২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে জার্মানি,কী করবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে জার্মানি - ছবি : সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে জার্মানি অনেকটা ইচ্ছায়, অনেকটা অনিচ্ছায় প্রতিরার জন্য প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো সামরিক জোটের ওপর নির্ভর করেছে। কিন্তু সম্প্রতি ন্যাটো জোট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অনীহার কারণে জার্মানি বহুদিন পর সামরিক খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ন্যাটো বাহিনীতে আরো প্রত্য ভূমিকা নিচ্ছে।

লিথুয়ানিয়া বেলারুশ সীমান্তে মোতায়েন ন্যাটো ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মানি। রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছোট এই সদস্য দেশকে আশ্বস্ত করতেই লিথুয়ানিয়াতে ন্যাটো এখানে সৈন্য মোতায়েন করেছে। জার্মান প্রতিরামন্ত্রী উরসুলা ফন দের লেইন বলেন, প্রতিরা নিয়ে জার্মানির নীতিতে বদল হচ্ছে এবং লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর নেতৃত্ব তারই একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

তার ভাষায়, ‘আগে আমরা ভাবতাম, আমাদের ইতিহাসের কারণে আমরা প্রতিরা নিয়ে, সামরিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাব না। কিন্তু এখন রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিধর একটি দেশ হিসেবে আমরা আর বসে থাকতে পারি না। আমরা এখন মনে করছি আমাদের ইতিহাসের কারণেই আমাদের ভূমিকা নিতে হবে।’ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দশকের পর দশক ধরে জার্মানি সামরিক খাতকে অবজ্ঞা করেছে। সৈন্যসংখ্যা, প্রশিণ, আধুনিক অস্ত্র, সামরিক বাজেট এসব বিষয় তাদের অগ্রাধিকারের অনেক নিচুতে ছিল। সুতরাং ন্যাটোতে নেতৃত্ব পর্যায়ে আসতে চাইলে তাদের মতা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক কনস্টানয় স্টেনজেমুলার বলেন, ‘নব্বই দশকের শেষ দিকে থেকে জার্মান সেনাবাহিনী শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা শুরু করছে। তবে ন্যাটো জোটের অন্য অনেক সদস্য দেশের সমকক্ষ হতে আরো অনেক দূর যেতে হবে। তার জন্য প্রতিরা বাজেট অনেক বাড়াতে হবে, চেষ্টা আরো অনেক জোরদার করতে হবে। বর্তমান জার্মান প্রতিরামন্ত্রী দুই বছর ধরে সেটিই করার চেষ্টা করছেন।’

রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের ঘটনা জার্মানির মনোভাব পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তার দুই বছর পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ায় জার্মানির সেই মনোভাব আরো শক্ত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাছে তা স্বীকার করেন জার্মান প্রতিরামন্ত্রী উরসুলা ফন দের লেইন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার ঘটনার একটা প্রভাব তো রয়েছেই। সেটা ছিল একটা সতর্ক সঙ্কেত। কারণ ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি বলেছিলেন, ন্যাটো অকেজো একটি জোট। এ কথা শুনে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো শঙ্কিত হয়ে পড়ে।

সে কারণেই আমরা তাড়াতাড়ি করে ইউরোপীয় প্রতিরা ইউনিয়ন গঠন করি। সিদ্ধান্ত নিই, আমাদের ইউরোপের প্রতিরায় আরো শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।’ তবে জার্মান মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে জার্মানদের মধ্যে এখন বিতর্ক চলছে।

এ দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ন্যাটো জোটে ইউরোপীয়রা যথেষ্ট দায় নিচ্ছে না। বিশেষ করে জার্মানির ব্যাপারে তিনি খুবই নাখোশ। বার্লিনে গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্সের গবেষক রিকা ফ্রাঙ্কা বলেন, ন্যাটো জোটের অন্য সদস্যদের জন্য জার্মানি খারাপ একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। তিনি আরো বলেন, ‘এসব দেশ বলেছিল জার্মানির মতো ধনী দেশ যদি প্রতিরায় খরচ না করে, গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আমাদের অপরাধ কোথায়?’
লিথুয়ানিয়াতে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনীতে জার্মান সৈন্যদের সাথে রয়েছে চেক, ডাচ এবং বেলজিয়ামের সৈন্যরা। এদেরকে তারা সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছেÑ তা প্রমাণ করা জার্মানির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৯ সালে জার্মানি ন্যাটোর দ্রুত মোতায়েনযোগ্য টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব নিতে চলেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement