১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হংকংয়ে আন্দোলন অব্যাহত

প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগ দাবি
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগের দাবিতে গতকাল কালোকাপড় পরে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয় :ইন্টারনেট   -

হংকংয়ে গতকাল রোববারও ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যর্পণ বিল স্থগিতের ঘোষণা এলেও প্রত্যর্পণ বিল সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বাতিল এবং প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ও বেইজিংপন্থী নেতা ক্যারি ল্যাম লাখ লাখ লোকের ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সমালোচনার মুখে শনিবার বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে প্রত্যর্পণ বিল সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বাতিল এবং তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। সপ্তাহব্যাপী এই বিক্ষোভকালে সংঘর্ষে প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। এ ছাড়া শনিবার ভবন থেকে পড়ে একজন বিক্ষোভকারী মারা গেছে।
সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রত্যর্পণ বিলের কারণ চীন হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে। হংকংবাসীর এ আশঙ্কার কারণে বিলটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সর্বস্তরের লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেমে আসে। বলা হচ্ছে ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হংকংয়ের হস্তান্তরের পর থেকে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বিক্ষোভ।
এদিকে বিলটি নিয়ে চীনা সরকার বলছে, এটি বাতিল করা হবে একটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ যত দ্রুত সম্ভব জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে শান্তি পুনরুদ্ধারই গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে আই ক্যাবল নিউজকে বেইজিংপন্থী কট্টর আইনপ্রণেতা অ্যান চিয়াং বলেন, ‘আমাদের কি উচিত না জনগণকে শান্ত করা? আমি মনে করি বিলটি স্থগিত করা খারাপ কিছু না। উল্লেখ্য এই বিলের কারণে চীন তার দেশের সন্দেহভাজন অপরাধীকে হংকং থেকে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করার সুযোগ পাবে।
সাবেক ব্রিটিশ কলোনি হংকং ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ চুক্তির আওতায় ১৯৯৭ সালে চীনের শাসনের অধীনে ফিরে যায়। চুক্তিতে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের সীমা নিশ্চিত করা হয়। সম্প্রতি হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ চীন ও তাইওয়ানে অপরাধী প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিল পাসের উদ্যোগ নিলে অঞ্চলটি জুড়ে গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ চীনের সাথে সমঝোতা নিয়ে। বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছে না হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছেন, বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়বে।
উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন হংকংয়ের চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। তবে এই ঘোষণাকে শহরকে টুকরো টুকরো করা ‘ছুরি’ বলে অভিহিত করেছেন গ্রুপ সিভিল হিউম্যান রাইটস ফ্রন্টের এক নেতা জিমি শাম। তিনি বলেন, এই ছুরি আমাদের প্রায় হৃদয় পর্যন্ত গেথে গেছে। এখন সরকার বলছে তারা বিলটি স্থগিত করেছে কিন্তু বিলটি প্রত্যাহার করে নিতে অস্বীকার করছে তারা।
২০১৮ সালের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কিত বিলটি তৈরি করে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সাথে হংকংয়ের বন্দী বিনিময়ের কোনো চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। এখন তাইওয়ানও জানিয়েছে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement