২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি

গতকাল পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য দিল্লিতে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বিজেপি নেতারা :এএফপি -

ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)। অন্তত তিনটি রাজ্যে তারা কংগ্রেসের কাছে ক্ষমতা হারাচ্ছে। এর মধ্যে তারা রাজস্থান ও ছত্তিসগড়ে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে, এগিয়ে আছে মধ্যপ্রদেশে। তেলেঙ্গানার নির্বাচনে অবশ্য এ দুই দলই চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির কাছে কোনো পাত্তা পায়নি।
বাকি চার রাজ্যের তুলনায় মিজোরামের চিত্র অবশ্য একেবারেই ভিন্ন। কেন্দ্রে বিজেপির মিত্র মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) এখানে কংগ্রেসকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে গুরুত্বপূর্ণ এ রাজ্যগুলোতে এমন বাজে ফল বিজেপির জন্য অশনি সঙ্কেত । অন্য দিকে এ জয় কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে শক্ত করবে। বিজেপিবিরোধী জোটের পালেও হাওয়া লাগবে। মঙ্গলবার দিনের শুরু থেকেই বিধানসভায় বিজেপির ভরাডুবির চিত্র স্পষ্ট হতে থাকে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশের ২৩০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১১৬টি আসনে এগিয়ে ছিল। বিজেপি এগিয়ে ছিল ১০৪টিতে। এখানে বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি) এগিয়ে আছে ৪টিতে। রাজস্থান আর ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস একচেটিয়াভাবে এগিয়ে রয়েছে। বিজেপিশাসিত এ দুই রাজ্যে কারা নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছে তা নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা। রাজস্থানের ১৯৯টি আসনের মধ্যে ১০৩টিতে কংগ্রেস এগিয়ে আছে, বিজেপি এগিয়ে মাত্র ৬৯টিতে। অন্য দিকে ছত্তিসগড়ের ৯০টির মধ্যে কংগ্রেস এগিয়ে ৬৬টিতে, বিজেপি মাত্র ১৪টিতে। এ রাজ্যে ভালো করেছে বিএসপিও, তারা এগিয়ে আছে ৯টিতে। তেলেঙ্গানায় টিআরএস এগিয়ে আছে ৮৬টিতে। ১১৯টির মধ্যে কংগ্রেস জিততে পারে ২২টিতে। মিজোরামে কংগ্রেসকে হটিয়ে ৪০টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে এগিয়ে আছে এমএনফ।
এবারের নির্বাচনে তরুণদের পাশাপাশি কৃষক-শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটও কংগ্রেসের বাক্সে গেছে। ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানার ভোট একচেটিয়া পেয়েছিল বিজেপি। মধ্যপ্রদেশের গমচাষি বিষ্ণু প্রসাদ জলধিয়া বলেন, ‘আমরা এবার সবাই কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছি, আমাদের প্রার্থী জিততে যাচ্ছে।’ কৃষকদের ‘হতাশ করার কারণেই’ বিজেপির এ ভরাডুবি বলেও অভিমত তার। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এ মধ্যবয়সী বলেন, ‘বিজেপি আমাদের অবজ্ঞা করেছে। তারা পিরামিডের নিচের দিকে থাকা আমাদের মতো মানুষকে অবজ্ঞা করেছে।’
পাঁচ রাজ্যের এ ফল কেন্দ্রে বিরোধীদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। আগামী বছরের মার্চের লোকসভা নির্বাচনে মোদিকে হারাতে তাদের জোটও শক্তিশালী হবে। কংগ্রেস বলেছে, তারা আগামী নির্বাচনে রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাও প্রস্তাব করতে পারে। যে কারণে অন্য দলের হেভিওয়েট কাউকে মোদির বিরুদ্ধে জোটের নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে বলেও ধারণা অনেকের। বিজেপিবিরোধী এ জোট দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব। বিরোধী জোটের সম্ভাবনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যখন এক আর একে এগারো হয়, তখন সর্বশক্তিমানকেও ক্ষমতা ছাড়তে হয়।’
বিজেপি সেমিফাইনালে হেরেছে, ফাইনালেও হারবে : মমতা
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, সেমিফাইনালে বিজেপির পরাজয় ২০১৯ সালের ফাইনালে কী হবে তারই ইঙ্গিত। বিজেপি দেশের কোথাও নেই। মঙ্গলবার টুইটারে এ মন্তব্য করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ফলাফলের ট্রেন্ডই বলে দিচ্ছে সেমিফাইনালে বিজেপি কোথাও নেই। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফাইনালে কী হবে তার ইঙ্গিত এটি। এটাই গণতন্ত্রের জয়। মানুষই ম্যান অব দ্য ম্যাচ গণতন্ত্রে। দেশবাসীর জয়। তিন রাজ্যের সম্ভাব্য জয়ীদের আমার শুভেচ্ছা।’ মঙ্গলবার করা আরেক টুইটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের বিজয়। এ বিজয় অবিচার, নৃশংসতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহারেরই জবাব। এ বিজয় বেকারত্বের বিরুদ্ধে গরিব, তরুণ, কৃষক, দলিত ও সংখ্যালঘুদের রায়।’
রামমন্দির নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণেই পরাজয় : বিজেপি এমপি
বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ ও নাম পরিবর্তন নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির এমপি সঞ্জয় কাকাদে। বিজেপির নির্বাচন নীতি ও নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেন তিনি। ভারতীয় রাজ্য সভার সদস্য সঞ্জয় কাদাদে মনে করছেন রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিজেপির পরাজয়ের বিষয়টি আগেই বোঝা অনুমান করা গেছে। তবে মধ্যপ্রদেশে হতাশাজনক ফলাফল আশা করেনি কেউ। ফলাফল প্রকাশের দিন অবাক হয়েছে সবাই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমরা ভুলে গেছি। ভাস্কর্য, নাম পরিবর্তন ও রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে মাতামাতির নিয়ে চাপা পড়ে গেছে উন্নয়ন।’

 


আরো সংবাদ



premium cement