২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কায় পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আহ্বান রাজনৈতিক দলগুলোর রাজাপাকশেসহ ৪৪ এমপির দলবদল

-

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণার বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। তারা আদালতের প্রতি পার্লামেন্ট পুনর্বহালের অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া দেশটির প্রধান তিন দল প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে সিরিসেনার ২৬ অক্টোবরের বরখাস্তের নির্দেশ অবৈধ ঘোষণা করতে সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন ‘শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি’র (এসএলএফপি) সাথে দীর্ঘ পাঁচ দশকের সম্পর্কচ্ছেদ করে শ্রীলঙ্কা পিপলস পার্টিতে (এসএলপিপি) যোগ দিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকশে। তার সাথে ৪৪ জন সাবেক এমপিও সিরিসেনার দল ছেড়ে এ দলে যোগ দেন।
পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের অংশীদার তিনটি দল সর্বোচ্চ আদালতকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করাকে অবৈধ ঘোষণার আবেদন করেছে। গত ২৬ অক্টোবর সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজাপাকশে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে সাংবিধানিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে দেশটি। আগামী ৫ জানুয়ারি দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে রোববার বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) প্রেসিডেন্টের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলে জানিয়েছিল। বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিপরিষদের অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আদালতে লড়াই করব, পার্লামেন্টে লড়াই করব এবং নির্বাচনে লড়াই করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৫ সালে সিরিসেনাকে আমরা সমর্থন দিয়েছিলাম এই আশায় যে তিনি এ দেশের নেলসন ম্যান্ডেলা হবেন, কিন্তু তিনি নিজেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি ম্যান্ডেলা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুগাবে (জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে) হয়েছেন।’
শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী অনুসারে, পার্লামেন্টে ভোটাভুটি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করতে পারবেন না। আর পার্লামেন্টে ভোট হলে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো যাবে না। কারণ, সিরিসেনার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) ও রাজাপাকশের দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির মিলিত আসনের সংখ্যা ৯৫ এবং বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির আসন সংখ্যা ১০৬। সমর্থন বেশি থাকায় ভোটাভুটিতে বিক্রমাসিংহের পক্ষে ভোট বেশি পড়বে। এর আগে ২০১৫ সালে দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা রাজাপাকশেকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সিরিসেনা। ওই সময় সিরিসেনার জোটে ছিলেন বিক্রমাসিংহে। তবে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহে জোটের মধ্যে নানা সময়েই মতবিরোধ দেখা দেয়। সবশেষ ভারতকে একটি বন্দর লিজ দেয়ার ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে এই দুইজনের মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দেয়। সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কলম্বোয় বিদেশী দূতাবাসগুলো সিরিসেনার এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন ‘শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি’র (এসএলএফপি) সাথে দীর্ঘ পাঁচ দশকের সম্পর্কচ্ছেদ করে শ্রীলঙ্কা পিপলস পার্টিতে (এসএলপিপি) যোগ দিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকশে। এর মধ্য দিয়ে রাজাপাকশে নির্বাচনে সিরিসেনার দলের ব্যানারে নয় বরং নিজের নতুন দলের ব্যানারেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার ইঙ্গিত দিলেন। রোববার সকালে রাজাপাকশে এসএলপিপি’তে যোগদানের ঘোষণা দেন। তার সাথে ৪৪ জন সাবেক এমপিও সিরিসেনার দল ছেড়ে এ দলে যোগ দেন। দলটি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার করেছিলেন রাজাপাকশের ছোট ভাই বসিল। দলটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার দল এসএলএফপির সাবেক ৮২ এমপির মধ্যে শেষ পর্যন্ত ৬৫ জন পক্ষ ত্যাগ করে এসএলপিপিতে যোগ দিতে পারেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement