২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমি ভারতকে নতুন প্রধানমন্ত্রী উপহার দিতে চাই : অখিলেশ যাদব

অখিলেশ যাদবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সাংবাদিক -

ভারতকে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী দিতে চান দেশটির সবচেয়ে জনবহুল উত্তর প্রদেশ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিং যাদব। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপিকে পরাজিত করতে তিনি একটি জোট গঠন করেছেন। এ জোট ভারতের নিম্নœবর্ণের হিন্দু, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও মুসলমানদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। এতে চ্যালেঞ্জে পড়েছে বিজেপি। যাদবকে দেখা হয় রাজনৈতিক পরিবর্তনের খেলোয়াড় হিসেবে।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব উত্তর প্রদেশের ২০তম মুখ্যমন্ত্রী। এটওয়ার সেন্ট মেরি থেকে তার স্কুলজীবনের শুরু। এরপর রাজস্থানের ঢোলপুরে মিলিটারি স্কুলে লেখাপড়া করেন। পরে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে অস্ট্রেলিয়ায় যান তিনি। ১৯৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর বিয়ে করেন ডিম্পল যাদবকে। উত্তর প্রদেশের সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত অখিলেশ যাদব। ৩৮ বছর বয়সে ২০১২ সালের মার্চ মাসে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
তিনি তিনবার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অখিলেশ রাজ্যজুড়ে ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ এবং ৮০০ মিছিল করেন। গ্রামীণ জীবনের বিকাশ ও কৃষক ও দরিদ্রদের কল্যাণে তার সক্রিয় ভূমিকার সাফল্য ধরা পড়ে উত্তর প্রদেশের নতুন ছবিতে। ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম তরুণ মুখ তিনি। তরুণ প্রজন্মের উন্নতিকল্পে তিনি একাধিক ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
৪৫ বছরের এই রাজনীতিক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তুরস্কের বার্তা সংস্থা টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সাথে। খোলামেলাভাবে কথা বলেছেন বিজেপির পাঁচ বছরের শাসন ও বিরোধী দল কংগ্রেসের দুর্বলতা নিয়ে। সাক্ষাতকারটি সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : আপনার পার্টি বা আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে আপনার গড়ে তোলা জোটকে কেন জনগণের ভোট দেয়া উচিত?
অখিলেশ যাদব : বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। মানুষ অসুখী, কৃষকেরা দুঃখিত। বিজেপি চাকরি তৈরি করছে না। বেকারত্ব প্রধান সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটার প্রতিকার করছেন না। সম্প্রতি আলীগড়ে এক ভাষণে তিনি বলেছেন, আলুচাষিরা তার সরকারের পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই ঘটেনি। কৃষকরা এখনো তাদের দেনার জন্য কান্নাকাটি করছেন। চিনিকলগুলো তাদের পাওনা পরিশোধ করছে না। তাই এ সময় উত্তর প্রদেশে বিজেপির পক্ষে এক অঙ্কের আসন জয় করাও কঠিন হবে। আমি এটা বলছি এ জন্য যে, আমাদের রাজ্যে সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোতে আমাদের জোট পার্লামেন্টের তিন আসনেই জয়ী হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি প্রায়ই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ‘এক শতাংশ ভারতীয়র প্রধানমন্ত্রী’ বলে ডাকেন। কেন?
অখিলেশ যাদব : আগের নির্বাচনে মোদি যখন নোট বাতিলের কথা বলেছিলেন, তখন মানুষ এটি পছন্দ করেছিল। তারা ভেবেছিল দরিদ্রদের কাছে আরো টাকা আসবে। এটি ঘটেনি। পরিবর্তে ধনীরা নতুন নতুন সুবিধা পেয়েছে। দরিদ্র মানুষের টাকা ব্যাংকে গিয়েছে আর ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের ঘরে গিয়েছে। এমনকি জিএসটি (জেনারেল সার্ভিস ট্যাক্স) সম্পর্কে বিজেপি বলেছিল, এটা নিছক করব্যবস্থা। যেহেতু ভারতের বাজার সুশৃঙ্খল নয়, এ জন্য এটি ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করেছে। বিজেপি পরিষ্কারভাবে ধনী মানুষের মাত্র এক শতাংশ সমর্থন করে। ভারতের ধনী জনসংখ্যার এক শতাংশের মধ্যেই মোদি প্রধানমন্ত্রী। ৯৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষের প্রধানমন্ত্রী তিনি নন।
প্রশ্ন : আপনি আপনার রাজ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণকে কিভাবে দেখছেন? যেখানে গরু রক্ষার জন্য ছুরিকাঘাতে হত্যা, ঘর ওয়াপসি কর্মসূচি (মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের জোরপূর্বক হিন্দু বানানো) ইত্যাদি? এমন উপলব্ধি কি আছে যে এতে ভারতের বদনাম হচ্ছে?
অখিলেশ যাদব : আমি একমত যে, এগুলো মন্দ ঘটনা। এতে ভারতের বদনাম হয়েছে। কিন্তু এর কারণ বিজেপি ও তাদের মিত্র ও সঙ্ঘ পরিবার (কয়েকটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের একটি পরিবার)। কেউ কী খাবে বা পরবে, সেজন্য পৃথিবীর কোথাও মানুষ হত্যা করার দৃষ্টান্ত নেই। বিজেপি সমাজে এ ধরনের ঘৃণার চাষ করছে। তারা ঘৃণার একটি প্রাচীর তৈরি করেছে। এটাকে আমাদের ধ্বংস করতে হবে। বিজেপি দরিদ্রদের জন্য বাস্তবে কিছুই করেনি। তারা শুধু সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভর করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। এ কারণেই তারা ধর্ম, বর্ণসহ সব কিছুকে রাজনীতিতে নিয়ে আসে। বিজেপি বাস্তব বিষয় নিয়ে কথা বলে না।
প্রশ্ন : এসপি ও বিএসপি অনেক বছর ধরে বৈরী। আমি কিভাবে তাদের রাজনৈতিক সহযোগী বানালাম?
অখিলেশ যাদব : দেখুন, নির্বাচন ও রাজনীতিতে অনেক নতুন বিষয় আসে। আমরা অভিন্ন ইস্যুগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিÑ সংবিধান সংরক্ষণ ও দেশ বাঁচানো। ভারতের সংবিধান হামলার শিকার। এ জন্যই এসপি আর বিএসপি এখন একসাথে। এ ঐক্য আগামী বছরগুলোতে অব্যাহত থাকবে।
প্রশ্ন : ধরুন বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না ও তারা আপনার পার্টি বা সমর্থন চাইলো আপনার মিত্র বিএসপির, যারা অতীতে বিজেপির সহযোগী ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন? এ ব্যাপারে বিএসপির সাথে আপনার বোঝাপড়া কতটা জোরালো?
অখিলেশ যাদব : আমাদের কোনো দলই বিজেপিকে সাহায্য করবে না। আমাদের জোট বিজেপির বিরুদ্ধে। এই নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলো আগের চেয়ে আরো বেশি আসন পাবে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি বন্দোপাধ্যায় বিশাল জয়লাভ করবেন। তেলেঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কলভকুণ্ঠ একচেটিয়া জয়লাভ করতে যাচ্ছেন। এমনকি তামিলনাড়ুতে ডিএমকে ভালো করবে। তারপর বিহারে বিজেপি বিরোধী আরজেডি জোট, কংগ্রেস ও অন্য আঞ্চলিক দল খুব ভালো করবে। একই অবস্থা ইউপিতে, যেখানে এসপি, বিএসপি ও আরএলডি ভালো করছে। প্রথম দফার ভোটে আমরা নিশ্চিত যে, আমরা সব আসনে জিতব।
প্রশ্ন : কংগ্রেস কিছু আসনে আপনাদের জোটের বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। এতে কি আপনি চিন্তিত?
অখিলেশ যাদব : এটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি না। কংগ্রেসের কোনো সংগঠন নেই। তাদের ভালো প্রার্থী থাকতে পারে। তবে উত্তর প্রদেশে তাদের সংগঠনের অভাব রয়েছে। আসলে এ বছরের নির্বাচনে তাদের দৃষ্টি নয়। তাদের দৃষ্টি ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশের রাজ্যসভা নির্বাচন। তারা লড়ছে রাজ্যসভার জন্য। অথচ এসপি, বিএসপি ও আরএলডির দৃষ্টি ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকানো। কংগ্রেসের চিন্তা ইউপিতে দল গঠন করা। তাদের লক্ষ্য সংগঠন তৈরি করা। আর নির্বাচনের সময় দল বা সংগঠন তৈরি করা যায় না।
প্রশ্ন : কংগ্রেস একটি জোটের অংশ হতে চেয়েছিল এবং আলোচনা স্পষ্টভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কেন?
অখিলেশ যাদব : আমরা মধ্য প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের সময় কথা বলেছিলাম। তখন বিএসপির সাথে কংগ্রেসও আলোচনায় ছিল। কিন্তু তিনটি রাজ্যে জয়লাভের পর কংগ্রেস কখনোই কারো সাথে কথা বলেনি। তারা একটি সম্ভাব্য জোট গঠনের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তিনটি রাজ্যে জয়লাভের পর তারা মনে করেছিল তারা একাই উত্তর প্রদেশে জয়লাভ করতে পারবে। কিন্তু এটা ঘটতে যাচ্ছে না।
প্রশ্ন : পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আপনার জোটের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কারণে ভোট ভাগ হয়ে যাবে। এটি সম্ভবত বিজেপিকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করবে। সম্ভাব্য এই পরিস্থিতিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
অখিলেশ যাদব : ভোটাররা খুবই বুদ্ধিমান। যারা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে চায় তারা আমাদের জোটে আসবে। তারা এমন একটি দলকে (কংগ্রেসকে) ভোট দেবে না যারা একাধিক বিজেপিকে হারাতে পারবে না।
প্রশ্ন : অনেক মানুষ বলে আপনি খুব উচ্চাভিলাষী। এর মধ্যে কি ভবিষ্যতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও আছে?
অখিলেশ যাদব : (হাসি) না, আমি উচ্চাকাক্সক্ষী নই। আমি নতুন প্রধানমন্ত্রী তৈরি করতে চাই। আমার পুরো সংগ্রাম ভারতকে নতুন প্রধানমন্ত্রী দেয়া।
সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল