১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোট এগিয়ে

স্ত্রীকে নিয়ে ভোট দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন : ইন্টারনেট -

গতকাল শনিবার অস্ট্রেলিয়ার ৪৬তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকেই ভোট দিতে শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার ভোটাররা। অস্ট্রেলিয়ার সব প্রদেশ ও অঞ্চলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। তার পরপরই ভোট ফল আসতে শুরু করে। মোট ভোটের ২ শতাংশের কম গণনা শেষে দেখা গেছে, ১৯ আসনে বর্তমান জোট সরকার দল লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টি জয় পেয়েংছে। লেবার পার্টি জয় পেয়েছে ৯ আসনে। সরকার গঠনের জন্য দরকার ৭৬টি আসন।
এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের লিবারেল-ন্যাশনাল জোট ও বিরোধীদলীয় নেতা বিল শর্টেনের মধ্য-বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির (এএলপি) মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। তবে ভোটের আগে করা জনমত জরিপ অনযায়ী, বিরোধী দল লেবার পার্টিই এখনো এগিয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। চলতি বছরের নির্বাচনে দেশটির এক কোটি ৬৪ লাখ ভোটার ভোট দেন। প্রতি তিন বছর পরপর অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়; কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বব হকের মৃত্যুর দু’দিনের মাথায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বব হক ছিলেন একজন জাতীয় নেতা এবং সর্বজনীন লেবার পার্টির নায়ক। তিনি প্রায় এক দশক (১৯৮৩-১৯৯১) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনের আগে করা জরিপ অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয়, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন ভোটাররা। শনিবার সকালে সিডনির দক্ষিণাঞ্চলের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
যেহেতু ভোট দান বাধ্যতামূলক তাই ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের সবাই ভোট দেবে, নতুবা ২০ অস্ট্রেলীয় ডলার জরিমান গুনতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি তিন বছর পরপর জাতীয় নির্বাচন হয়; কিন্তু ২০০৭ সালের পর এখন পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ক্ষমতাসীন দল লিবারেল-ন্যাশনাল পার্টি টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য লড়াই করছে। যদিও দলটির মধ্যে চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। নিজ দলের ভেতরে বিদ্রোহের কারণে মাত্র ৯ মাস আগে দলীয় নেতৃত্ব হারান ম্যালকম টার্নবুল, সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীত্ব। গত বছর আগস্টে দলের নেতা নির্বাচনের ভোটাভুটিতে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহযোগী স্কট মরিসনের কাছে হেরে যান তিনি। ওই হারের পর টার্নবুল পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন মরিসন। টার্নবুলের সাথে সব ধরনের তিক্ততা মিটিয়ে ফেলেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মরিসন বলেন, অল্প সময় হাতে পেলেও তিনি দল অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারে মরিসন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা বিল শর্টেনও জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গত ছয় বছর তিনি লেবার পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজ দলের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে জলবায়ু পরিবর্তন, জীবনযাপন ব্যয় ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেবেন। উভয় নেতাই শনিবার সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন।
অস্ট্রেলিয়ায় সব সময় শনিবার ভোট গ্রহণ করা হয়। এবার দেশজুড়ে প্রায় সাত হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা ভোট দেন বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। তবে ভোটাররা চাইলে আগাম ভোটও দিতে পারেন। এবার রেকর্ড প্রায় ৪০ লাখ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় সর্বশেষ নির্বাচনে ৯৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যা অনেক বেশি। সর্বশেষ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ৫৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৬৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকায় শুক্রবার প্রকাশিত জরিপে ক্ষমতাসীন জোটের চেয়ে লেবার পার্টি ২ শতাংশ ভোট বেশি পাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে যেই জিতুক ভোটের লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে গ্রিন্স, ওয়ান নেশন এবং ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টির মতো ছোট দলগুলো এমনকি স্বতন্ত্রভাবে জয়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে আসতে পারে। যদি মরিসনের দল হেরে যায় তবে চার বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement