২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিরিয়ায় আইএসের বোমা হামলায় মার্কিন সৈন্যসহ নিহত ১৯

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর মানবীজে আত্মঘাতী হামলার পরের বিধ্বস্ত অবস্থা : এএফপি -

সিরিয়ার মানবিজ শহরে এক বোমা হামলায় চার মার্কিনিসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ খবর জানিয়েছে। বুধবারের এ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে একে আত্মঘাতী হামলা বলে দাবি করেছে আইএস।
‘আইএস পরাজিত হয়েছে ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে অবিলম্বে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হামলাটি চালানো হল। নিহত চার মার্কিন নাগরিকের মধ্যে দুই মার্কিন সৈন্য ও মার্কিন সামরিক বাহিনীর হয়ে কাজ করা দুই বেসামরিক রয়েছেন।
এ হামলাকে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় মার্কিনবাহিনী মোতায়েনের পর থেকে তাদের ওপর চালানো সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা মানবিজে তাদের ওপর এ হামলা হলো। এ বোমা হামলায় চার আমেরিকান নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। বিস্ফোরণে আরো তিন মার্কিন সৈন্য আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে তারা।
বুধবার মানবিজ থেকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মার্কিনরা একটি রেস্তোরাঁয় বসে নিজেদের সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় হামলার ঘটনাটি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানবিজে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা চলার সময় হামলাটি হয়। পরে এক বিবৃতিতে আইএস জানিয়েছে, এক সিরীয় যোদ্ধা মানবিজে বিদেশী টহল দলের ওপর নিজের আত্মঘাতী ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। একজন বলেছেন, ‘আমেরিকানদের লক্ষ্য করে একটি রেস্তোরাঁর কাছে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেখানে তাদের সঙ্গে মানবিজ সামরিক কাউন্সিল বাহিনীর কিছু ফোর্সও ছিল।’ যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলো ২০১৬ সালে আইএসকে হটিয়ে মানবিজের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে শহরটি এই সামরিক কাউন্সিলের কর্তৃত্বাধীনে আছে। এক বিবৃতিতে কাউন্সিল জানিয়েছে, নিহত বেসামরিকদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। বিবৃতিতে তারা ‘বীর আমেরিকান সৈন্যদের’ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। মানবিজের কাছেই রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকা ও তুরস্ক সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা রয়েছে।
অপর প্রত্যক্ষদর্শী বোমা হামলার পর মানবিজের আকাশে ‘বহু’ সামরিক আকাশযানের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। পেন্টাগনে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ লোক নিহত হয়েছেন। এ যুদ্ধের কারণে দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ যুদ্ধ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে টেনে আনলেও যুদ্ধের এ শেষ পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদই দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্র্রতিষ্ঠা করেছেন।
আগামী সপ্তাহে সিরিয়া নিয়ে এরদোগান-পুতিনের বৈঠক
এদিকে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ইয়েনি সাফাক জানায়, সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মস্কোতে বৈঠকে বসবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। বুধবার ক্রেমলিন থেকে ইউরি উসাকভ এ তথ্য জানান। এতে জানানো হয় কিভাবে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা উঠানো যায় এ ব্যাপারে বৈঠকে পরিকল্পনা করা হবে। বৈঠকটি রাশিয়ার মস্কোতে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। উসাকভ সাংবাদিকদের জানান, রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়া নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করার প্রস্তাব রাশিয়াও চায়।
এর আগে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার দুই নেতার মধ্যে কথা হয় জানিয়ে এক টুইটার পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, তাদের আলাপ ছিল দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আইএস ও সিরিয়ায় আমাদের যৌথ সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেছি। খুবই ধীরগতিতে এবং সর্বোচ্চ সমন্বয়ের সঙ্গে সেনাদের প্রত্যাহার করে নিয়ে আসা হবে। ‘আইএসের বিরুদ্ধে তাদের পর্যায়ক্রমে কাজে লাগানোর বহু বছর পর তারা বাড়ি ফিরছেন।’
দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক বিস্তারিত বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে। টুইটারে এরদোগান বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয়ে সমন্বয় বাড়াতে দুই নেতা একমত হয়েছি। বিশেষ করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন।
এরদোগানের সঙ্গে আলোচনার পর সিরিয়া থেকে দুই হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তার সিদ্ধান্তের পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ও আইএসকে হারাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ২০১৬ সাল থেকে সিরিয়ায় দুটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তুরস্ক।


আরো সংবাদ



premium cement