২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিসরের সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পায়নি মুরসির মৃত্যুসংবাদ

মোহাম্মদ মুরসি -

বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর খবর বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হলেও মিসরের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ছিল তার বিপরীত চিত্র। স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট মিসরের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে কোনো গুরুত্ব পায়নি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিসরের একমাত্র রাষ্ট্রনেতার মৃত্যুর খবর।
৬৭ বছর বয়সী মুরসি সোমবার আদালতে মামলার শুনানির সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ২০১২ সালে আরব বসন্তের প্রভাবে মিসরের ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হুসনি মোবারকের পতনের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন মুরসি; কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর অনেক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাকে কারাবন্দী করা হয়। ব্যাপক দমন-নির্যাতন করা হয় তার দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের ওপর।
মঙ্গলবার মিসরের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর কোনোটিই মুরসির মৃত্যুর সংবাদ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেনি। ভেতরের পাতায় সাধারণত যেখানে অপরাধবিষয়ক সংবাদ ছাপা হয় সেখানে স্থান পেয়েছে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুসংবাদ। এমনকি কোনো রিপোর্টেই মুরসিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।
বেশির ভাগ পত্রিকায় ৪২ শব্দের একটি সংবাদ হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সেই সংবাদটি সামরিক জান্তার সরবরাহকৃত। মিসরের মাদা মাসর অনলাইন নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, আল মাসরি আল ইউম নামে একটি পত্রিকা শুধু প্রথম পাতায় স্থান দিয়েছে সংবাদটি।
সরকারি মালিকানাধীন তিনটি সংবাদপত্রে মুরসিকে অভিহিত করা হয়েছে ‘অভিযুক্ত’ বা ‘মৃত’ হিসেবে। ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট’ বা ‘ব্রাদারহুড নেতা’ এমন কিছুই লেখা হয়নি। কিছু বেসরকারি মালিকানার পত্রিকা কোনো বিশেষণই ব্যবহার করা হয়নি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা আল আহরাম তাদের চতুর্থ পাতায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম দিয়েছে ‘গুপ্তচরবৃত্তির মামলার শুনানির সময় মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকাল।’
আল আখবার পত্রিকার খবরের শিরোনাম ছিল ‘বিচার চলাকালে মোহাম্মদ মুরসির ইন্তেকাল।’ একই শিরোনামে তৃতীয় পৃষ্ঠায় ছোট্ট খবর প্রকাশ করেছে আল জুমহুরিয়া। দেশটির বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও একই পন্থা অবলম্বন করেছে। তাদের খবরে মুরসির রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে দেশটির শাসকের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য দেয়া হয়নি। পরদিন ভোরবেলা বহু পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া সেখানে কাউকে থাকতে দেয়নি সামরিক জান্তা। সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার ছিল না।
মুরসির আইনজীবী জানিয়েছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা ছিল নিজ গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার। কিন্তু সামরিক শাসকরা তার পরিবারকে বাধ্য করেছে রাজধানী কায়রোর একটি কবরস্থানে দাফন করতে।
মুরসির ছেলে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তোরা জেলখানার হাসপাতালে আমরা তার লাশ গোসল করাই। জেল মসজিদে নামাজে জানাজা হয়। মুসলিম ব্রাদারহুডের আধ্যাত্মিক নেতারা যেখানে শায়িত আছেন সেখানেই দাফন করা হয়।’
সিসির অধীনে মিসরে মিডিয়া সেন্সরশিপ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য ২০১৮ সালে তিনি ‘অ্যান্টি সাইবার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ক্রাইমস’ আইন অনুমোদন করেন। এই আইনের মাধ্যমেই সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্রিডম অব থট অ্যান্ড এক্সপ্রেশন-এএফটিইর মতে, প্রায় ৫০০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগ মিডিয়া। এ ছাড়া অন্তত ৩৫ জন সাংবাদিক ও ব্লগার মিসরে আটক আছেন বলে মনে করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement