২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান বুতাফ্লিকা

আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা -

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা অনিশ্চয়তার পর আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। গুরুতর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় অটল থাকতে মরিয়া এই প্রেসিডেন্ট বেশ কিছু চাতুর্যপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করেছেন। তবে মনে হচ্ছে এবার তার এসব চাটূক্তি, ফন্দিফিকির ও ষড়যন্ত্রে যথেষ্ট কাজ হবে না।
১৫ মার্চ আলজেরিয়ার রাস্তার ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে প্রেসিডেন্ট তার বিরোধীদেরকে বিশেষ করে তার মিত্র ও অংশীদারদেরকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন এবং তিনিই ক্ষমতায় থাকতে চান।
বুতাফ্লিকা ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সে সময় দেশটির রাজপথ অশান্ত ছিল এবং রাজনৈতিক শৃঙ্খলা আগের মতো কাজ করছিল না। ব্যাপকভাবে নিন্দিত তার সমর্থকরা নীরব থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকি তাদের অনেকে প্রতিবাদকারীদের প্রশংসা করেন, যারা প্রতিদিন তাদের নানাভাবে অপমান করছিলেন।
বেআইনি চমক
এই সপ্তাহে বুতাফ্লিকা আলজেরীয়দের জানান যে, তিনি এখনো মূল খেলোয়াড়। চমক দেখাতে তিনি ১৮ এপ্রিলে নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবৈধভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি লড়তে আগ্রহী নন বলে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন এখন তার বিপরীতের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখা যাচ্ছে। যদিও তার প্রচারণা সম্পর্কিত একজন পরিচালক সাংবিধানিক কাউন্সিলে প্রার্থী হিসেবে তার নাম জমা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও বুতাফ্লিকা একটি জাতীয় পরামর্শসভা এবং সাংবিধানিক সংশোধনসহ একটি সংস্কার প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এসবের আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে যাতে তিনি প্রার্থী হবেন না। এ প্রক্রিয়াতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নুরউদ্দীনে বাদায়িকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিয়ার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। উপ-প্রধানমন্ত্রীর নতুন পদ তৈরি করে রামতেনে লামামরাকে তার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে বুতাফ্লিকার মূল হুমকি রাস্তার বিক্ষোভ নয়, তার সরকারের অভ্যন্তরেই রয়েছে। যা-ই ঘটুক না কেন, তাদের প্রায় সবাই সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তাবাহিনীর প্রতি সমর্থক।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লামামরা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে অন্য রাষ্ট্রগুলোকে অবহিত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রবীণ আলজেরীয় কূটনীতিবিদ লাখদার ব্রাহিমি তাকে সমর্থন করেছেন। বর্তমানে তিনি সরকারি কোনো পদে নেই। রেডিও ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বুধবার এক ঘণ্টা ব্যবধানে দুইজন কথা বলেছেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
এসব পদক্ষেপ হলো আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংহত করার পক্ষে পরিচালিত অসাধারণ হাতিয়ার বলে মনে করা হচ্ছে। আলজেরিয়ার প্রতিবাদকারী লুইসা আইত-হামাদুশ বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চাইনি যেটিতে বুতাফ্লিকার পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় আসা সুনিশ্চিত করবে; কিন্তু এখন নির্বাচন হচ্ছে না, কিন্তু বুতাফ্লিকা ক্ষমতার তখ্তে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।’ ইউনিভার্সিটি অব আলজিয়ার্সের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক আইত-হামাদুশ বলেন, ‘বুতাফ্লিকা পঞ্চম মেয়াদটি বাতিল করে দিয়েছে তবে চতুর্থ মেয়াদ বর্ধিত করেছে, যা বড় ধরনের একটি আইনি সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ২৮ এপ্রিলের পর তিনি আইন অনুযায়ী বৈধভাবে আর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’
ঐক্য সংরক্ষণ
বুতাফ্লিকার জন্য রাস্তার বিক্ষোভ নয়, সরকারের মধ্যেই রয়েছে প্রধান হুমকি। সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তাবাহিনীর সমর্থন বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী? তার চার পাশে থাকা চেনাশোনা মানুষগুলোকে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রয়োাজন। সেনাবাহিনীর জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রধান আহমদ গায়দ সালাহর আগের অবস্থান বুতাফ্লিকার জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল; কিন্তু তিনি বিক্ষোভকারীদেরকে ‘বিপথে চালিত’ মানুষ বলে আখ্যায়িত করার পর তার অবস্থানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন যা বুতাফ্লিকার জন্য বিশেষ স্বস্তিদায়ক। সেনাপ্রধান রোববার বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রশ্নে জনগণ ও সেনাবাহিনীর অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে’।
তিনি বলেন, বুতাফ্লিকা নিজে ১১ মার্চ বলেছিলেন যে, তিনি বিক্ষোভকারীদের বোঝেন এবং বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে। এতে গাইদ সালাহের অবস্থানের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। একই সময়ে সাধারণত বুতাফ্লিকার পক্ষে কাজ করেন যারা তাদের মধ্যেও একটি লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন সংস্থার এসব লোকের এ ভূমিকা দৃশ্যত প্রেসিডেন্টের অবস্থানকে সংহত করছে।
প্রতিবাদকারীদের শান্ত করা
প্রতিবাদকারীদের শান্ত করতে নতুন নতুন মুখকে সামনে আনা হয়েছে। কিন্তু আসলে এ পরিবর্তন ততটা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। এরা খুবই অজনপ্রিয়। তাদের সবার পেছনের ইতিহাস একই, একই মতাদর্শ বা দলের সমর্থক। তাদেরকেই নতুন করে দায়িত্বে আনা হচ্ছে। বুতাফ্লিকার জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত টিকে থাকতে হলে বিক্ষোভ আন্দোলনে জড়িতদের দমানোর জন্য রাজনৈতিক পুনর্গঠন করা এবং তার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এসব বিবেচনা করেই তিনি নানাবিধ প্রস্তাব করেছিলেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ৩ মার্চ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে তিনি পরামর্শ সভা গঠন, সাংবিধানিক সংস্কার ও গণভোট অনুষ্ঠানের এসব প্রস্তাব দিয়েছেন।
কিন্তু এই সময়ের খেলা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষ ব্যাপক বিক্ষোভের শামিল হয়ে মূলত বুতাফ্লিকার শাসনের অবসান চাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা ও আক্রমণ সত্ত্বেও আন্দোলনটি জোরালো হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই বিক্ষোভ আরো শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছেন তারা।
বুতাফ্লিকার পঞ্চম মেয়াদ শুরু
রাস্তার বিক্ষোভের প্রতি তেমন নজর নেই বুতাফ্লিকার। তাদের মধ্যে যারা উচ্চকণ্ঠ তাদেরকে কব্জায় নিয়ে এ বিক্ষোভ দমন তার জন্য কঠিন কিছু নয়। কেবল বুতাফ্লিকা নন, আলজেরিয়ার সব শাসকই এমনটি করে থাকেন। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্টের চাতুর্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। একজন মোহমুক্ত সাবেক আন্দোলনকারী বলেন, প্রতিটি আন্দোলনের পর বুতাফ্লিকা বিশিষ্ট বিক্ষোভাকারীদেরকে বেছে বেছে মন্ত্রী ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছেন। আন্দোলনের এমন প্রতীকদেরকে লোভনীয় টোপ দিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। যেমন আরসিডি পার্টির নেতা সাঈদ সাদি ও খালিদা তাওমি। তারা উভয়ে বুতাফ্লিকার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছিলেন।
বেনজাদিদের পরিণাম
কিন্তু এবারের অবস্থা বেশ চ্যালেঞ্জিং। জনগণের বিরাট অংশগ্রহণ এবারের বিক্ষোভকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। তারা বুতাফ্লিকার শাসনের অবসান দাবি করছেন। তাদের দাবি জোরালো এবং তিন সপ্তাহ ধরে চলার পরও বিক্ষোভ দিন দিন আরো জোরদার হচ্ছে। এবারের আন্দোলন দমাতে হলে কেবল চাতুর্য কাজে আসবে না। তাকে শাদলি বিন জাদিদের পথে পা বাড়াতে হতে পারে। বিন জাদিদ ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্তু প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন; কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তার রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটাতে হয়।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই

 


আরো সংবাদ



premium cement
গলাচিপায় স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে ৩টি সংগঠনের নেতৃত্বে মানববন্ধন থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ছেলে হারা মা সাথিয়ার কান্না যেন থামছেই না বৃষ্টির জন্য নারায়ণগঞ্জে ইস্তিস্কার নামাজ আদায় প্রবাসী স্ত্রী থেকে প্রতারণার মাধ্যেমে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায়, ছাত্রলীগ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরো ৪৬ বিজিপি সদস্য উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা কক্সবাজারে ট্রেন লাইনচ্যুত, যোগাযোগ বন্ধ গাজার অর্ধেক জনসংখ্যা ‘অনাহারে’ : জাতিসঙ্ঘ বেড়াতে নিয়ে প্রেমিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

সকল