২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীন কি বিপদে?

বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দার পর চীনে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দার পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ধীরগতির প্রবৃদ্ধি দেখল চীন। ত্রৈমাসিক হিসেবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৫ শতাংশ। এবারের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, প্রত্যাশিত ফল থেকে কিছুটা কম হয়েছে প্রবৃদ্ধি।

বিগত মাসগুলোতে নিজেদের অর্থনৈতিক কৌশল পাল্টেছে চীনের নীতিনির্ধারকেরা। বিশাল ঋণ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে চীনের অর্থনীতি। সামনের মাসগুলোতে এর প্রভাব আরো স্পষ্ট হবে। ২০০৯ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রবৃদ্ধির পর এবারেরটা সবচেয়ে কম। এর আগের অংশে এটি ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য বছরের শেষে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ রাখা। পর্যবেকেরা জানান, এই সময়ে বাণিজ্যযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় বেইজিং। এতে করে তাদের অর্থনীতি তিগ্রস্ত হতে পারে। তবে তাদের আর কিছু করারও নেই। তাদের প্রচুর ঋণ রয়েছে। ২০০৮ সালের পর তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নীতিনির্ধারকেরা যে পদপে নিয়েছিলেন, এখন তেমনটা করতে চাইছেন না। ফলে চীনকে দুই দিক দিয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের সাথে সম্মুখ লড়াই ছাড়াও অভ্যন্তরীণ একটি লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। আর এসব কিছুই দেশটির অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুর্নীতির অভিযোগে চীনের সাবেক উপঅর্থমন্ত্রী গ্রেফতার
দুর্নীতির অভিযোগে চীনের সাবেক উপঅর্থমন্ত্রী ঝ্যাং শোচুয়ানকে গ্রেফতার করেছে দেশটির দুর্নীতি দমন কর্তৃপ। ইন্টারপোলের প্রধান মেং হোংউইর গ্রেফতার করার কয়েক সপ্তাহ পর বেইজিং সাবেক এ শীর্ষ কর্মকর্তাকে আটক করার কথা জানাল।

‘শৃঙ্খলা ও আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তদন্তের মধ্যে দুর্নীতি দমন কর্তৃপ সন্দেহভাজন হিসেবে শোচুয়ানকে গ্রেফতার করে বলে চীনের শীর্ষ কৌঁসুলি জানিয়েছেন। শি জিনপিং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) প্রধান হওয়ার পর থেকে দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত দেশটির অসংখ্য কর্মকর্তাকে আটক ও সাজা দিয়েছে চীন সরকার। সাধারণত চূড়ান্ত অভিযোগ উত্থাপনের আগ পর্যন্ত দেশটির কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখেন। এর আগে চলতি মাসের প্রথম দিকে সিপিসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও ইন্টারপোল প্রধান মেং হোংউইকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেছিল বেইজিং। ২৫ সেপ্টেম্বর লিঁওর ইন্টারপোল সদর দফতরে থেকে বের হয়ে চীনে রওনা হওয়ার পর থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত মেংয়ের খোঁজ ছিল না বলে জানান তার স্ত্রী। এ জন্য ফ্রেঞ্চ পুলিশের কাছে অভিযোগও করেন তিনি। ফরাসি পুলিশের অনুসন্ধানের মধ্যেই পরে চীন দুর্নীতির অভিযোগে তাকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করে।

আরো পড়ুন :

উইঘুর মুসলমানদের বন্দিশিবিরে আটক রাখার পক্ষে এবার চীনের সাফাই
এএফপি

চীনের পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াংয়ে সেখানকার উইঘুর মুসলমানদের বন্দিশিবিরে আটক রাখা থাকার কথা এতদিন অস্বীকার করে এলেও স্বীকার করে আটক রাখার পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করেছে। বেইজিং দাবি করছে, এসব বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে তারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করছে। চীন অবশ্য এতদিন ধরে সেখানে বন্দিশিবির থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।

চীনের এ ধরনের নির্যাতনমূলক বন্দিশিবিরের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়েই ব্যাপক সমালোচনা চলছে। বেইজিং এর জবাবে নিজেদের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় ও কলাম লিখছে, সাক্ষাৎকার ছাপছে এবং জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্পগুলোর পদ্ধতি পাল্টে নতুন ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। অভিযোগ রয়েছে, উইঘুর মুসলমানদের ইসলামি ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও ভাষাকে ধ্বংস করতে চীন তাদের মগজ ধোলাই করতে এসব বন্দিশিবিরকে ‘পুনঃশিক্ষা’ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গত আগস্টে প্রকাশিত জাতিসঙ্ঘ প্যানেলের এক রিপোর্টে বলা হয়, এ ধরনের শিবিরগুলোয় ১০ লক্ষাধিক উইঘুরকে আটক রাখা হয়েছে।

