২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মার্কিন চাপে আত্মসমর্পণ করবে না ইরান : রুহানি

-

হামলার শিকার হলেও ইরান কখনো মার্কিন চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না এবং নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। বৃহ¯পতিবার বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। রুহানি বলেন, এক বছরেরও অধিক সময় আগে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করা হয়। কিন্তু আমাদের মানুষেরা শত কষ্টের পরেও মাথা নত করেনি। তিনি জোর গলায় বলেন, আমাদের দরকার তীব্র প্রতিরোধ। আমাদের শত্রুরা বুঝতে পারবে, যদি আমাদের বোমা মারা হয়, আমাদের শিশুরা শহীদ হয় বা তাদেরকে আটক করা হয় তবুও আমরা হাল ছেড়ে দেবো না। এর এক দিন আগে ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি শত্রুদের হুমকি দিয়ে বলেন, তেহরানের দিকে আগানোর চেষ্টা করলে কঠিন জবাব দেবে ইরান। এ সময় তিনি ইরাকের সাথে যুদ্ধে ইরানের সফলতার কথা তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, ইরানের কথিত হুমকির মুখে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রণতরী প্রেরণের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা। এমন একসময় রুহানি এমন ঘোষণা করলেন, যখন দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ও বাগ্যুদ্ধ চলছে। ২০১৫ সালে ইরানের সাথে ছয় বিশ্বশক্তির সই করা বহুপক্ষীয় পরমাণু চুক্তি থেকে বছরখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পর দেশটির বিরুদ্ধে একেবার পর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চলছে।
১৯৯০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের স্মরণে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন হাসান রুহানি। তিনি বলেন, আমাদের দরকার প্রতিরোধ। কাজেই আমাদের শত্রুদের জানা উচিত যে, তারা যদি আমাদের ভূমিতে বোমাও মারে, আমাদের শিশুদের শহীদ করে দেয়, তাদের আহত কিংবা কারাগারে আটকেও রাখে, তবুও আমাদের স্বাধীনতা আমরা ত্যাগ করবো না। রোববার এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান যদি যুদ্ধ করতে চায়, তবে সেটা হবে দেশটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। যুক্তরাষ্ট্রকে কখনোই হুমকি দেবেন না।
তা ছাড়া এএফপি জানায়, ইরানের অধিকারকে সম্মান না জানালে ‘কোনো অবস্থাতেই’ তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করবে না। বৃহস্পতিবার ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র কিভান খোসরাভি বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি যে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দেশের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানো হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিহার করা না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের বর্তমান অবস্থানে অটল থাকব।’ এ কর্মকর্তা জানান, ‘এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোন অবস্থাতেই আলোচনা হবে না।’ খোসরাভি বলেন, এটা নিয়ে আলোচনায় বসার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা তেহরান সফর করছে। এসব প্রতিনিধির অধিকাংশ আমেরিকার পক্ষ থেকে আসছে। তিনি আরো বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা ইরানের নীতি অনুযায়ী তেহরানের যুক্তি তুলে ধরে সাড়া দিয়েছি।’
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসেফ বিন আলাভি সোমবার তেহরানে আসার পর বৃহস্পতিবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক পরিচালক জেন্স পাটার ইরানে আসেন।
উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখছে ওমান
ইরান-মার্কিন উত্তেজনা কমাতে অন্যদের সাথে ওমানও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক টুইটে জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাওয়ি বলেন, এখানে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে গোটা বিশ্ব এবং উভয়পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানও হামলার ঝুঁকির বিষয়ে অবগত।
গত সোমবার তেহরানে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সাথে তার বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান, দুই দেশের সাথেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে ওমান। ১৯৮০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটলে তাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা রেখেছিল ওমান।
তেহরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ অচলাবস্থা চলছে।
ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের শক্তি প্রদর্শনে রণতরী, বি-৫২ বোমারু বিমান ও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

 


আরো সংবাদ



premium cement