১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিলিস্তিনিদের ৭১তম নাকবা দিবস পালন

-

পশ্চিম তীর ও গাজায় ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ৭১তম নাকবা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার গাজা শহরের বাসিন্দারা সাধারণ ধর্মঘট পালন করে। দোকান মালিকরা তাদের ব্যবসায় বন্ধ করে দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ পরিচালনা করেন। বিক্ষোভকারীরা ‘বয়কট ইউরোভিশন’ লেখা প্লাকার্ড বহন করে। তারা উদ্বাস্তু শিবির থেকে নিজ ভূমিতে আবার ফিরে যাওয়ার দাবি জানায়।
নাকবা শব্দের অর্থ বিপর্যয়। নাকবা দিবসের উৎপত্তি ১৯৪৮ সালের ১৫ মে শুরু হওয়া আরব-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে। তার এক দিন আগে, ১৪ মে ইসরাইল নিজেদের ঘোষণা করে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিনে আরবদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে অঞ্চলটি বরাদ্দ করেছিল, এই যুদ্ধের পর তার অর্ধেকটাই চলে যায় ইসরাইল বা ইহুদিদের দখলে। ফিলিস্তিনের জাতীয় বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকে। এটিকেই তারা বলে নাকবা দিবস বা বিপর্যয় দিবস।
প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে হয় এ সময়। ইহুদি বাহিনী তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে। পরে ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আরব ও ইসরাইলের মধ্যে আবারো যুদ্ধ হয় এবং সে সময় জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ড থেকে আরো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি জাতিসঙ্ঘে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। তাদের বেশির ভাগই বাস করে জর্দান, গাজা ভূখণ্ড, পশ্চিম তীর, সিরিয়া, লেবানন ও পূর্ব জেরুসালেমে। তাদের এক-তৃতীয়াংশ বসবাস করে শরণার্থী শিবিরগুলোতে। এই সঙ্ঘাতের সূচনা বহু আগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কি ওসমানি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। তখন যে লিগ অব নেশনস গঠিত হয়েছিল, সেই বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে ব্রিটেনকে ম্যান্ডেট দেয়া হয় ফিলিস্তিন শাসন করার। অন্য দিকে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেখান থেকেই জায়নিজম বা ইহুদিবাদী আন্দোলনের শুরু। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে কেবল ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠন করা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন চলছিল তখন ব্রিটেন আরব এবং ইহুদি, উভয় পক্ষের কাছেই নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ফিলিস্তিন নিয়ে। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই ব্রিটেন রক্ষা করেনি। পুরো মধ্যপ্রাচ্য তখন ভাগ-বাটোয়োরা করে নিয়েছিল ব্রিটেন আর ফ্রান্স। সেই সময় ফিলিস্তিন ছিল মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিষ্টান এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র ভূমি। ফলে ইহুদিবাদী আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপের ইহুদিরা দলে দলে ফিলিস্তিনে গিয়ে বসত গাড়তে শুরু করে। কিন্তু তাদের এই অভিবাসন স্থানীয় আরব ও মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। সে সময় আরব ও মুসলিমরাই ছিল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফিলিস্তিনে তখন আরব জাতীয়তাবাদী এবং ইহুদিবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত শুরু হয়। ইহুদি এবং আরব মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেভাবে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় (হলোকাস্ট) তার পর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চাপ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা এই ফিলিস্তিন অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল।
এই নাকবা দিবসও তখন থেকেই পালিত হয়ে আসছে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। প্রতিবছরই ফিলিস্তিনিরা এই নাকবা দিবসে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করে। দিবসটি উপলক্ষে তারা জড়ো হয় ইসরাইল সীমান্তে। দিনটিকে ঘিরে ইসরাইলের সাথে ফিলিস্তিনিদের তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নাকবা দিবসকে কেন্দ্র করে দুইবার বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। ফিলিস্তিনিদের নাকবা দিবসের প্রধান দাবিÑ তাদের জমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার। এই দাবির ভিত্তি হচ্ছে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালে গৃহীত এক প্রস্তাব। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যেসব শরণার্থী তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইবে এবং প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাস করবে তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।’ ইসরাইলের বক্তব্য, ৫০ লাখ শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেয়া অসম্ভব। কারণ সেরকম কিছু হলে তারাই ৮৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে এবং ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের সমাপ্তি ঘটবে। বিশ্ব ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে চুপচাপ আছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের ১৫ মে নাকবা দিবস পালনও শেষ হচ্ছে না!
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ২০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন ইসরাইলের
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গত ১০ বছরে প্রায় ২০ হাজার অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে ইসরাইল। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর মেয়াদকালে এসব অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়েছে। অবৈধ বসতি স্থাপনবিরোধী পর্যবেক্ষক সংস্থা পিস নাউ-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ২০১৮ সালেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে দুই হাজার ১০০ নতুন অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণ শুরু হয়।


আরো সংবাদ



premium cement