২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিরিয়ায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি নিয়ে এরদোগান-ট্রাম্প ফোনালাপ

-

সিরিয়ার কুর্দি যোদ্ধাদের বিষয়ে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। এ সময় তারা সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার পর দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলার ব্যাপারেও আলোচনা করেন। সিরিয়ার কুর্দিদের ওপর হামলা হলে তুরস্কের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়ার এক দিন পর গত সোমবার ট্রাম্পের সাথে এরদোগানের এ ফোনালাপ হয়।
গত মাসে হঠাৎ করেই ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে তুরস্ক সেখানে কুর্দিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়। সিরিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় মার্কিন সেনাদের সাথে সহযোগী হয়ে যুদ্ধ করেছিল এসব কুর্দি যোদ্ধা। তুরস্কের এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ন্যাটোর দুই সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক। এ অবস্থার উত্তরণে গত সোমবার দুই শীর্ষ নেতা ফোনে কথা বলেন।
এ ব্যাপারে এরদোগানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কুর্দিদের সাথে আঙ্কারার কোনো সমস্যা নেই, তবে যেসব সশস্ত্র গেরিলা তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে চায় তুরস্ক। এ সময় তারা সন্ত্রাসমুক্ত একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির ব্যাপারেও আলোচনা করেন। পরে ট্রাম্পও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেয়া একটি পোস্টে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এরদোগানের সাথে উত্তর সিরিয়ায় একটি নিরাপদ অঞ্চলের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি এটিকে বাফার জোন হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, যেসব গেরিলা মার্কিন সৈন্যদের সাথে মিলে সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং সিরিয়া থেকে তুরস্কের অভ্যন্তরে হামলা প্রতিরোধে কাজ করেছে, তাদেরকেই কেবল তুরস্কের নিরাপদ জোনে আশ্রয় দেয়া হবে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব সারাহ স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে জানান, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে তুরস্কের উদ্বেগ নিরসনে একসাথে কাজ করতে ইচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তবে সিরিয়ায় আইএসকে পরাজিত করতে যারা মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করেছে, তুরস্ক যেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান না চালায়।
এ ফোনালাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অনির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইয়াসিন আকতেই। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই সিরিয়ার বিষয়ে তারা বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। এ কারণেই তারা একেক সময় একেক ধরনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছেন।
গত মাসে আকস্মিকভাবেই সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। সিরিয়া থেকে আইএস নিশ্চিহ্ন হয়েছে ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত জানান। এতে মার্কিন জনগণ খুশি হলেও বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ও মিত্র দেশ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। অন্য দিকে ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ বেশ কিছু দেশ জানায়, আইএসকে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।
দ্বিতীয় বৈঠক বিষয়ে কিমকে ট্রাম্পের চিঠি
দ্বিতীয় বৈঠকের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেখা চিঠি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের কাছে পৌঁছেছে। কোরীয় উপদ্বীপ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে চলমান আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই সূত্র বলছে, দুই নেতার মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠকের সমঝোতার বিস্তারিত নিয়ে এই চিঠি। ওয়াশিংটন থেকে চিঠিটি হাতে হাতে পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ওই সূত্রের মতে, উত্তর কোরিয়ার সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার অন্যতম শীর্ষ আলোচক কিম ইয়ং চোল শিগগিরই ওয়াশিংটন সফর করবেন। সম্ভবত, এ সপ্তাহেই তা হতে যাচ্ছে। ট্রাম্প-কিম আসন্ন বৈঠকের বিস্তারিত বিষয় চূড়ান্ত করাই তার এই সফরের উদ্দেশ্য।
এর আগে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প-কিম দ্বিতীয় বৈঠকের স্থান হিসেবে ব্যাংকক, হ্যানয় ও হাওয়াইয়ের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
ট্রাম্প-কিম দ্বিতীয় বৈঠকের বিষয়ে গত সপ্তাহেই নিজের সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন। তিনি বলেন, সম্প্রতি এক চিঠিতে কিম শিগগিরই সিউল সফরের কথা তাকে জানিয়েছেন। তার ও ট্রাম্পের সাথে কিমের বৈঠক হবে কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি।
বিশ্বের সাথে দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে গত বছর ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে কমিউনিস্ট এই রাষ্ট্র। বেইজিং সফরের মধ্য দিয়ে আলোচনার পথে যাত্রা করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম। এরপর কিম ছয় দশকেরও বেশি সময়ের বৈরিতাকে পেছনে রেখে গত বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায় ঐতিহাসিক সফর করেন।
মুনের সাথে একাধিক বৈঠকের পাশাপাশি গত বছরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন। চলতি বছরেও কিমের এই উদ্যোগ অব্যাহত আছে। গত সপ্তাহেই আকস্মিক সফরে চীনে যান কিম। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি লেখার পর কিম এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে চিঠি পেলেন। এসব ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, এ বছরও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবেন কিম।


আরো সংবাদ



premium cement