২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উপসাগরীয় উত্তেজনা নিয়ে জাতিসঙ্ঘকে আলোচনা শুরুর আহ্বান ইরানের

-

ইরানসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান ‘বিপজ্জনক’ উত্তেজনা নিরসনে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তাখতে রাভাঞ্জি। সোমবার দেয়া ওই চিঠিতে এক দিকে ইরান এবং অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র, তার উপসাগরীয় জোট সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে তেহরানকে হুমকি দেন। টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান যদি যুদ্ধ করতে চায়, তাহলে সেটিই হবে ইরানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। কখনোই আর যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেবেন না।’ এর এক দিন পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ ট্রাম্পের হুমকির নিন্দা জানান এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে সম্মানের সাথে মানিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
সোমবারের চিঠিতে রাভাঞ্জি এই বলে সতর্ক করেন যে, সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের উত্থান আঞ্চলিক পর্যায় অতিক্রম করবে এবং অবশ্যই আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর গুরুতর ও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ইরান কখনোই যুদ্ধ করবে না; কিন্তু আমাদের ওপর যুদ্ধ আরোপ করা হলে জোরালোভাবে আত্মরক্ষার স্বার্থে অধিকার প্রয়োগ করা হবে।
এ দিকে গত সোমবার জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয়পক্ষকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। বিস্তারিত বলা না হলেও জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করতে বিভিন্ন স্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। কয়েক দিন আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে যুদ্ধ চায় না; কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্যে সেখান থেকে সরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছিলেন যে, তিনি আশা করেন ইরানের সাথে কোনো যুদ্ধ হবে না। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফও বলেছিলেন, যুদ্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই; কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের যুদ্ধ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সৌদি বাদশাহ সালমান আগামী ৩০ মে মক্কায় এক জরুরি বৈঠকে বসার জন্য আরব লিগ এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট জিসিসি সদস্যদের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে সমুদ্রসীমায় (সৌদি) বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা এবং সৌদি আরবের মধ্যে দু’টি তেলক্ষেত্রে হুতি সন্ত্রাসীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এখনো ইরানের সাথে করা চুক্তি বজায় রেখেছে।
বিবিসির প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক জনাথন মার্কাস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন চান ইরানের সাথে করা এই পরমাণু চুক্তি থেকে সবাই বেরিয়ে যাক। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তার ফলে ইরানের অর্থনীতি দিনে দিনে সঙ্কটে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য যেন ইরান তাদের তেল অন্য দেশের কাছে বিক্রি করতে না পারে। এ ছাড়া গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সবচেয়ে সুসজ্জিত বাহিনী রেভুলিউশনারি গার্ডকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।


আরো সংবাদ



premium cement