২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচন ইসলামপন্থী উইদোদোর জয়

-

ইন্দোনেশিয়ার এই সপ্তাহের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই মাস আগে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাসিক একা কুরনিয়াওয়ান একটি মতামত কলামে লিখেছিলেন যে, ‘ইসলামপন্থীরা ইতোমধ্যে জয় লাভ করেছেন’। গত বুধবারের নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো আসলে বিজয়ী হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের মেয়াদে ক্ষমতায় বহাল থাকছেন তিনি। কিন্তু এটিও প্রত্যক্ষ করেছেন যে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ঐতিহ্যবাহী একটি কট্টরপন্থী মুসলিম গ্রুপ ভোট প্রদান করেছে। বিশ্বে সবচাইতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশটিতে বহু মতের পক্ষে উইদোদো অঙ্গীকার করলে হয়তো সামান্য ব্যবধানে তার জয় হতো।
কিন্তু এখন ইন্দোনেশিয়াকে অবশ্যই শাসন করতে হবে ধর্মের অনুসরণে এবং তার সমর্থক মুসলিম দলগুলোর চাহিদা পূরণ করতে তাকে সংগ্রাম করতে হবে এবং তার বিরোধী কট্টর ইসলামপন্থীদের মোকাবেলা করতে হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আহমাদ সুকারসোনো বলেন, ‘খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই উইদোদোকে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত ও স্বার্থকে সমন্বয় করতে হবে। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠরা অনিরাপদ বোধ করলে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা কঠিন হবে। আর এটা করা হচ্ছে শুধুমাত্র জনগণের স্বার্থে। এর অর্থ এই নয় যে, ইন্দোনেশিয়া সৌদি আরবে পরিণত হবে বা চুরির অপরাধে তাদের হাত কাটা হবে।’ যদিও প্রায় ৯০ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ান মুসলিম, তবে দেশটি সরকারিভাবে ধর্মনিরপেক্ষ। দেশটি হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদেরও আবাসস্থল। ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় সহনশীলতার ঐতিহ্য এখন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, তবে ইসলামের ঐতিহ্যিক ব্যাখ্যা বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশটিতে শরিয়াভিত্তিক অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে এবং বেশির ভাগ নারীরাই জনসম্মুখে মাথা বা পুরো শরীর ঢেকে রাখেন।
ইসলামপন্থীদের শক্তি
উইদোদোর প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সামরিক জেনারেল প্রাবোও সুবিন্তো এই প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো ও ধর্মীয় দলগুলোর সাথে একটি জোট গঠনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ শক্তিশালীভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করেছিলেন। অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা যায় যে, প্রাবোও সুবিন্তো ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার শক্তঘাঁটি কেবল আচেহ, পশ্চিম জাভা এবং পশ্চিম সুমাত্রায় নিজের সমর্থন বজায় রাখেননি; উপরন্তু আরো চারটি প্রদেশে জিতেছিলেন। এই প্রদেশগুলোতে সববচেয়ে বেশি রক্ষণশীলদের দেখা যায়। কারণ, তারা শরিয়াভিত্তিক আইন প্রবর্তন করেছে এবং জনতাত্ত্বিক হিসাবে ৯৭ ভাগের বেশিই মুসলমান। বুধবার নির্বাচনে ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে কমপক্ষে ১৩টি প্রদেশে প্রাবোও জিতেছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ফেলো ইভে ওয়ারবোর্টন বলেন, ‘এই নির্বাচনে রাজনৈতিক মানচিত্রে আরো বিভক্তি তৈরি করেছে। যখন উইদোদো এবং প্রাবোও সামনের সারিতে নেতৃত্বে থাকবেন না তখন বিভক্তিগুলো মৃদু হতে পারে কিন্তু তারাতো উধাও হয়ে যাবেন না।’
প্রাবোও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেছেন এবং ফলাফলের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে হুমকি দিয়েছেন। তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থনকারী বেশির ভাগ কট্টরপন্থী ইসলামী ধর্মীয় নেতা এবং দলগুলো একই রকম ছিল, যারা ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্টের এক সময়কার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাকার্তার খ্রিষ্টান গভর্নর চীনা জাতিগোষ্ঠীর বসুকি তেজাহাজা পূর্ণামাকে ক্ষমতচ্যুত করতে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন।
সুবিয়ান্তোর বিজয় দাবি
এদিকে পার্সটুডের এক খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার বিরোধীদলীয় প্রার্থী প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে বিজয়ী হিসেবে দাবি করে বলেছেন, নির্বাচনে তার পক্ষে ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কারচুপির মাধ্যমে ফল উল্টে দেয়া হচ্ছে।
অবশ্য ২০১৪ সালের নির্বাচনেও সুবিয়ান্তো নির্বাচনের দিনই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। ইন্দোনেশিয়ায় গতকালের নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাথমিক ফলাফল বেরিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement