২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশেষজ্ঞের অভিমত দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি অপরিসীম

অবরুদ্ধ জেরুসালেমের একটি দৃশ্য : ইন্টারনেট -

এক বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং এর কিছু দিন পর ঘোষণা দেন, ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে থাকা তার দেশের দূতাবাসকে জেরুসালেমে স্থানান্তর করা হবে। তার এ দু’টি ঘোষণা পুরো বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
মার্কিন ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ব্যাপক ভোটে একটি প্রস্তাব পাস হয়, যাতে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে জেরুসালেমে দূতাবাস স্থাপন না করতে আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবের মূল বিষয় ছিল পরিষদ সাম্প্রতিককালে জেরুসালেম বিষয়ক (যুক্তরাষ্ট্রের) বিভিন্ন সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করেছে, ১৯৮০ সালে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব ৪৭৮-এর প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বলেছে কোনো দেশ যেন পবিত্র জেরুসালেম শহরে তাদের দূতাবাস স্থাপন না করে।
প্রস্তাবে বলা হয়, কোনো সিদ্ধান্ত বা কাজ, যা জেরুসালেমের বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা (স্ট্যাটাস) বা এর জনসংখ্যাগত গঠন বদলে দেয়ার ধারণা দেয়, তার কোনো কার্যকারিতা নেই এবং তা বাতিল বলে বিবেচিত হবে। প্রস্তাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে দাবি করা হয়েছে, তারা যেন জেরুসালেম বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের অতীতের নেয়া প্রস্তাবগুলো মেনে চলে এবং এমন কিছু না করে, যা ওই সব প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যায়। প্রস্তাবের এই ভাষ্য নিরাপত্তা পরিষদে আলোচিত এবং ১৪ দেশের সমর্থিত।
অবশ্য জাতিসঙ্ঘের এ প্রস্তাব পাসেও মার্কিন একগুঁয়ে সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এ সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখালেও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্যারাগুয়ে তাদের দূতাবাসও তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে আনে। তবে মোটের ওপর বিশ্বের এ প্রতিক্রিয়াকে ‘শ্রদ্ধাপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী নূরা এরাকাত। আনাদোলা এজেন্সিকে তিনি বলেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে সীমিত করে আনবে।
দূতাবাস সরিয়ে আনার মার্কিন সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হয় এ বছরের মে মাসে। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ দীর্ঘ দিন ধরে চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াটিকে ধ্বংস করে দেয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘ দিনের অবস্থান ভেঙে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের ভূমিকাকে প্রত্যাখ্যান করে। ফিলিস্তিনের বিরোধিতার কারণে ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা ও বিশেষ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের প্রস্তাবিত দীর্ঘ প্রতিশ্রুত শান্তি পরিকল্পনাটির ভবিষ্যৎ পাল্টে যায়।
মার্কিন প্রশাসন যে শুধু জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছে বা সেখানে তাদের দূতাবাস সরিয়ে এনেছে তা-ই নয়, বরং পুরো বছর ধরেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল বিভিন্ন সংস্থায় তাদের সহায়তার পরিমাণ হ্রাস করেছে অথবা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি কুশনার যে শান্তি পরিকল্পনার কথা বলছেন, তা অনুসরণ করলে এতকাল ধরে যে স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল ফিলিস্তিনিরা তার মৃত্যু ঘটবে। পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের সাবেক উপদেষ্টা মার্ক পেরি বলেন, ওই শান্তি পরিকল্পনা এলে ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি আত্মসমর্পণের দলিল’। তবে শান্তি পরিকল্পনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরব রাষ্ট্রগুলো। জ্যারেড কুশনার আরব দেশগুলোর সমর্থন লাভের জন্য বিভিন্ন দেশে সফর করলেও তাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি। আর তাদের সমর্থন ছাড়া কোনোভাবেই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণার দ্বারা যেমনভাবে মনে করা হয়েছিল যে, আরো অনেক দেশ তাদের মতো জেরুসালেমকে স্বীকৃতি দেবে এবং দূতাবাস সরিয়ে আনবে, তেমনটি হয়নি। বরং ট্রাম্পের ঘোষিত ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চুক্তি’ বাস্তবায়নের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
পেরি বলেন, সব মিলিয়ে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তেমন কোনো লাভবান হয়নি। বরং তাদের এ পদক্ষেপের দ্বারা অন্যরা আহত অনুভব করেছে, যার ফলে তারা মার্কিনিদের সাথে আর আলোচনায় বসতে চায় না। ফলে বলাই যায়, মার্কিনিদের এ যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে তাদের লাভ সামান্যই হয়েছে, বরং বন্ধ হয়ে গেছে শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ, ক্ষতি হয়েছে অপরিসীম।
সূত্র : আনাদোলু


আরো সংবাদ



premium cement