২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ীদের বিচারের আহ্বান আসিয়ানের

-

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংসতার জন্য দায়ীদের ‘সম্পূর্ণভাবে বিচারের’ আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনের চেয়ারম্যানের বিবৃতির খসড়া প্রস্তুত করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান। ওই খসড়ায় রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতিকে উদ্বেগের বিষয় হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে।
১০ সদস্যের আসিয়ান জোটের সম্মেলনে সমাপনী বক্তব্য রাখবেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। এতে রাখাইনের ‘বিষয়টি উদ্বেগের’ বলে উল্লেখ করা হলেও শেষ মুহূর্তে বিবৃতিতে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে খসড়াটি চূড়ান্ত করার কথা। খসড়া বিবৃতির ব্যাপারে সিঙ্গাপুরের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র হতেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
খসড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে এবং যারা দায়ী তাদের সম্পূর্ণভাবে বিচার করতে আমরা মিয়ানমার সরকারকে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করতে তাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। প্রাণে বাঁচতে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এর জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে। ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে একেবারেই নীরব ভূমিকা নিয়েছেন। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানে গণহত্যা ও গণধর্ষণের বিস্তারিত জানিয়ে আগস্টেই রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘের একটি প্যানেল।
জাতিসঙ্ঘের ওই রিপোর্টে ২০১৭ সালের অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ইন চিফ ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক আইনে বিচারের মুখোমুখি করারও আহ্বান জানানো হয়েছিল। রিপোর্টটির বেশির ভাগ অভিযোগই অস্বীকার করেছিল মিয়ানমার। সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থতার দরুণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা না বলে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করার অভিযোগে মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি সু চিকে দেয়া তাদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আসিয়ান চেয়ারম্যানের বিবৃতির খসড়ায় লেখা হয়েছে, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য মিয়ানমার সরকারকে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠন ও দায়ীদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হচ্ছে’।
১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা সঙ্কটকে জোটটির মোকাবেলা করা সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চলতি বছরের জুলাইতে মিয়ানমার রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে। স্থানীয় দুই প্রতিনিধি ছাড়াও তাতে ফিলিপাইন ও জাপানের দুই সদস্যও রয়েছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এর আগের অবস্থানে আসিয়ান বাস্তুচ্যুতদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে আনা, মানবিক ত্রাণ সাহায্য এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছিল। রাখাইন প্রসঙ্গে জোটের অন্য দেশগুলোও খসড়ার অবস্থানের সাথে একমত কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আসিয়ানের তিন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেইয়ের অবস্থানও রাখাইন সঙ্কটে জোটের কড়া অবস্থানের পক্ষে। অন্য দিকে মিয়ানমারের সাথে রয়েছে আঞ্চলিক তিনমিত্র কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম; সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক শাসনাধীনে যাওয়া থাইল্যান্ডের অবস্থানও এ দিকে।


আরো সংবাদ



premium cement