২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
নিহত বেড়ে ৩২১

শ্রীলঙ্কায় দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালন

শ্রীলঙ্কার নেগাম্বোর সেন্ট সাবেস্টিয়ান চার্চে গতকাল নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পুরোহিতরা :ইন্টারনেট -

শ্রীলঙ্কায় কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে একযোগে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনের দাঁড়িয়েছে। কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র রাবন গুসাসেকারা গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানান, গত রোববার ওই হামলায় আহত পাঁচ শতাধিক মানুষের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে মারা গেছেন।
হতাহতদের স্মরণে গতকাল দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে শ্রীলঙ্কা। তিন মিনিট নীরবতার মধ্য দিয়ে সকালে ভারত মহাসগারের এই দ্বীপ দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কার্যক্রম শুরু হয়। পুরো দেশে সব সরকারি-আধা সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা রাখা হয় অর্ধনমিত। এ ছাড়াও সরকার মদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বেতার কেন্দ্র ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে শোকসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছে। সেন্ট অ্যান্থোনির গির্জায় বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে মোমবাতি জালান ও প্রার্থনা করেন। বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের গির্জায় শেষকৃত্য শেষে নিহতদের কয়েকজনকে শোয়ানো হয় গণকবরে। তিন মিনিট নীরবতা পালনেরর ওই কর্মসূচি শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। দুই দিন আগে ঠিক ওই সময়েই ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচ তারা হোটেলে মোট ছয়টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
টুইটারে দেয়া এক পোস্টে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, এই অকল্পনীয় ট্রাজেডির মুখে লঙ্কান জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা আবশ্যক। এর আগে সোমবার কলম্বোয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ২১ এপ্রিলের সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের আশঙ্কার কথা জানান শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রজিথা সেনারতœ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না যে, এই হামলাগুলো শুধু দেশের ভেতরে সীমাবদ্ধ একটি গোষ্ঠী চালিয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ছাড়া এসব হামলা সফল হতে পারত না।’
হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও জানিয়েছেন রজিথা সেনারতœ। তিনি জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহতদের সবার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য এক লাখ রুপি করে দেয়া হবে। আহতরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন। বোমার আঘাতে জর্জরিত গির্জা মেরামতের জন্য সরকারিভাবে তহবিল দেয়া হবে। খুব শিগগিরই এটি শুরু হবে। রজিথা সেনারতœ বলেন, এ ঘটনার দায় আমাদের। আমরা খুবই মর্মামত। প্রত্যেকের কাছ থেকে ক্ষমা লাভে আমরা আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছুই করছি।
কলম্বোর একটি গির্জা ও তিনটি পাঁচ তারা হোটেল, নিকটবর্তী নেগম্বো শহরের একটি গির্জায় ও দেশের অন্য প্রান্তে বাত্তিকোলার একটি গির্জায় হামলাগুলো চালানো হয়। এর পাঁচ ঘণ্টা পর কলম্বোর দক্ষিণাংশের দেহিওয়ালায় জাতীয় চিড়িয়াখানার কাছে ছোট একটি হোটেলে সপ্তম বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে দুইজন নিহত হন। বিকেলে পুলিশের অভিযান চলাকালে কলম্বোর দেমাটাগোদা এলাকায় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে, এতে তিন পুলিশ নিহত হন।
প্রথম ছয়টি হামলায় কোথায় কতজন নিহত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করেনি। অন্তত সাতজন আত্মঘাতী এসব হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হতাহতের অধিকাংশই শ্রীলঙ্কান। তবে নিহতদের মধ্যে ৩৮ জন বিদেশী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে অন্তত আটজন ভারতীয়, আট ব্রিটিশ, তিন ডেনিশ, দুই তুর্কি, দুই অস্ট্রেলীয়, এক চীনা, এক বাংলাদেশী এবং যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড ও পতুর্গালের নাগরিকরা রয়েছেন।
এক দশক আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগাররা উৎখাত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ হামলা আর দেখা যায়নি শ্রীলঙ্কায়। এ পরিস্থিতিতে সোমবার মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে ভারত লাগোয়া দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। জরুরি অবস্থার বলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী আদালতের নির্দেশ ছাড়াই সন্দেহভাজনদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় এ ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো।
বিস্ফোরণের পর সরকার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।
শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও এদের অধিকাংশই শ্রীলঙ্কান ও এদের জিজ্ঞাসাবাদের পর একজন সিরীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার ও সামরিক বাহিনীর তিনটি সূত্র। একটি সূত্র বলেছে ‘স্থানীয় সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাকে (সিরীয়) গ্রেফতার করা হয়’।
প্রাথমিকভাবে ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত (এনটিজে) নামে স্থানীয় একটি ইসলামী সংগঠনকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। তবে শ্রীলঙ্কা সরকারের ধারণা, যে সংগঠনই ওই হামলা চালিয়ে থাকুক, তারা শ্রীলঙ্কার বাইরে থেকে সহযোগিতা পেয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তাও চাওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফ থেকে। এনটিজে রোববারের হামলায় দায় স্বীকার করেনি। তবে এ ঘটনার তিন দিন পর গতকাল আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর আগে লঙ্কান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে দাবি করেছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মুসলিমদের ওপর হামলার বদলা নিতেই শ্রীলঙ্কায় হামলা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, তদন্তে কর্মকর্তারা প্রমাণ পেয়েছেন, কয়েক মাস আগে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে যে হামলা হয়েছিল তার বদলা নিতেই এ হামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, হামলাগুলোতে আইএসের কিছু বৈশিষ্ট্যের ছাপ রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ভয়াবহ হামলার তদন্তে ইতোমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল। প্যারিসভিত্তিক এই সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তারা একটি দল কলম্বোয় পাঠিয়েছে, যদি আরো কিছু প্রয়োজন হয় তাও দিতে তৈরি তারা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ব্রিটিশ কর্মকর্তারাও তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর

সকল