২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন নীতিমালার ব্যাপারে ২০০ দেশের মধ্যে সমঝোতা

-

তিন বছর আগে প্যারিসে স্বাক্ষরিত জলবায়ু পরিবর্তন রোধ চুক্তি কি উপায়ে বাস্তবায়িত হবে তার নীতিমালা নিয়ে একমত হয়েছে বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ। পোল্যান্ডের কাতোভিসে সপ্তাহ দুই ধরে চলা ম্যারাথন আলোচনার পর শনিবার রাতে দেশগুলোর মন্ত্রীরা এ সমঝোতায় পৌঁছান।
রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে বিভিন্ন দেশের এ সমঝোতা প্যারিস চুক্তিতে প্রাণ সঞ্চার করেছে বলে অনেকে মন্তব্য করলেও সমালোচকেরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপদ ঠেকাতে নীতিমালাটি মোটেও যথেষ্ট নয়। এর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ প্রয়োজনীয় মাত্রায় কমানো সম্ভবপর হবে না বলেও আশঙ্কা তাদের।
২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত ওই জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের পর্যায়ের ওপরে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে বিশ্বনেতারা একমত হয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দেশকে চুক্তিটি থেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলে উষ্ণতা রোধে বিশ্বের উদ্যোগ সফলতা পাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে।
কার্বন নিঃসরণের হার, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশগুলো গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো ও নিঃসরণ পরিকল্পনার আধুনিকীকরণের প্রতিবেদন ও পর্যালোচনার পাশাপাশি জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দ নিয়ে অন্যান্য দেশের মধ্যেও তুমুল মতপার্থক্য দেখা যায়। কাতোভিস সম্মেলনেও এ মতপার্থক্যগুলো উঠে এলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ব প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা বা রুলবুকে পৌঁছাতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোও প্যারিস চুক্তিতে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর জলবায়ু তহবিলে যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল তা কিভাবে বিতরণ করা হবে সে বিষয়ে আরো সুস্পষ্ট নীতিমালা চেয়েছিল। তহবিলে অর্থের পরিমাণ এ দশকের শেষ থেকে কিভাবে বাড়বে তাও জানতে চেয়েছিলেন ওই দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।
কার্বন ক্রেডিট পর্যালোচনায় জবাবদিহিতার নীতি কেমন হবে তা নিয়ে ব্রাজিল ও অন্যান্য দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিধাবিভক্তিসহ বেশ কিছু বিষয়ের আলোচনা আগামী বছরের জন্য তুলে রাখার পর শনিবার রাতে কপ২৪ এই ১৫৬ পৃষ্ঠার নীতিমালায় একমত হয়। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে এবারের সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট মিচেল কুর্তিকা বলেন, চুক্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সহজ নয়। তবে এই প্যাকেজের (নীতিমালা) মাধ্যমে আপনারা কয়েক হাজার পদক্ষেপ এগিয়ে গেলেন। আপনারা গর্বিত হতে পারেন।
সমঝোতায় পৌঁছানোর সঙ্কেত দিয়ে এ পোলিশ একটি হাতুড়ির আঘাত করার পরপরই বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা মঞ্চে এসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। তাদের হাসিমুখে ছিল সপ্তাহ কয়েকের ম্যারাথন আলোচনার পর স্বস্তির চিহ্ন। প্যারিসে স্বাক্ষরিত জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের এ নীতিমালার সবকিছু নিয়ে সবাই যে সন্তুষ্ট নয় তাও মানছেন বেশ কয়েকটি দেশের মন্ত্রীরা। তারা বলছেন, এবারের সম্মেলনের ওপর ভিত্তি করেই চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
ইউনিয়ন অব কনসার্নড সাইয়েন্টিস্টের আল্ডেন মেয়ার বলেছেন, নীতিমালার অনেক কিছুই এখনো বিস্তারিত নয়। মূলত এটি প্যারিস চুক্তিকে শক্ত কিছুর ওপর দাঁড় করানোর একটি ভিত্তিপ্রস্তর। প্রেসিডেন্টদের নিয়ে ভবিষ্যৎ সম্মেলনে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে ফের চুক্তিতে ফেরাতেও সহায়ক হতে পারে।
অনেক দেশ ও পরিবেশবাদী সংগঠন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে কার্যকর নীতি প্রণয়নে এবারের সম্মেলন ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে। এর আগে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোকে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এখন থেকে আমার পাঁচটি অগ্রাধিকার হচ্ছে উচ্চাকাক্সা, উচ্চাকাক্সা, উচ্চাকাক্সা, উচ্চাকাক্সা ও উচ্চাকাক্সা।

 


আরো সংবাদ



premium cement