২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাশোগির কান্না, চিৎকার ও কাকুতি মিনতিতেও মন গলেনি হত্যাকারীদের

জামাল খাশোগি - ছবি : সংগৃহীত

দুই সপ্তাহ আগে তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কন্স্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা-নিখোঁজ নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই চলছে। এর মধ্যেই তুরস্কের তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে গতকাল এই সাংবাদিককে হত্যার ভয়ঙ্কর বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। কন্স্যুলেটে প্রবেশের পরই খাশোগিকে অত্যাচার করে হত্যা ও টুকরো টুকরো করা হয়। পরে সেটি ধ্বংস করা হয়। কিন্তু কোনো কোনো সূত্র এ-ও দাবি করছে যে, হত্যার পর নয়, খাশোগিকে টুকরা টুকরা করার সময়ও তিনি জীবিত ছিলেন।

তুরস্কের একটি সূত্র সিএনএন ও আলজাজিরাকে জানায়, মাত্র সাত মিনিটেই তাকে হত্যা করা হয় এবং সৌদি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সালাহ আল তুবাইগি তার দেহকে কেটে কয়েক টুকরো টুকরো করেন। এ সময় তিনি নিজেও গান শুনছিলেন এবং তার অন্য সহকর্মীদের গান শুনতে বলেন।

একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মিডলইস্ট আই অবশ্য জানিয়েছে, বিভিন্ন রেকর্ডে খাশোগিকে অত্যাচার করার বিষয়ে কোনো কিছু জানা যায়নি। বরং তাকে হত্যার জন্যই সন্দেহভাজনরা তুরস্কে এসেছিল। তারা প্রথমে খাশোগির দেহে অজ্ঞাত এক ওষুধ ঢুকিয়ে দেয়। খাশোগির অ্যাপল ঘড়িতে থাকা রেকর্ডে শোনা গেছে, খাশোগিকে টেনেহিঁচড়ে এক অফিস থেকে ওতাইবির স্ট্যাডিরুমের অপর দরজার নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে খাশোগিকে তুবাইগি একটি টেবিলে রেখে টুকরো করতে শুরু করেন, অথচ তিনি তখনো জীবিত ছিলেন। এ সময় ৫২ বছর বয়সী খাশোগির কান্না, চিৎকার ও কাকুতি মিনতির আওয়াজও ওই রেকর্ডে শোনা গেছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, খাশোগিকে হত্যা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। এরপর তাকে টুকরো টুকরো করে তুরস্ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, রেকর্ডকৃত একটি অডিওর বর্ণনা অনুযায়ী খাশোগিকে সৌদি কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ আল ওতাইবির অফিসে হত্যা করা হয়। ওতাইবি তখন তার কক্ষেই অবস্থান করছিলেন। একটি কণ্ঠ তাকে বের হয়ে যেতে বলছিল। সালাহ মুহাম্মদ আল তুবাইগি যখন খাশোগিকে খণ্ডবিখণ্ড করছিলেন, তখন তার কানে ছিল হেডফোন, যার মাধ্যমে তিনি গান শুনছিলেন। ওই কক্ষে থাকা সঙ্গী অন্যদেরও তিনি একইভাবে গান শুনতে উৎসাহিত করছিলেন। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, খাশোগির খণ্ডবিখণ্ড লাশ কনসাল জেনারেল বাড়ির কাছাকাছি কোথাও নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

নিউ ইয়র্ক টাইমস খাশোগি হত্যার এই মিশনটিকে দ্রুত এবং জটিল বলে আখ্যায়িত করে বলে, কন্স্যুলেটে পৌঁছার মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর সৌদি থেকে নিয়ে আসা ইলেকট্রিক করাতের সাহায্যে তার দেহ কয়েক টুকরো করে ফেলা হয়। খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তুরস্ক দাবি করছিল, তাকে হত্যার জন্য ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল ইস্তাম্বুল এসেছিল। পরে তুরস্ক দাবি করে, কন্স্যুলেট ভবনে যেসব অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং পাওয়া গেছে, তাতে প্রমাণিত হয় যে, খাশোগিকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।

গত সোমবার একটি তদন্ত দল ভবনটিতে নয় ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেন, তল্লাশিতে কিছু বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে এবং ওই ভবনের কিছু জায়গায় নতুন রঙ করা হয়েছে। তল্লাশির পরপর পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, তারা সেখানে হত্যার প্রমাণাদি খুঁজে পেয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগি রিয়াদের একজন কড়া সমালোচক ছিলেন। তার কলামেও সেগুলোর প্রভাব থাকত। তিনি তার তুর্কি বাগদত্তা হ্যাতিস সেনগিজকে বিয়ে করার জন্য গত ২ অক্টোবর সৌদি কন্স্যুলেট ভবনে প্রবেশ করেন। এর পর থেকে তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

গতকাল বুধবার এ বিষয়ে তুরস্কের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, সৌদির রাজকীয় পরিবারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খাশোগিকে হত্যার আদেশ দেয়া হয়। তুরস্কের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ তথ্য জানায়।

রিয়াদের নতুন দাবি
এ দিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ খাশোগি ইস্যুতে আবারো নিজেদের সাফাই গেয়ে বলেছে, ‘খাশোগি যে দিন কন্স্যুলেটে এসেছিল, সে দিনেই ফিরে গেছেন। সিএনএনে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৌদি আরব দাবি করে, খাশোগির অদৃশ্য হওয়ার পেছনে সব ধরনের সম্পৃক্ততা তারা অস্বীকার করছে এবং তার বিষয়ে তদন্তে তাদের সমর্থন থাকবে। যেহেতু তিনি সৌদি নাগরিক, তাই তারাও চায় এর পেছনের সত্য প্রকাশিত হোক। এ কঠিন সময়ে তার পরিবারের প্রতিও তাদের সমবেদনা রইল।’

সৌদির পক্ষে ট্রাম্প
এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত মঙ্গলবার বলেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগির বিষয় যদি বাদশাহ সালমান বা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানতেন তাহলে বিষয়টি ‘খারাপ হতো’। তিনি বলেন, আমার মতো, বাদশাহ বা যুবরাজ বিষয়টি জানেন কি-না তার ওপর মূলত বিষয়টি নির্ভরশীল। তারা যদি জানতেন তাহলে বিষয়টি খারাপ হতো। ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি সৌদির পক্ষে এ মন্তব্য করেন।

যুবরাজ নিখোঁজের বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত করার আশ্বাস দেয়ার পর ট্রাম্প এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ইস্তাম্বুলে সৌদি কন্স্যুলেটে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সবেমাত্র তাকে জানিয়েছেন।
খাশোগির হত্যার ঘটনায় প্রিন্স মোহাম্মদ বিব্রত এবং এতে ওয়াশিংটনের সাথে তার সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।
সৌদি আরবের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর আর এ কারণে ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রিয়াদে পাঠান সৌদি নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলতে।


আরো সংবাদ



premium cement