২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানের সাথে যুদ্ধে না জড়াতে ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ও কূটনীতিকদের চিঠি

-

অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান অ্যাডমিরাল, জেনারেল, রাষ্ট্রদূত ও সিনিয়র সহকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম গত শুক্রবার ইরানের সাথে চলমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তারা বলেছেন, ভুলের মাধ্যমে হোক কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবেই হোক, ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে তা ইতোমধ্যে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে একটি অভাবনীয় নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
চিঠিতে ৭৬ জন স্বাক্ষর করেন। এটি শুক্রবার ওয়ার অন দ্য রকস ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। চিঠির সংবাদ এমন এক সময় এলো যার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত এক হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা পাঠানোর ঘোষণা দেন।
চিঠিতে সতর্ক করে দেয়া হয়, ইরানের সাথে যুদ্ধ হলে এটি হবে এমন একটি যুদ্ধ যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিশাল আর্থিক, মানবিক ও ভূ-রাজনৈতিক খরচের আরেকটি সশস্ত্র সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেবে। চিঠিতে আরো বলা হয়, অনুসন্ধানমূলক কূটনীতির অংশ হিসেবে উত্তেজনা কমাতে উভয় দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থ করতে হবে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বিপজ্জনক আঞ্চলিক উত্তেজনা অবিলম্বে কমানোর জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। গত বছর ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে দেশটিকে চাপে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ইরানের ‘এলিট বাহিনী’কে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা, ইরানের তেল রফতানি বাণিজ্যকে শূন্যের কোটায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জবাবে ইরানও মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডকে সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে অভিহিত করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে এই দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে আরো ১৫০০ সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি বাহিনীগুলোর অব্যাহত হুমকি মোকাবেলায় আরো সেনা, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান একটি বিবৃতিতে বলেছেন, সেখানে ১৫ শ’ সেনা পাঠানো হচ্ছে। সেই সাথে যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রও মোতায়েন করা হবে।
কংগ্রেসকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার দিনের শুরুতেই এই পদক্ষেপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই সেনা মোতায়েন তুলনামূলকভাবে স্বল্প। যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন যে, দেশটি তেলের ট্যাংকারে হামলা চালাচ্ছে। এ মাসে ওমান উপসাগরে কয়েকটি তেলের জাহাজে রহস্যজনক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বেড়ে গেছে। এরপর ওই এলাকায় বিমানবাহী রণতরী এবং বোমারু বিমান মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। শানাহান বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত সেনা চেয়ে কমান্ডারদের অনুরোধে অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। তিনি দাবি করেন, এই পদক্ষেপ হলো ইরানি সেনাবাহিনী, আইআরজিসির অব্যাহত হুমকির মোকাবেলায় এই সেনারা একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।
আইআরজিসি হলো ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস, সামরিক বাহিনীর একটি এলিট শাখা, গত মাসে এক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শানাহান বলেন, প্রকৌশল দলের অংশ হিসেবে সেখানে অতিরিক্ত গোয়েন্দা ও নজরদারি সরঞ্জাম এবং বিমান মোতায়েন করা হবে। একটি ফাইটার এয়ারক্রাফট স্কোয়াড্রন ও প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও পাঠানো হবে। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যাতে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য যেকোনো হুমকির সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়।
‘ইরান ট্রাম্পের শেষ দেখবে ট্রাম্প ইরানের শেষ দেখতে পারবেন না’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে ‘শেষ করে’ দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তার এমন হুমকির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ দেখতে পাবে ইরান কিন্তু ট্রাম্প কখনো ইরানের শেষ দেখতে পাবেন না। গত সপ্তাহে ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ইরান যদি যুদ্ধ করতে চায় তাহলে তা হবে ইরানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। তেহরানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উসকানি বা প্ররোচনা ছাড়াই অনর্থক ওই মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার তিনি আরেক বক্তব্যে ইরানকে তার ভাষায় ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement