২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মিরে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬

পাকিস্তানকে মোদির কঠোর হুঁশিয়ারি অভিযোগ ইসলামাবাদের প্রত্যাখ্যান
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের জম্মুতে গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ চলাকালে রাস্তায় জ্বলন্ত যানবাহন : এএফপি -

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় আধাসামরিক সেনা নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ‘সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন’ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে ভারত। ইসলামাবাদ কাশ্মিরে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং এ ব্যাপারে ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসঙ্ঘ ও বিভিন্ন দেশ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুন জেটলি বলেন, তার দেশ পাকিস্তানকে ‘বিচ্ছিন্ন করে দিতে’ কূটনৈতিকভাবে যা যা করা দরকার তার সবই করবে। গত এক দশকে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে যত হামলা হয়েছে এটিই তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। জম্মু-কাশ্মিরের গোরিপোরার কাছে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে বৃহস্পতিবার বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। হামলার সময় পুলওয়ামা জেলার শ্রীনগর-অনন্তনাগ মহাসড়কের ওপর দিয়ে জম্মু থেকে শ্রীনগরে যাচ্ছিল সিআরপিএফের গাড়ি বহরটি। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। সংগঠনটি তাদের ২২ বছর বয়সী আত্মঘাতী হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করেছে।
কাশ্মিরের হামলা নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে নয়াদিল্লিতে জরুরি বৈঠকে বসে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্য শীর্ষ মন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন। মোদি হুঁশিয়ার করেন, যারা এ হামলা চালিয়েছে তারা ‘মহাভুল’ করেছে এবং এর জন্য ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে তাদেরকে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, পাকিস্তানকে ‘পুরোপুরি একঘরে’ করে দিতে সম্ভাব্য সব কূটনৈতিক চেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। জেটলি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেবে সরকার। কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা হামলা চালিয়েছে এবং যারা এই হামলায় সহায়তা দিয়েছে, তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে।’
পাকিস্তানকে দেয়া ভারতের ‘মোস্ট ফেবারড ন্যাশন’-এর সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ‘মোস্ট ফেবারড ন্যাশন’ চুক্তি স্বাক্ষর করে থাকে। এর ফলে ওই জোটের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশ পরস্পরকে আর্থিক সাহায্য করে থাকে। ভারতের তরফ থেকে ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে দেয়া ‘মোস্ট ফেবারড ন্যাশনের’ মর্যাদাও নয়াদিল্লি তুলে নিচ্ছে বলে জানান অরুণ জেটলি। ভারত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এই হামলার বিষয়ে তার কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ইসলামাবাদ কাশ্মিরে হামলার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে এবং হামলা নিয়ে তাদের ওপর আসা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো তদন্ত ছাড়াই ভারত সরকার এবং ভারতীয় গণমাধ্যম যেভাবে পুলওয়ামার ঘটনার সাথে পাকিস্তানের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে, আমরা দৃঢ়ভাবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করছি।’ এতে আরো বলা হয়, আমরা সব সময়েই কাশ্মির উপত্যকায় সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা করে আসছি।
এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরির সেনা ছাউনিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিল ১৯ সেনা। কিন্তু এবারের এ হামলা উরির ভয়াবহতাকেও ছাপিয়ে গেছে। কাশ্মিরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মহবুবা মুফতিও টুইটারে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিরোধী দল কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা এ শোকের সময় সরকারের পাশেই থাকবে।
হামলার নিন্দা
কাশ্মিরে এই হামলার ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে ভারত সরকারের পাশে থাকতে যুক্তরাষ্ট্র ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও সমর্থন না দিতে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। ভারতে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের দূত কেনেথ জাস্টারও আলাদা করে টুইটারে পুলওয়ামা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র রবার্ট পালাডিনো বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরে ভারতের রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) ওপর যে হামলা হলো যুক্তরাষ্ট্র তার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে।’
জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে ওই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ওই হামলার নিন্দা করেছে। হামলার ঘটনার নিন্দা করে ভারতের প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশও ভারতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement