকে জানেন এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আমি পরামর্শ পেতে ভালোবাসি।’ গ্রিনব্লট বলেন, ‘আমি এমন লোকদের সাথে কথা বলতে চাই যারা ইসরাইল সরকারের নির্দিষ্ট পর্যায়ে জড়িত এবং তাদের চিন্তাধারা শুনতে পান।’
ডেভিড ফ্রিডম্যান
ডেভিড ফ্রিডম্যান ২০১৭ সালে ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি এর আগে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং দেউলিয়া আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পের একজন প্রচারক উপচেষ্টা ছিলেন। দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি স্থাপনে তিনি সক্রিয় সমর্থক। এ জন্য তিনি অর্থ সংগ্রহের কাজও করতেন। সূত্র : আলজাজিরা

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল