২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এই মৃত্যু দুঃখজনক, কারণ অনুমিত

-

বাস্তব-জীবনের ঘটনাবলি উল্লেখযোগ্য প্রতীকী শক্তি বহন করে। ২০১২ সালে মিসরের প্রথম ও একমাত্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় আরোহণ এমন একটি ঘটনা। কয়েক বছর ধরে অপ্রতুল চিকিৎসার পরে গত সোমবার আদালতের কাঠগড়ায় তার মৃত্যু আরেকটি ঘটনা। মিসরীয়রা হয়তো মুরসির জন্য চোখের পানি ফেলবে না। তবুও তার মৃত্যুর প্রকৃতি নিয়ে তারা অনুশোচনা করবেন। আর এই ঘটনা যা বলছে, তা হলো তাদের চুরি হয়ে যাওয়া বিপ্লব। তিনি তাদের আশা ধ্বংসে সহায়তা করেছেন। তবে যে ব্যক্তিটি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন, তিনি করেছেন আরো খারাপ কাজ। আরব বসন্তে দীর্ঘ বিক্ষোভ ও আন্দোলনের পর ক্ষমতায় এলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী। কিন্তু মোবারকের সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারাতে যে সেকিউলার ও নিরপেক্ষ ভোটাররা ইসলামপন্থী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন, তারা মুরসির কর্তৃত্ববাদী ইচ্ছায় আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ হলেন। গণবিক্ষোভের মাঝে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আল সিসি যখন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিলেন, তখন অনেকেই এই অভ্যুত্থানের প্রতি সহানুভুতি দেখিয়েছিলেন। এমনকি তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দাবি করেছিলেন যে, সেনাবাহিনী গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনছে।
কিন্তু তারা ফিরিয়ে এনেছিল সামরিক শাসন। তারা রাবা চত্বরে শত শত মুরসি সমর্থকের ওপর গণহত্যা চালায় এবং আরো নির্মম শাসন চাপায়। গত বছর সিসি এক নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রত্যেক প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয়। এ বছর একইভাবে তিনি সংবিধান সংশোধনের ওপর এক গণভোটে জিতেছেন, যাতে তিনি ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী মুসলিম ব্রাদারহুডের শত শত সমর্থককে ঢালাও বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ রাবা চত্বরে গণহত্যা চালানো সেনাবাহিনীর একজন সদস্যকেও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। কয়েক মাস আগে কায়রোয় একদল মানুষকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তারা একজন কর্মকর্তাকে হত্যায় স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলেন। মুরসির মৃত্যু এ কারণে দুঃখজনক যে, যদিও তা আকস্মিক কিন্তু তা পুরোপুরি অনুমিত ছিল। আমরা স্যার ক্রিসপিন ব্লান্টের ভাষায় তার পূর্বাভাস দিয়েছিলাম। গত বছর মুরসির পরিবারের অনুরোধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের যে কয়জন সদস্য মুরসির ওপর চালানো আচরণের তদন্ত করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের একজন। চূড়ান্ত রিপোর্টে এ মর্মে হুঁশিয়ার করা হয়েছিল যে, তাকে যেভাবে রাখা হয়েছে, তা নির্যাতনের শামিল। আর তার ডায়াবেটিস ও লিভার রোগের জন্য আশু চিকিৎসা না হলে তার স্বাস্থ্যের স্থায়ী ও সম্ভবত মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এক পর্যায়ে কারাগারে থাকার সময়ে তিনি ডায়াবেটিসের কারণে জ্ঞানহারা হয়ে গিয়েছিলেন।
মিসরে আনুমানিক ৬০ হাজার রাজনৈতিক বন্দী অন্যায্য বিচার ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মুরসিকে দিনে ২৩ ঘণ্টা নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল এবং সংবাদপত্র পড়া ও টেলিভিশন দেখার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। তিনি প্রায় ছয় বছর আটক থাকা অবস্থায় মাত্র তিনবার তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন। অসুস্থতা সত্ত্বেও কারাগারের কক্ষে মেঝেতে তাকে ঘুমাতে হচ্ছে বলে তিনি তার পরিবারকে বলেছিলেন।
অতিদ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ একটি তদন্ত দাবি করেছে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কার্যালয়। মুরসিকে দ্রুততম সময়ে কবর দেয়ার পদ্ধতির কারণে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একটি গোপন ও কঠোর শাসনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে কতটা সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে তা যেকেউ কল্পনা করতে পারে। তবুও তদন্ত দাবি করা উচিত এবং তদন্ত হওয়া উচিত; কারণ ঘটনাগুলো আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।
পশ্চিমা দেশগুলোয় মিসরের গণতন্ত্রের ব্যাপারে যেসব বার্তা পাঠানো হয় তার কারণেই মিসরের সাথে সম্পর্ককে গঠনমূলক বলে অভিহিত করার চেষ্টা করে ব্রিটেন। ফ্রান্স ও অন্য দেশগুলো সিসিকে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং অভিবাসীদের জোয়ারে বাধা দানকারী ও একজন অস্ত্র ক্রেতা হিসেবে দেখে থাকেন।
হতাশ মিসরবাসীর মনে আশা জাগিয়ে তুলতে মুরসি ভূমিকা রেখেছেন। তবুও তার দুঃখভোগ ও মৃত্যু হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীর বিচারের জন্য এবং বিপর্যস্ত বিরোধী দলকে চূর্ণ করার জন্য সরকারকে আরো দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ করেছে। এই সত্যকে মেনে নিয়ে জেনারেল সিসির বন্ধুদের আরো লজ্জা করা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement