২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ব্রিটেন’

-

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চলছে তার অবসানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে ব্রিটেন। গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টারি কমিটির শুনানিতে এ কথা বলা হয়। জাস্টিস ফর রোহিঙ্গা মাইনরিটি গ্রুপ বা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার শীর্ষক একটি ইভেন্টে এ বার্তা দেয়া হয়। রক্ষণশীল দলের ক্যাথরিন ওয়েস্ট, লেবার পার্টি রুশনারা আলি ও হেলেন গুডম্যান এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মুখপাত্র ব্যারোনেস শিহানসহ বিভিন্ন দলের এমপিদের সমন্বিত একটি প্যানেল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সাবেক বিচারক বেন এমারসন কিউসি ও উদ্বাস্তু শিবিরে জন্ম নেয়া এবং গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া সিরাজুল ইসলাম।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি একটি উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছি। সেটি ছিল এমন একটি ভূমিতে, যেটিকে আমি কখনোই আমার নিজের বলে ডাকতে পারিনি। যেসব মৌলিক সুবিধার মধ্য দিয়ে আপনারা বড় হয়ে উঠেছেন, আমি সেগুলো ছাড়াই বড় হয়ে উঠেছি। শিশুরা সাধারণত মজা করতে চায়, তাদের বন্ধুদের সাথে খেলতে চায়, স্কুল উপভোগ করতে চায়, কিন্তু আমার জন্য বেঁচে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বিষয়। কারণ আমাদের শিবিরে ওই সব বিষয় ছিলই না।
আমি যে ক্যাম্পটিতে থাকতাম, সেটি বাংলাদেশ সরকারের নথিভুক্ত না থাকায় সেখানে বিশুদ্ধ পানি, আরামদায়ক শয়নকক্ষ বা বাথরুমের মতো সাধারণ সুবিধাগুলো ছিল না। উদ্বাস্তু শিবিরে জীবন খুবই কঠিন, কিন্তু তার চেয়েও কঠিন বিষয় আমার ওই বিষয়টি জানা যে, আমার পরিবার যেখানে জন্মেছে, দীর্ঘদিন বাস করেছে সেখানে আমরা কখনোই ফিরতে পারব না। সিরাজুল ইসলামের এ বর্ণনার পর ওই কক্ষে নিস্তব্ধতা নেমে আসে এবং এ বিষয়টিই পরিষ্কার করে দেয়, যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বাস করে তারাও মানবেতর জীবন যাপন করে।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ওয়েস্ট বলেন, সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, গণহত্যা এখনো চলছে। আর একটি নৈতিকতা ও মানবিকতাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই করা। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি, মানবাধিকার বিষয়ে নেতৃত্বদানকারী, জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে ব্রিটেনের উচিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গার বিষয়টিকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। ওয়েস্ট বলেন, যুক্তরাজ্য এভাবে রোহিঙ্গাদের সাহায্য সরবরাহ ও গণহত্যা বন্ধের সমাধান খোঁজার চেষ্টায়ও এগিয়ে এসেছে।
ওই অনুষ্ঠানে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কী ভূমিকা হতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ও এ গণহত্যায় দায়ীদের জন্য আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) কী করতে পারে এ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
তবে এমারসন বলেন, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা আরেক রাষ্ট্র চীনের সাথে মিয়ানমার সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় সেখানে দেশটির বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব পাস কঠিন হয়ে পড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনা যেকোনো প্রস্তাবে চীন ভেটো দেবে। ফলে সেখানে বিষয়টি নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে ব্রিটেন সরকার যে কাজটি করতে পারে তা হলো, লন্ডন মিয়ানমার সরকারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যেন মিয়ানমারকে বয়কট করে এবং তাদের সাথে ব্যবসায় না করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে সে ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারে।
অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনালের দেয়া তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস হামলা শুরু হওয়ার পর সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত জনগোষ্ঠী বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, মিয়ানমারের সরকারি সেনারা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণধর্ষণ, হত্যা, নৃশংস প্রহার, গুমসহ নানা ধরনের অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ তদন্তদল মন্তব্য করেছে, এ ধরনের সহিংসতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যা দেয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement