১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ধরা পড়ছে মিয়ানমারের শাসকেরা!

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদকে শুনানির অনুরোধ - ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্থার তদন্ত দলের দেয়া তথ্য শুনানির জন্যে বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ ৯টি সদস্য দেশ। চীন ও রাশিয়া এর বিপরীত অবস্থানে থাকলেও নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য দেবেন জাতিসঙ্ঘ তদন্ত দলের সভাপতি। এই তদন্ত দল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে গণহত্যার শামিল বলে অভিহিত করেছে। কূটনীতিকদের সূত্রে এই খবর জানা গেছে।

চীন এ আবেদনের বিরোধিতা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা নিরাপত্তা পরিষদের পদপে থেকে দেশটিকে রা করতে চায়। এক যৌথ আবেদন পত্রে নয়টি দেশ জানায়, তদন্ত দলের চেয়ারপারসনকে মিয়ানমার পরিস্থিতি ও এ বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহের অনুমতি এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় এর প্রভাব বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করতে হবে।

গত মাসে জাতিসঙ্ঘের ওই দলের এক রিপোর্টে মিয়ানমার পরিস্থিতি হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে তুলতে বা অ্যাডহক আন্তর্জাতিক ফৌজদারি ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ওই মিশন জানায়, রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের কমান্ডার-ইন-চিফসহ দেশটির শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তদন্ত করে তাদের বিচার করতে হবে। তবে গত বছরের দমন অভিযান চলাকালে নৃশংস ঘটনায় মিয়ামারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ দেশটি প্রত্যাখান করেছে। এবার নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরা হলে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

কূটনীতিকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো মতার মালিক চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া ঠেকাবে। তবে তারা নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগ ঠেকাতে পারেননি। কারণ ১৫ সদস্যের জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ন্যূনতম ৯ সদস্য এই প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। তাই বিষয়টিতে ভেটো দেয়া যাবে না। কূটনীতিকরা বলেছেন, চীন ও রাশিয়া মনে করে, এই রিপোর্ট প্রথমে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটির কাছে পাঠানো উচিত। ওই কমিটি মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করে থাকে। তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, পোল্যান্ড, পেরু, কুয়েত, আইভরিকোস্ট ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে এক চিঠিতে এই আবেদন জানায়। ফলে এখন তদন্ত দলের প্রধান নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করতে পারবেন।
জাতিসঙ্ঘ প্রকাশিত রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর সাথে বেসামরিক কর্তৃপও এই নিধনযজ্ঞে ইন্ধন জুগিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও তার সাংবিধানিক মতা প্রয়োগ করে এই সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাখাইনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকারের মাত্রায় তারা অবাক হয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমন ঘৃণ্য অপরাধের নীলনকশা করার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচ জেনারেলকে বিচারে আওতায় আনা উচিত। এবার ওই তদন্ত কমিটির প্রধানকেই হাজির করা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে। তিনি সবার সামনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত হাও দো সুয়ান নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা একটি চিঠিতে অবশ্য এ পদেেপর বিরোধিতা করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এটা রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস ও মেরুকরণই শুধু বাড়াবে।’ তিনি লিখেছেন, ‘অন্যান্য ইতিবাচক উন্নয়ন বাদ দিয়ে সবার ওপরে জবাবদিহিতাকে স্থান দেয়া একটি বিপজ্জনক প্রচেষ্টা, যা ভবিষ্যতে ব্যর্থ হতে পারে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চিন্তা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে তারা বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের চারজন সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত আগস্ট মাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আরো বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও সেনাবাহিনী পরিচালিত কমপে দু’টি ব্যবসায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে দেশটি। মিয়ানমারের কূটনীতিক সুয়ান নিরাপত্তা পরিষদকে লেখা চিঠিতে দাবি করেছেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনা না করে একতরফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাহ্যিক চাপ বিদ্যমান সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতাকে নষ্ট করবে।’


আরো সংবাদ



premium cement