১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীনা সেনাবাহিনীর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস গতকাল সিঙ্গাপুরে আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেংগির সাথে করমর্দন করেন : এএফপি - ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে টেকসই সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস, এটি দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট পাহাড়সম চাপ প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার আসিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগির সাথে বৈঠকের সময় ম্যাটিস এমন মন্তব্য করেন।

ম্যাটিস গত মাসে লক্ষ্য করেছিলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিভাবে সামরিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অক্টোবরে চীন তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগির সাথে বৈঠকের জন্য ম্যাটিসের নির্ধারিত সফরটি স্থগিত করে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞারই একটি প্রতিক্রিয়া। সামরিক, বাণিজ্যিক বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই সম্পর্ক বেশ খারাপ যাচ্ছে। দুই পরাশক্তিই একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ-পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়। সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক বতর্মানে খুবই শীতল অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী র‌্যান্ডাল স্ক্রিভার বলেন, চীনের সাথে একটি ভালো সামরিক সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে একটি বিধ্বংসী সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে। জিম ম্যাটিসের সফরসঙ্গী স্ক্রিভার আরো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, চীনের সেনাবাহিনীও বিষয়টিকে সম্ভবত এভাবেই দেখে। আর সে কারণেই বেইজিং ম্যাটিস-ওয়েই বৈঠক বাতিল করে দেয়ার পর তারা আবার সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসার অনুরোধ জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া ও প্রশান্ত অঞ্চলীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্ক্রিভার বলেন, আমার ধারণা চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েইয়ের সাথে ম্যাটিসের বৈঠক এটিই প্রমাণ করে, বেইজিংও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখতে আগ্রহী। আমরা ওয়েইকেও যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
সঙ্কট ব্যবস্থাপনা
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরেই সামরিক সম্পর্কটি একটি দুর্বল অংশ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে এটি সবসময়ই একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে হঠাৎ করেই দুই দেশের মধ্যে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। স্ক্রিভার এ বিষয়ে বলেন, আমরা চাই এ সম্পর্কের একটি স্থিতাবস্থা, যাতে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষিত হয়। এর ফলে একটি আস্থার জায়গা তৈরি হবে, যা যেকোনো দুর্ঘটনা ঠেকাতে সক্ষম হবে। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার ওপর বেইজিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে চীন। এ কারণে স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র তাইওয়ানকে চীন তাদের নিজেদের পবিত্র ভূমি বলে দাবি করেছে।

সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে অনিরাপদ ও অপেশাদারি মহড়া চালানোর জন্য বেইজিংকে অভিযুক্ত করে পেন্টাগন। ওই মহড়ার সময় আন্তর্জাতিক নৌসীমায় চীনের একটি জাহাজ বিপজ্জনকভাবে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ডেস্ট্রয়ারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। বেইজিং এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে জানায়, দেশটি তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু ম্যাটিস উল্টো এসবের জন্য বেইজিংকে দায়ী করেন।

চীনের সামরিক বাহিনীর দ্রুত আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য রুট দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা সামরিক ঘাঁটি তৈরির বিষয়গুলো পেন্টাগনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, চীন তার এসব বিতর্কিত পদক্ষেপ থেকে সরে আসবে। স্ক্রিভার বলেন, আমি মনে করি আমাদের বার্তা হবে, কোনো এক রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও জাতীয় নিয়মগুলো পাল্টে ফেলতে পারবে না। আমরা আন্তর্জাতিক আইনে অনুমোদিত স্থানগুলোয় উড়ব, জাহাজ চালাব এবং কার্যক্রম পরিচালনা করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল