১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষী নীতি মিয়ানমারে ত্রাণসহায়তা প্রত্যাহার করার হুমকি জাতিসঙ্ঘের

কেনাট ওস্টবি -

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষী নীতির কারণে মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কেনাট ওস্টবি নেপিদোকে চিঠি দিয়ে এই বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন। গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রাখাইন সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে জাতিসঙ্ঘ। কেনাট ওস্টবির চিঠিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়ে যে রোহিঙ্গারা এখনো রাখাইনের আশ্রয় শিবিরে (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পার্সনস-আইডিপি ক্যাম্প) থেকে গেছে, তাদের মৌলিক মানবাধিকার ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হবে। মিয়ানমার অবশ্য চিঠিটিকে হুমকি হিসেবে মানতে নারাজ। তাদের দাবি, ওই চিঠিতে সহায়তার বার্তা দেয়া হয়েছে।
গত ৬ জুন মিয়ানমার সরকারকে লেখা চিঠিতে দেশটিতে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, এখন থেকে চলাফেরার স্বাধীনতাসহ মৌলিক ইস্যুতে বাস্তব উন্নতি হলেই কেবল জাতিসঙ্ঘ ও তাদের দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা সরবরাহ করা হবে। মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আয়েকে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরনো ‘বন্ধ থাকা’ এবং নতুন তৈরি করা ক্যাম্পগুলোতে একই অমর্যাদাকর পরিস্থিতি চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের মৌলিক সেবা বা জীবিকার সুযোগ নেই। এমনকি দৃশ্যত অপরিবর্তিত থেকে গেছে ক্যাম্পের অবস্থান। এই মানুষদের মৌলিক মানবাধিকার ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারায় হতাশ হয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কেনাট ওস্টবি পদত্যাগ করতে পারেন বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত দমনাভিযান জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসঙ্ঘের হিসেবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো সেখানে থেকে গেছে। রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসঙ্ঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী নতুন অভিযান জোরালো করার পাশাপাশি এসব ক্যাম্প বন্ধ শুরুর অঙ্গীকার করে মিয়ানমার সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উল্টো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি দিনকে দিন আরো অবনতির দিকে গেছে।
সেই ২০১৮ সালের এপ্রিলে জাতিসঙ্ঘ তাদের এক রিপোর্টে জানায়, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হওয়া এসব মানুষ সেখানকার শিবিরে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। সংস্থাটির ত্রাণবিষয়ক উপপ্রধান উরসুলা মুলার সে সময় দাবি করেন, আর্জাতিক সম্প্রদায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগী হলেও রাখাইনে থেকে যাওয়া ওই চার লাখ রোহিঙ্গা আলোচনার বাইরে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের বাস্তবতাকে প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যা দিয়ে রাখাইন পরিস্থিতি উন্নয়নের তাগিদ দেন তিনি। একপর্যায়ে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সম্মত হয় মিয়ানমার। ওই কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, স্বেচ্ছায় ও আলোচনার ভিত্তিতে এসব ক্যাম্পে বসবাসকারী ব্যক্তিদের নিজেদের গ্রাম বা আশপাশের সম্ভাব্য কোথাও আবার বাসস্থান তৈরি করে দিতে হবে, যেখানে তারা জীবিকার সুযোগ পাবে। তবে জাতিসঙ্ঘের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট ও মানবিক সংস্থাগুলোর বর্ণনা থেকে জানা গেছে, আইডিপি ক্যাম্পগুলোতে রুদ্ধশ্বাস বাস্তবতা চলছে। সেখানে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ ও দুর্দশা অপরিবর্তিত রয়েছে। চলাফেরা, জীবিকা উপার্জনের সুযোগ প্রায় পুরোপুরিই অস্বীকার করা হয়েছে।
গার্ডিয়ানের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আইডিপি ক্যাম্প বন্ধের কাজ আন্তর্জাতিক মানে আনতে জাতিসঙ্ঘ বেশ কয়েক মাস ধরেই মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। ধারণা করা হয়, এসব নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ওস্টবির সাথে সাক্ষাৎ করতেও অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।
তবে মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক উপমন্ত্রী সোয়ে অং দাবি করেছেন, ওস্টবির চিঠিকে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি হিসেবে দেখছেন না তারা। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের সংস্থা এবং আমাদের মন্ত্রণালয় নিবিড় যোগাযোগ রাখছে আর মানবিক সহায়তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য আমরা খোলামেলাভাবে এবং বারবার আলোচনা করছি।


আরো সংবাদ



premium cement
দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি উজিরপুরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, নিহত ১

সকল