ওই রকম কেন্দ্রে আগে অবস্থানকারী এক ব্যক্তি জানান, লম্বা দাড়ি রাখা, মুখে নেকাব ব্যবহার করা, ইসলামি বিশেষ দিনগুলোয় সামাজিক গণমাধ্যমে কুশল বিনিময় করার মতো অপরাধে আটক ব্যক্তিদের ওই ক্যাম্পে নিয়ে আসা হতো। মূলত মাও সেতুংয়ের নৃশংস সাংস্কৃতিক শুদ্ধিকর কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই কয়েক দশক ধরে এ চর্চা করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে চীনের এসব কার্যক্রমের কড়া সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষত জাতিসঙ্ঘ এবং জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণে জাতিসঙ্ঘ কমিটি এ ব্যাপারে বিশেষ নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। চীনা কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এসব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু স্যাটেলাইট চিত্র এবং নিজেদের সরকার কর্তৃক জারি করা সেই ডকুমেন্টের ফলে তাদের সেই অবস্থানটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। 

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীন ক্যাম্প বিষয়ে তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এখন তারা ওই সব বন্দিশিবিরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলেও তারা বলছে এগুলো প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নবাদীদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

নিরাপদ ও স্থিতিশীল
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া সম্প্রতি জিনজিয়াং সরকারের চেয়ারম্যান সোহরাত জাকিরের বিরল এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেই সাক্ষাৎকারে জাকির বন্দিশিবিরগুলো সমর্থন করে বলেন, জিনজিয়াং এখন নিরাপদ ও স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ওই সব ক্যাম্পে কী পরিমাণ মানুষ এখনো অবস্থান করছে তা জানাননি তিনি। জাকির দাবি করেন, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন তারা তাদের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারছে এবং সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার ক্ষতিকর দিকগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এসব ক্যাম্পের মাধ্যমে দেশের কমন ভাষা ও আইনের জ্ঞান সম্পর্কে অদক্ষ সংখ্যালঘুরা চাকরির বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং ম্যান্ডারিন বা চীনা ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারছে।

জিনজিয়াং সরকারের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, বিনামূল্যের এই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত সময়ের। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থীরা পড়াশোনার একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা জানিয়ে একটি চুক্তিতে সই করে এবং ভাতা লাভ করে। এ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জাকির বলেন, এই বছরের শেষ নাগাদ কিছু প্রশিক্ষণার্থী তাদের কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করে বের হয়ে যাবে। 
অপ্রতিরোধ্য চরমপন্থা
জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরগুলোর ব্যাপারে সমালোচনা ওঠার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সরকারি কর্মকর্তারা এ ধরনের মন্তব্য করে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে চীনের কূটনীতিকদের লেখা উপসম্পাদকীয়তে দাবি করা হচ্ছে, ধর্মীয় চরমপন্থার মাধ্যমে সৃষ্ট হুমকি দূর করার জন্য এ ধরনের ক্যাম্পই সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। এদিকে গত মঙ্গলবার দেশটির জাতীয়তাবাদী ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে বিদেশী সরকারগুলোকে জিনজিয়াং ইস্যুতে নাক গলানোর ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, নিশ্চিতভাবেই চরমপন্থা নির্মূলে এ ধরনের পরিকল্পনা সাময়িক। 

বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সমালোচনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ধরনের সমালোচনা পুরো বিষয়টিকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে এবং চীনের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। সংবাদমাধ্যমটির প্রধান সম্পাদক হু জিজিন বলেন, বন্দিশিবিরগুলোর বিষয়ক কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নেয়া লোকজনের পরিমাণ দশ লাখ বা তার কাছাকাছি। তবে পশ্চিমাদের পরিসংখ্যানিক প্যাঁচে পড়ার আশঙ্কায় তারা সঠিক সংখ্যাটি উল্লেখ করেননি। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ যাই বলুক না কেন, ওই ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন বলছেন, অনেকেই তাদেরকে আর কখনোই ফিরে পাননি। সমালোচকেরা বলছেন, গণহারে চীনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে যেকোনো সময় চীনে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
নওগাঁ সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত বান্দরবানে কেএনএফের তৎপরতার প্রতিবাদে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পেনশন স্কিম পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশে বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না : ডিসি নারায়ণগঞ্জ চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ফরিদপুরে সেদিন কী ঘটেছিল : বিবিসির প্রতিবেদন ইসরাইলের কাছে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণের দাম কিছুটা কমলো অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ ব্যক্তি ভর্তি পাঁচবিবিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক ব্যক্তির মৃত্যু স্পেশাল অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, প্রশংসিত দেওয়ানগঞ্জের রবিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

সকল