২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুদ্ধ নয়, খরায় বেশি উদ্বাস্তু হচ্ছে আফগানেরা জাতিসঙ্ঘের অভিমত

-

আফগানিস্তানে চলতি বছরের ভয়াবহ খরায় বিপুলসংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, এ সংখ্যা সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে ঘরছাড়াদের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতের আশপাশের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে খরায় বিপর্যস্ত অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনে বানানো এমনই একটি উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৭০ বছর বয়সী সাদি মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা তৃষ্ণার্ত ও ুধার্ত। বাড়ি ছাড়ার সময় অল্প কিছু জিনিস সাথে নিতে পেরেছিলাম, সেগুলোর বেশির ভাগই পথে হারিয়েছি। এখন কিছুই নেই আমাদের। আমরা আটজন এই ছোট তাঁবুতেই থাকছি। স্ত্রী ও ভাই মারা গেছে। আমাদের সন্তানদের অর্ধেক এখানে, বাকিদের পেছনে ফেলে এসেছি।’
এ বছরের ভয়াবহ খরায় উত্তর ও পশ্চিম আফগানিস্তানে সাদির মতো প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দণি এশিয়ার এ দেশটিতে এমন এক সময়ে এ ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানল, যখন এর জনগণ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে নানামুখী সঙ্ঘাতে বিপর্যস্ত। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাহিনী দেশটিতে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার পর থেকে দেশটিতে সংঘর্ষের পরিমাণ আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনীর অভিযানে মতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চলতি সময়েই তালেবান আফগানিস্তানের সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটির সাথে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় এ বছর যত মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে, খরা তারচেয়েও বেশি মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। হেরাতে বৈশ্বিক এ সংস্থাটির খাদ্য কর্মসূচির (ইউএনএফপিএ) সমন্বয়ে সহায়তা করা কাদির আসেমিও খরায় ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসা মানুষের জোয়ার বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এ কর্মকর্তা বলেন, দুর্যোগের মাত্রার কারণে এটা (খাদ্যসহায়তা) খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।
খরায় বিপর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ মানুষের জন্য জাতিসঙ্ঘ এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৪৬ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে। খাবার কেনার জন্য ইউএনএফপি এখন তিগ্রস্তদের অর্থ দিচ্ছে। উদ্বাস্তু শিবিরের বাইরের নিবন্ধন কেন্দ্রে আসা আফগানদের মধ্যেও দেখা গেছে মরিয়া ভাব।
উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ ফারিয়াব থেকে চার শিশুসন্তানকে নিয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে আসা এক নারী জানান, দুর্ভাগ্যই তাদের এখানে টেনে এনেছে। আমাদের কাছে যদি সামান্য টাকাও থাকত, তাহলেও আমরা কখনোই এখানে আসতাম না। দুর্ভাগ্যই এখানে টেনে এনেছে আমাদের। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে (ফারিয়াব) কোনো বৃষ্টি নেই।
তিনি বলেন, ‘সব শুকিয়ে গেছে। শিশুদের দেয়ার মতো পানিও পাইনি আমরা। ওপরের দিকে সেনাবাহিনী ও তালেবানদের মধ্যে লড়াই চলছে। চার দিকেই বিশৃঙ্খলা।’
কৃষি খাতই যে দেশের আয়ের অন্যতম প্রধান খাত, সেখানে কেবল বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অনেককে গবাদিপশু বিক্রি ও ধার করতে বাধ্য হয়েছেন। ২০ অক্টোবর পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও দেশটির অনেক নাগরিকই বলছেন, তারা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, রাজনৈতিক নেতারা তা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। হেরাতের লাখ লাখ মানুষকে এখন প্রতিনিধি ঠিক করার চেয়েও বেশি ভাবতে হচ্ছে আসন্ন শীতের মাসগুলোকে নিয়ে।
উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া মানুষজন শিগগিরই বাড়িঘরে ফিরতে পারবেন এমন সম্ভাবনা না দেখায় শীত নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগের’ কথা জানালেন আসেমিও। বড় মাত্রার এ ধরনের দুর্যোগ গত ১৮ বছরেও দেখা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া খুবই রূঢ় হয়ে উঠবে। এই লোকজন তাঁবুতে অবস্থান করে টিকে থাকতে পারবে না।’


আরো সংবাদ



premium cement