২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুরসির মৃত্যু মিসরীয় ট্র্যাজেডি

-

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির প্রেসিডেন্সি এমন এক গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের আশায় ঝাপসা ছিল, যা নির্মম স্বৈরশাসকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। তার মৃত্যু অত্যাধুনিক ট্র্যাজেডি সিরিজের সর্বশেষ সংযোজন। যা আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বিপ্লবের চমক সৃষ্টি হওয়ার পর মিসরকে জর্জরিত করেছে। তার অপ্রত্যাশিত উত্থানে মিসরীয়দের সামরিক শাসনমুক্ত ভবিষ্যতের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। তাকে আটকের পর একনায়কতন্ত্রের হাতে ৬০ হাজার মিসরীয়র একজনে পরিণত করা হয়েছিল, যাদের উন্নত জীবন যাপনের দাবিতে আন্দোলনের দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আদালতে বিচার চলাকালে মুরসির মৃত্যু এবং সেখানকার বিদ্যমান রহস্যজনক পরিস্থিতি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর জন্য সরকারের অপরাধ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। এই মৃত্যু দীর্ঘকাল ধরে চাওয়া হয়েছেÑ তা সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জালিয়াতিমূলক মৃত্যুদণ্ডের একটি সিরিজ তৈরি করার মাধ্যমে হোক কিংবা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে হোক। কারাগারের ভয়াবহ অবস্থা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা দ্বারা নিন্দিত হয়েছে।
মুরসির মৃত্যু মিসরে সামরিক শাসন পুনরুদ্ধারে আরেকটি মাইলফলক। তার মৃত্যুর মাধ্যমে মিসরের স্বল্পকালীন গণতান্ত্রিক সংকোচনে যেকোনো অবশিষ্ট স্থপতিকে দাফন করার মিশন শেষ হয়েছে।
এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর কায়রোর রাবা স্কয়ারে গণহত্যা হয়েছিল। যেখানে সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মিসরের ইতিহাসে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এক দিনে এটি ছিল সর্বাধিক নিহতের ঘটনা। পরে ক্ষমতা দখলকারী আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি দেশে সব ধরনের প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করেন। স্বাধীন মিডিয়া বন্ধ করে দেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠান। নির্বিচারে হত্যা করেন।
২০১৪ সালে সিসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে তার অন্যতম সমালোচক একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীও তাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি সাংবিধানিক সংশোধনী আনেন। তার এই অল্প সময়ের শাসনকালে অর্থনৈতিক বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতা ও মানুষের মৌলিক অধিকার ২০১১ সালের লাখ লাখ মানুষের আন্দোলনের পূর্বের অবস্থার চেয়েও খারাপ হয়ে পড়ে।
সিসির ক্ষমতায়নের বিপরীতে মুরসির পথ অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের প্রতিফলন করেছিল। ইসরাইলের সাথে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে মিসরের পরাজয়ের পর দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষমতা মিসরকে একটি সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়। মুরসি একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। হোসনি মোবারক যুগে ১৯৫৪ সাল থেকে নিষিদ্ধ করা হলেও মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড দৃঢ়ভাবে মিসরীয় নাগরিক সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য বিরোধী আন্দোলন রূপে আবির্ভূত হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোবারকের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য গণবিক্ষোভের পর অবশেষে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ড. মোহাম্মদ মুরসি। তিনি দেশের প্রথম স্বাধীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের এক বছরের মাথায় সামরিক পরিষদটি হঠাৎ একটি ডিক্রি জারি করে, যা কার্যকরভাবে প্রেসিডেন্টের সব নির্বাহী ক্ষমতা ছিনতাই করে। যখন মুরসি তার অফিসের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন, তখন রাজনৈতিক বিরোধীরা নিন্দা করেছিল।
মুরসির বড় ভুল মিসরীয়দের সন্তুষ্ট করতে তিনি যে অফিসে বসেছিলেন সেটি তার ছিল না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বছরের শেষ নাগাদ তার বিরুদ্ধে নতুন নতুন ব্যর্থতার দায় আনা হয়। অভিযোগগুলো হাস্যকর হলেও ষড়যন্ত্রের তত্ত্বগুলো হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশ ভ্রমণের সময় গোপনে পিরামিড বিক্রির অভিযোগও আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। অনেক মামলা হয়েছে। আদালতে চার্জ গঠন এখনো চলছিল। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাই ছিল যার শেষ পরিণতি।
মিসরের বিপ্লবী মুহূর্তের ব্যর্থতা নিশ্চিত করতে অভিনেতাদের ভূমিকা ছিল মুরসির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। মোবারক সরকারের প্রতি অনুগত আমলারা প্রেসিডেন্টের নীতি বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করে ছিল। নির্বাচনে মুরসি বা তার দলকে পরাজিত করতে পারে না এমন রাজনৈতিক দল বিদ্রুপের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল। পশ্চিমাসহ বিদেশী শক্তি পাল্টা বিপ্লবকে বাঁচিয়ে রাখে।
কেউ অবশ্যই মুরসির নেতৃত্বের ত্রুটি, তার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর দুর্বল যোগাযোগ এবং আসন্ন বিপ্লব প্রতিরোধের জন্য একটি বিস্তৃত বিপ্লবী জোট গঠনের ব্যর্থতার দিকে নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু মুরসির উত্তরাধিকার একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ক্ষুধার্ত আশার চেয়ে সামান্য বেশি কিছু ছিল। তার উত্তরাধিকার শিগগিরই বুঝতে পারছে যে, সেই সংক্ষিপ্ত আশা নিঃসন্দেহে নিঃশেষিত করা কঠিন। মুরসিকে উৎখাতকারী অভ্যুত্থানের ছয় বছর পর অনেক মিসরীয় বর্তমান শাসনকে অবৈধ বলে মনে করছে। এটি সম্ভবত এই কারণে যে, সিসির শাসন তার ব্যাপক অমানবিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রকাশ্যে নামাজে জানাজা অস্বীকার করা, রাতের বেলা দ্রুত তাকে দাফন করা, যেখানে মুরসি পরিবারের মাত্র দুজনকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়েছিলÑ এসব কেবল একটি জাতির দীর্ঘস্থায়ী ট্র্যাজেডিকেই প্রতিফলিত করতে সক্ষম হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল