২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাশ্মিরে ব্যবহৃত বিস্ফোরক স্থানীয়ভাবেই সংগৃহীত

ভারতীয় জেনারেলের মন্তব্য
-

ভারতের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদা বলেছেন, কাশ্মিরের পুলওয়ামায় হামলায় যে বিপুল বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে তা সীমান্তে ওপার থেকে আসা বা সীমান্ত পার করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে পুলওয়ামার অবন্তীপুরায় এক আত্মঘাতী হামলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনী কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪৪ জওয়ান নিহত হয়।
এই হামলার জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানকে দোষারোপ করে দেশটির বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিচ্ছে ভারত। তবে পাকিস্তান জোরালোভাবে ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এই ধরনের ভিত্তিহীন ও আবেগপ্রবণ বক্তব্য পরিহার করার জন্য নয়াদিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, বৃহস্পতিবারের ওই হামলায় অংশ নেয়া আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলাকারী আদিল আহমাদ দার ৭৫০ পাউন্ড ওজনের বিস্ফোরক নিয়ে সিআরপিএফের গাড়িবহরে এই হামলা চালান।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে হামলার সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল হুদা। গত শনিবার তিনি বলেন, ‘জম্মু হাইওয়েতে হামলা চালাতে গোপন কোনো স্থান থেকেই বিস্ফোরক তৈরির উপাদান ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করা হয়ে থাকতে পারে।’ হামলার পর পরই ভারত পাকিস্তানকে কূটনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে একঘরে করার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার কারণে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার খুব কম সুযোগই পাবে ভারত। কারণ ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো প্রস্তাব উঠলে সেটাতে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা কাজে লাগিয়েছে বেইজিং। পাকিস্তানকে সবসময় রক্ষা করছে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ চীন।
পাকিস্তানের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকার কারণেই সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার পথে হাঁটছে ভারত। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সামরিকভাবেও পাকিস্তানকে কাবু করতে পারবে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগও ভারতের জন্য সীমিত। কারণ কাশ্মিরের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় বরফে ঢাকা বা তুষারের চাদরে আবৃত থাকে। আর সেখানে পাকিস্তানি সেনারা থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতায়।
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে আমেরিকার সমর্থনও ওইভাবে পাবে না ভারত। কারণ এই মুহূর্তে আফগান তালেবানদের সাথে ওয়াশিংটনের শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতায় প্রধান ভূমিকা রাখছে ইসলামাবাদ। আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ অবসানে আজ সোমবার ইসলামাবাদে তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে মার্কিন প্রতিনিধিদের সরাসরি নতুন করে শান্তি আলোচনায় বসার কথাও রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ কারণেই পুলওয়ামায় এই হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারে হামলার প্রকৃতি দেখেই বুঝা যাচ্ছে কাশ্মিরের অভ্যন্তরেই বিদ্রোহ এবং হামলার ঘটনা বাড়ছে। তবে পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, এই হামলার সাথে পাকিস্তানের যোগসূত্র কতটা গভীর? হামলাস্থল থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে আদিল আহমদের গ্রাম। ধারণা করা হচ্ছে হামলাকারী আদিল এ ধরনের ঘটনার জন্য স্থানীয়ভাবেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন, স্থানীয়ভাবে বিস্ফোরক সংগ্রহ করে গাড়িতে স্থাপন করেছেন।
আদিলের কয়েকজন বন্ধুর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিক্ষোভের সময় সিআরপিএফের জওয়ানদের গুলি তার পায়ে লাগে। নির্যাতনের পরেই সশস্ত্র স্বাধীনতাকামীদের দলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কাশ্মিরের বহু মানুষ সিপিআরএফকে ঘৃণা করে। তারা মনে করে, দখলদার এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে তাদের নির্যাতন করার জন্য। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনীকে ছাড়পত্র দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কাশ্মিরে শক্ত অবস্থানে থাকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীতি কতটা টেকসই হবে- এই হামলার পর তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
কাশ্মিরে পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন আছে। ফলে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সামরিকায়ন এলাকায় পরিণত হয়েছে, যা কাশ্মিরের জনগণের প্রাত্যহিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কৃষিজমি, বাড়িঘর, স্কুল সব জায়গাতেই সেনাদের সর্বদা উপস্থিতি থাকে। ফলে বেশির ভাগ কাশ্মিরি রিজার্ভ ফোর্সের সদস্যদের ভালোভাবে দেখেন না। কারণ তাদের কারণেই ব্যাহত হচ্ছে কাশ্মিরিদের দৈনন্দিন জীবনযাপন।
বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিরাপত্তা তুলে নিলো ভারত
অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনকারী নেতাদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় সিপিআরএফের কমপক্ষে ৪৪ সদস্য নিহত হওয়ার তিন দিন পর মোদি সরকারের তরফ থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়া হলো।
স্বাধীনতাকামী নেতাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং পরিবহন সুবিধা তুলে নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, পাকিস্তান এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা পায় এমন লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি দ্রুত পর্যালোচনা করা হবে। ইতোমধ্যেই জম্মু-কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা মীরওয়াইজ উমর ফারুকের নিরাপত্তা তুলে নেয়া হয়েছে। তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংগঠনগুলোর জোট অল পার্টি হুররিয়াত কনফারেন্সের অন্যতম নেতা।
স্বাধীনতাকামী নেতা মীরওয়াইজ বরাবরই কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে আসছেন। হুররিয়াত কনফারেন্সের অন্য নেতাদেরও নিরাপত্তা দ্রুত তুলে নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement