১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উইঘুর মুসলমানদের প্রতি রাষ্ট্রের নির্যাতন ক্ষমার অযোগ্য : আনোয়ার ইব্রাহিম

-

মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক আইকন আনোয়ার ইব্রাহিম বেইজিংকে উইঘুর মুসলিম সমাজের অধিকারের কথা বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষত উইঘুর মুসলিমদের ধর্মীয় ও আন্দোলন করার স্বাধীনতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সঙ্ঘাত, হতে পারে সেটা রাষ্ট্র কর্তৃক বা সমাজ কর্তৃক তা ক্ষমার অযোগ্য। নিক্কিই এশিয়ান রিভিউকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। তার পরেও দেশটির ব্যবসায়িক মিত্ররা একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান যে, তিনি (আনোয়ার ইব্রাহিম) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের নেয়া প্রকল্পগুলো সামনে এগিয়ে নিতে চান কি না? সামনের সপ্তাহে আসন্ন চীন সফর নিয়ে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, তিনি চীনা কর্মকর্তাদের সাথে মালয়েশিয়ার আইনের শাসন এবং ভবিষ্যৎ চীন-মালয়েশিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমার থেকে জানতে চান যে, মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ ঠিক কী রকমের হতে পারে।’
চীন-মালয়েশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে বেইজিং, বিশেষত মাহাথিরের চীনমুখী নীতি এবং সাম্প্রতিক মালয়েশিয়ায় চীনা পৃষ্ঠপোষকতায় হতে যাওয়া কিছু বড় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চীন চিন্তিত। তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া বিভাগের পরিচালক জেমস সিন বলেন, ‘বেইজিং আসলে নিশ্চিত হতে চায় যে, আনোয়ার কি ড. মাহাথিরের পরিকল্পনা ভিন্ন অন্য কোনো পরিকল্পনা নিতে চান কি না।’ মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনবিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক নেগেউ চোউ বিং বলেন, ‘দৃশ্যমান পরিবর্তনের চেয়েও চীন এবং মালয়েশিয়ার পরিকল্পনা একসাথে চলমান থাকবে’। তিনি বলেন, ‘এখানে একধরনের মত রয়েছে যে, আনোয়ার অতিমাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে চীনের সাথে ভিন্নতর আচরণ করবেন।’ জেমস সিন বলেন, ‘মালয়েশিয়া সবসময় উইঘুর মুসলিমদের প্রতি সহায়তার নীতি নিয়ে চলে এবং তারা চায় বেইজিং চীনের মুসলিমদের অধিকার সম্পর্কে আরো আগ্রহী হোক।’
উল্লেখ্য, চীন মালয়েশিয়ার ব্যবসায়িক দিকগুলোর বেশির ভাগই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির কোনোভাবেই চান না যে, মালয়েশিয়া রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খদ্দেরে পরিণত হোক। এ বিষয়টি সম্প্রতি মালয়েশিয়ার একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নোরাজমান আইয়ুবের একটি বিবৃতি থেকে আরো পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘মালয়েশিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বড় দুটো শক্তির সাথে সঙ্ঘাতে জড়াতে চাইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের এক পক্ষ মালয়েশিয়ার সরকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইবে।’
চীনা ভাষাকে এ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘অর্থনৈতিক ভাষা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে আনোয়ার ইব্রাহিম তার দেশের শিক্ষার্থীদের প্রতি চীনা ভাষা শিক্ষা নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পিকেআরের ডি ফ্যাক্টো এই নেতা মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়ার ৪৭তম সাধারণ সভায় বলেন, ‘অন্যান্য ভাষায় দক্ষতা অর্জন করাও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কিন্তু চীনা আর ইংরেজি ভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। তিনি বলেন, ‘মালয় ভাষা মালয়েশিয়ার জাতীয় ভাষা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করেই চীনা ভাষাকে আঞ্চলিক অর্থনীতির জন্য কৌশলগত একটি ভাষা হিসেবে নিতে হবে’।
মুসলিম ইয়থ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধান আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, মানবাধিকারের উন্নতির মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন করা প্রয়োজন এবং একই সাথে ইসলামিক বিষয়গুলোকে সবার সামনে তুলে ধরা উচিত। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ইসলামিক জ্ঞান অর্জন, ইসলামি বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ‘আমাদের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি শুধু একটি ভালো ব্যবস্থাপনা যুক্ত এবং দুর্নীতি মুক্তই হবে না বরং একই সাথে এটি মানবাধিকার মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে রচিত হওয়া উচিত। ‘কারণ কিছু কিছু সময় সংখ্যার দিক থেকে উন্নয়ন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া বোঝালেও তা মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ভিন্ন মোড়কের আবরণে ঢেকে দেয়। আনোয়ার ইব্রাহিম এমনটি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন মালয়েশিয়া গড়ার প্রত্যয়ের সাথে মুসলিম ইয়থ মুভমেন্ট অফ মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্য এক হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement