২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গলায় ছুরি ধরা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা হতে পারে না : চীন

গলায় ছুরি ধরা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা হতে পারে না : চীন - সংগৃহীত

চীনা পণ্যে ধারাবাহিক শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘গলায় ছুরি ধরা রেখেছে’ বলে মন্তব্য করেছে বেইজিং বলেছে, এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনা করা সম্ভব নয়। চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে আরোপিত ২০ হাজার কোটি ডলারের শুল্ক কার্যকর হওয়ার এক দিন পর মঙ্গলবার চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শোয়েন একথা বলেন। এ ছাড়া চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকীয়তে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, এভাবে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে তা কেবল দুই দেশের সম্পর্কেই প্রভাব ফেলবে না বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বিশ্ববাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

গত ২২ মার্চ পাঁচ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের আমদানিকৃত চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপের জন্য একটি আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মেধাসম্পদ চুরি ও স্থানান্তর করছে। জবাবে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ১২৮টি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করে চীন। এর আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার।

এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর উপক্রম হয়। গত মে মাসে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার পর সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধ স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে ১৫ জুন ৫০০০ কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। জবাবে একই মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় চীন। এরপর নতুন করে ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং শোয়েন বলেন, চীন আলোচনার ব্যাপারে রাজি আছে, তবে দুই পক্ষকে একে অপরের দিকগুলো সমভাবে ও মর্যাদার সাথে বিবেচনা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের বড় বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আরোপ করেছে, তারা গলায় ছুরি ধরে আছে। এ পরিস্থিতিতে কিভাবে আলোচনা এগিয়ে যেতে পারে?’

আগস্টে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছিলেন ওয়াং। তবে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে অনেক মাস ধরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়নি। নতুন করে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন এমনুচিন চীনা কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপ করার পর এবং আরো শুল্ক আরোপ করা হবে বলে হুমকি দেয়ার পর সে বৈঠকের চেষ্টা ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে সোমবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকীয়তে দেশটির অবস্থানকে সমর্থন করা হয়েছে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, এভাবে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে তা কেবল দু’দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বিশ্ববাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সোমবারের গ্লোবাল টাইমস ও চায়না ডেইলির মতো চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলোর সম্পাদকীয়তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেখা হয়েছে, ওয়াশিংটনের চাপের মুখেও চীন শান্ত থেকেছে ও যৌক্তিক আচরণ করে গেছে।

চায়না ডেইলির সোমবারের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরোপের এ কৌশলকে মধ্যস্থতার একটা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তবে তা দুই দেশের অর্থনীতিকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।

পত্রিকাটি আরো লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপ কেবল যুক্তরাষ্ট্র-চীনের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করেনি, তা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির লাগামও টেনে ধরবে। সুতরাং ট্রাম্প প্রশাসন যদি তাদের একতরফা অবস্থানে অটল থাকে এবং পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও আলোচনার ক্ষেত্রের মৌলিক রীতিগুলোতে শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্যসংক্রান্ত কোনো আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবিক অগ্রগতি অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।

ওই সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, যৌক্তিক একটি বাণিজ্যচুক্তির জন্য চীন সব সময় আন্তরিক থেকেছে, অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রভাব খাটিয়ে গেছে।

আরো কয়েকটি সম্পাদকীয়তে চীনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন যে অনৈতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ আরোপের অভিযোগ করে বলা হয়েছে। এসব নিবন্ধে মার্কিন পদক্ষেপে দুই দেশের সম্পর্ক কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। চায়না ডেইলির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে সেগুলো যদি আসলে আলোচনায় বসতে চাওয়ার কোনো কৌশলও হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তা না হয়ে উল্টো ফল হবে।


আরো সংবাদ



premium cement