১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা মার্কিন প্রস্তাব ইতিবাচক আরো পদক্ষেপ দরকার

মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টায় রোহিঙ্গাদের একটি দল : ফাইল ছবি -

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশ ও বহুপক্ষীয় গোষ্ঠীগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এ অপরাধকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা নাম দিয়ে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা। একই সাথে সেখানে এসব অপরাধের জন্য সিনিয়র জেনারেল মিং অং হায়িংকে দায়ী বলে তারা ঘোষণা করে।
ব্যাপক পতনের পরও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে সামরিক, প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থনৈতিক, আদর্শিক দিক দিয়ে এখনো শীর্ষেই অবস্থান করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আইনপ্রণেতাদের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ ধরনের প্রস্তাব পাসের বিষয়টি মিয়ানমারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
তবে তারা যে মিয়ানমারের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছে, তাতে আসলে দেশটির সামরিক বাহিনীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ তারা বিশ্বাস করে জাতিসঙ্ঘ বা অন্যান্য সংস্থার এ ধরনের অভিযোগ আসলে পশ্চিমা বিশ্ব ও ওআইসির সহযোগিতায় প্রস্তুত করা একটি মুসলিম ষড়যন্ত্র।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ কয়েক মাস আগে নিউ ইয়র্কে এক টকশোতে খোলাখুলিভাবেই বলেছেন, এ ধরনের জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটানো দরকার। তবে এটি কিছু কারণে অসম্ভব। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কখনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। এমনকি তিনি কখনো ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করে কোনো টুইটও করেননি। এ ছাড়া চীন ও ভারতের মধ্যবর্তী স্থানে থাকা মিয়ানবার মার্কিন ড্রোন হামলার জন্য উপযুক্ত জায়গাও নয়। অন্য দিকে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হলেও সেটি খুব বেশি সফল হবে না। কারণ মিয়ানমারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ। এসব দেশ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মিয়ানমারের ওপর আরোপিত ওই অবরোধ সফল হতে দেবে না।
চীন তো সেখানে বিশাল বিনিয়োগ করে বসে আছে, রাশিয়ার সাথে তাদের সামরিক সম্পর্ক-চুক্তি চলে সরাসরি, ব্রিটেনের সেখানে ৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এবং এক বছরে ৫০ কোটি ডলারের বাণিজ্য। এটি আবার বছরে ২০ শতাংশ করে বাড়ছে। ফলে তারাও সম্ভাবনাময় এ ক্ষেত্রটিকে নষ্ট হতে দেবে না। এর পরও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধে যে একেবারে কোনোই প্রভাব পড়বে না, তা নয়।
প্রতিনিধি পরিষদের জোর পদক্ষেপের কারণে ট্রাম্প প্রশাসন যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় যে, মিয়ানমারে যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ কেবল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেই হয়নি; বরং এ ধরনের অপরাধ অন্যান্য নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় যেমন কাচিন, শান, তাঙ্গদের বিরুদ্ধেও সংঘটিত হয়েছে, তাহলে এর গুরুত্ব হ্রাস পেয়ে যাবে। মূলত বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, নাৎসি, বসনিয়া বা রুয়ান্ডা গণহত্যা কোনোটিই একক কোনো রাষ্ট্র করেনি। বরং তাদের সাথে ছিল সহযোগী রাষ্ট্র। মিয়ানমারের গণহত্যা বন্ধ করতে হলে এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হবে, যেসব দেশ মিয়ানমারের দোষ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তাদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে হবে।
এ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭টি দেশ মিয়ানমারকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদিও এ কাউন্সিলের সদস্য নয়, তার পরও তাদের কংগ্রেসের ভোটের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, এ ধরনের সম্মেলন আয়োজনে তারাই সবচেয়ে উপযুক্ত। মূলত মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃত্ব ও বেসামরিক সরকার উভয় পর্যায়ে চাপ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের একটি জোট তৈরি করা উচিত। কারণ উপযুক্ত চাপ সৃষ্টি ছাড়া মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার বা সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের পরিপূর্ণ এবং সমান অধিকারের যোগ্য নাগরিক বলে স্বীকার করবে না। এমনকি তাদের জীবিত অবস্থায় বেঁচে থাকার কোনো নিশ্চয়তাও দেবে না।
এ ক্ষেত্রে কেবল সুশীলসমাজ ও মানবাধিকার আন্দোলনের সমর্থিত রাষ্ট্রগুলোর একটি জোট তৈরি করে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে পিতৃভূমিতে রোহিঙ্গাদের অবস্থান এবং শান্তিতে বসবাসের বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কিমিচের একমাত্র গোলে আর্সেনালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন বিরোধী দলকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করছে সরকার : ড. মঈন খান মোস্তাফিজের বিকল্প ভাবছে চেন্নাই, দলে ভিড়িয়েছে এক ইংলিশ পেসার বিদেশ যাওয়া হলো না আশরাফুলের, বাসচাপায় মামাসহ নিহত ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য : সেনাপ্রধান ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ১ হাজার টাকার জন্য পেশাদার ছিনতাইকারীরা খুন করে ভ্যানচালক হারুনকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় : মতিউর রহমান আকন্দ টানা ১১ জয়ে ডিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ করলো আবাহনী দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু

সকল