২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইরানের তেল ক্রয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় চীনের বিরোধিতা

-

ইরানের তেল ক্রয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারে চরম অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে বলে হুঁশিয়ারি করেছে চীন। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গ্যাং সুয়াং বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জোরালো বিরোধিতা করছে চীন।
এদিকে ইরান থেকে তেল আমদানিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানবে না বলে জানিয়েছে তুরস্ক। নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পেতে তেহরানের তেল ক্রেতাদের দেয়া ছাড় বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরই সোমবার এমন প্রতিক্রিয়া জানান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ কাভুসগলু।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলুকে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে আমরা কিভাবে সম্পর্ক স্থাপন করব, সে বিষয়ে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ আমরা সহ্য করব না। মার্কিন হস্তক্ষেপে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি নষ্ট হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মওলুদ কাভুসগলু।
যুক্তরাষ্ট্র সোমবার বলেছে, ভারতের মতো বন্ধুরাষ্ট্রও ইরান থেকে তেল আমদানি করলে তাদের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। ইরানের প্রতি এই আগ্রাসী মনোভাবে বিভিন্ন দেশের সাথে মার্কিন সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে তুরস্ক মার্কিন দাবি অগ্রাহ্য করবে বলে জোর দিয়ে জানিয়েছে।
এই কঠিন মার্কিন পদক্ষেপের কারণে বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, বাজারে ইরানি তেল কমে গেলে সৌদি আরব সেই ঘাটতি পূরণ করবে। ইরানের তেল রফতানি কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন তেহরানের রাজস্ব আয়ের শীর্ষ মাধ্যমটিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। কাজেই মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির প্রভাব কমিয়ে আনতে ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজের ঘোষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অস্থিতিশীল তৎপরতার অবসানে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন ও তার মিত্ররা অনড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর ইরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর প্রাথমিকভাবে আট দেশকে ছয় মাসের জন্য তেল কেনায় ছাড় দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানি তেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতাদের একটি হচ্ছে ভারত। ওয়াশিংটনের সাথে নয়াদিল্লির সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইরানকে হুমকি বলে যে দাবি যুক্তরাষ্ট্র করছে, তার সাথে দ্বিমত পোষণ করছে ভারত। পাকিস্তানকে পাশ কাটাতে ইরানে সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কাজ করছে ভারত। কাজেই একটি সূত্র জানায়, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জটিলতা পর্যালোচনা করে দেখছে ভারত। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীন ও তুরস্ক। কাজেই ইরানি তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্র অটল থাকলে এ দুই দেশের সাথে ওয়াশিংটনের নতুন বিতর্ক তৈরি হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জোর দিয়ে বলেছেন, আগামী ২ মে’র পর যেসব দেশ ইরান থেকে তেল কিনবে, তাদের শাস্তি পেতে হবে। তবে কিভাবে সাজা দেয়া হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলছিÑ যদি আপনি এ নীতি অমান্য করেন, তবে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাব। এ ছাড়া গ্রিস, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানও ইরান থেকে তেল ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। আর দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ নিয়ে আলোচনায় বসবেন। সর্বশেষ সময়সীমা নিয়ে সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করবেন। ইরান থেকে তেল ক্রয় করা হলে কাউকে ছাড়া দেয়া হবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর রাতের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement