২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কম্বোডিয়ায় গণহত্যার দায়ে দুই খেমার রুজ নেতার আমরণ জেল

খিউ সাম্ফান ; নুওন চে -

গণহত্যার দায়ে কম্বোডিয়ার দুই খেমার রুজ নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত এক ট্রাইব্যুনালে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আগে থেকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন তারা। এবার গণহত্যার দায়ে নতুন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।
গতকাল শুক্রবার এ রায় ঘোষণা করা হয়। দোষী সাব্যস্ত দু’জন হলেন দেশটির মাওবাদী সাবেক শাসক পল পটের ডেপুটি নুওন চে (৯২) ও তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সাম্ফান (৮৭)। এর আগে ২০১৪ সালে একই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে খেমার রুজের এই দুই শীর্ষ নেতাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার দ্য এক্সট্রা অর্ডিনারি চেম্বারস ইন দ্য কোর্টস অব কম্বোডিয়া (ইসিসিসি) জানায়, খেমার রুজ ‘ব্রাদার নম্বর টু’ নুওন চে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট খিউ সাম্ফানকে চ্যাম মুসলমান এবং ভিয়েতনামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা চালানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। এই রায় খেমার রুজ শাসকদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগের প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
এই ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন খেমার রুজ নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যজন হলেন, কমরেড ডাচ। পল পটের ডেপুটি নুওন চে কম্বোডিয়ার মানুষের কাছে ‘ব্রাদার টু’ নামে পরিচিত ছিলেন। ‘ব্রাদার ওয়ান’ পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীকে হটিয়ে খেমার রুজ গেরিলারা তৎকালীন কম্পুচিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করে নেয়। নমপেন দখল করে পল পট সরকার মূলত কৃষি সংস্কারের নামে ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালায়। পল পট ১৯৯৮ সালে কম্বোডিয়ার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান। খেমার রুজের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল কমিউনিস্ট পার্টি অব কম্পুচিয়া (সিপিকে)। ২০১১ সালে কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খেমার রুজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খেমার রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় ১৭ লাখ মানুষ নির্যাতন ও অনাহারে মারা যায় বা তাদের গণহত্যা করা হয়, যা দেশটির ওই সময়ের মোট জনসংখ্যার এক-চর্তুথাংশ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিদের বিরুদ্ধে যে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল খেমার রুজদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়াকে তার চেয়ে জটিল বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। নুওন চে এ বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ বিচার দেখার জন্য খেমার রুজ শাসকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
খেমার রুজের শাসনামলে শহরগুলো খালি করে ফেলা হয়েছিল। কৃষিনির্ভর সমাজ বিনির্মাণে খেমার রুজের লক্ষ্য বাস্তবায়নে শহরের বাসিন্দাদের গ্রামে সমবায়ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত করা হয়। তখন অনেকেই কাজ করতে গিয়ে মারা যান। চার বছরের ভয়াবহ শাসনের সময় সম্ভাব্য শত্রু অনুমানে বুদ্ধিজীবী, সংখ্যালঘু, সাবেক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। নুওন চে খেমার রুজ সরকারের আদর্শিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। আর খিউ সাম্ফানকে সামনে রেখেই এসব কিছু বাস্তবায়ন করা হতো। নুওন চে ও খিউ সাম্ফানের সাথে সাবেক দুই খেমার রুজ সরকারের মন্ত্রীরও বিচার শুরু হয়েছিল।
২০১৩ সালের মার্চে সাবেক খেমার রুজ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেঙ স্যারি মারা যান। আর তার স্ত্রী সাবেক সমাজমন্ত্রী লেঙ তিরিতকে বয়সজনিত কারণে বিচারের অযোগ্য ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। এর আগে খেমার রুজ নেতা ডাচের আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাকে আজীবন কারাবাসের দণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রথমে তাকে ৩৫ বছর কারাবাসের দণ্ড দেয়া হয়েছিল। কমরেড ডাচ নামে পরিচিত কায়েং গুয়েক এভ-এর বিরুদ্ধে একটি জেলখানার কয়েক হাজার বন্দীকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত মাওবাদী দল খেমার রুজ কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় থাকাকালে তুওল স্লেঙ্গ কারাগারের প্রধান ছিলেন রুজ প্রধান পল পট। ওই কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বন্দী ১৫ হাজার পুরুষ, নারী ও শিশুকে নির্মম অত্যাচারের পর রাজধানী নমপেনের বাইরে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় তিনি জেলখানার একজন নি¤œপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং ঊর্ধ্বতনদের আদেশ পালনে বাধ্য হয়েছিলেন, এই আর্জি জানিয়ে তিনি ২০১১ সালের মার্চে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ৬৯ বছর বয়স্ক কমরেড ডাচের আবেদন খারিজ করে উল্টো দণ্ড বাড়িয়ে দেয়। তার কারাবাসের মেয়াদ ৩৫ বছর থেকে বাড়িয়ে আমৃত্যু কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement