২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইরানে সামরিক প্যারেডে বন্দুক হামলা : ১২ সেনাসহ নিহত ২৫

ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খুজিস্তানের আহওয়াজে সামরিক প্যারেডে হামলার পর আহত সৈন্যদের পড়ে থাকতে দেখা যায় : এএফপি -

ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আহওয়াজ শহরে সামরিক বাহিনীর প্যারেডের সময় বন্দুকধারীদের গুলিবর্ষণে অন্তত ২৫ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় হামলাটি শুরু হয় এবং এতে চার বন্দুকধারী যুক্ত ছিল বলে জানিয়েছে ইরানি বার্তা সংস্থা ফার্স। নিহতদের মধ্যে ১২ জন সেনাসদস্য বলে জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে দেশটির রিভলুশনারি গার্ডের সদস্যদের পাশাপাশি কুচকাওয়াজ দেখতে যাওয়া নারী ও শিশুরাও রয়েছে। এই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিযেছে আহওয়াজ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এরা নিজেদের আরব জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচয় দেয়। দুইজন হামলাকারী নিহত হয়েছে। পালিয়া যাওয়া হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে ইরান।
হামলাকারীরা প্যারেড প্রাঙ্গণের নিকটবর্তী একটি পার্ক থেকে গুলি করে বলে জানা যায়। এ সময়ে তাদের পরনে সামরিক উর্দি ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কুচকাওয়াজ চলাকালে বন্দুকধারীরা দূর থেকে গুলি চালাতে শুরু করে। তারা এক সময় মঞ্চে উপবিষ্ট সেনাকর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেও হামলা চালায়। তাদেরকে পাল্টা জবাব দেয় ইরানি বাহিনীর সদস্যরা। গোলাগুলির এই ঘটনা প্রায় দশ মিনিট ধরে চলে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ওই হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮) বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খুজিস্তান প্রদেশের আহওয়াজ শহরে ওই কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল। হামলার পেছনে ‘একটি বিদেশী সরকারের’ সমর্থিত ‘সন্ত্রাসীরা’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তিনি বলেছেন, ‘ইরান আঞ্চলিক সন্ত্রাসের সমর্থকদের ও তাদের প্রভু যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী বলে ধরে নিয়েছে’।
খুজিস্তান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর জানিয়েছেন, হামলাকারীদের দুজন পাল্টা গুলিতে নিহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দুজনকে। আর বাকিরা পালিয়ে গেছে। প্রাথমিভাবে এই হামলায় নিহতের সংখ্যাকে ১০ জন হিসেবে উল্লেখ করেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। কিন্তু ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২৫-এ এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে সেনাসদস্য ১২ জন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এ ঘটনার জন্য নাম উল্লেখ না করে ‘বিদেশী শক্তির’ দিকে আঙুল তুলে টুইটারে লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ দেয়া বিদেশী শক্তি আহওয়াজে হামলা চালিয়েছে। শিশু ও সাংবাদিকরা প্রাণ হারিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া আঞ্চলিক শক্তি এবং তাদের প্রভু যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য দায়ী। ইরানিদের জীবন রক্ষার জন্য ইরান খুব দ্রুতই এবং চরমভাবে পাল্টা জবাব দেবে।’
আলজাজিরাকে তেহরানভিত্তিক একজন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘রেভলুশনারি গার্ডের কর্মকর্তারা আহওয়াজি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই হামলার জন্য দায়ী মনে করেন। এরা কয়েক বছর ধরেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের লক্ষ্য ইরানের তেলসমৃদ্ধ খুজিস্তান প্রদেশকে ইরান থেকে আলাদা করে ফেলা, ঠিক যেটা সাদ্দাম হোসেন চেয়েছিলেন। তারা নিজেদেরকে আরব জাতীয়তাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও আমরা জানি, মুজাহিদিন-ই-খাল্কের সাথে তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে।’ মুজাহিদিন-ই-খাল্কের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ইরানি নারী ও শিশুকে হত্যার অভিযোগ আছে। গত বছরের শেষ দিকে আহওয়াজে বড় ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছিল। জীবনযাত্রার মান পড়ে যেতে থাকায় ওই সময় স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
সাদ্দামের পরিণতি হবে ট্রাম্পের : রুহানি
এদিকে বিবিসি ও রয়টার্স জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, ইরানি জনগণ ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের মতো বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও পরাজিত করবে। শনিবার জাতীয় প্রতিরক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে তেহরানে সামরিক বাহিনীর প্যারেড ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিধর দেশের যুদ্ধের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। মার্কিন চাপ সত্ত্বেও ইরান ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাতিল করবে না বলেও অঙ্গীকার করেন রুহানি। তিনি বলেন,‘ট্রাম্পও একই পরিণতি বরণ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পরিণতি সাদ্দাম হুসেইনের মতো হবে। ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা অস্ত্র-সরঞ্জাম থেকে দূরে সরিয়ে আসবে না... যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ক্ষোভের কারণ।’
ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনেতিক, রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করে রুহানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রক্সি নয়, ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতো এবারো তারা হতাশ হবে। শত্রুরা পরাজিত হবে। ইরানের বিপ্লব ও শাসনব্যবস্থার ক্ষতি করাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ করেন তিনি। রুহানি বলেন, এই একই উদ্দেশ্যে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এক দিন আগে মার্কিন প্রশাসনের ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। এর পরদিনই হাসান রুহানি ট্রাম্পকে পরোক্ষভাবে হুমকি দিলেন। এক বিবৃতিতে জাভেদ জারিফ টুইটারে দেয়া বলেন, এটা সত্য যে, আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও আমাদের এই অঞ্চলের জন্য বাস্তব একটি হুমকি রয়েছে। আর এই হুমকি হলো আমাদের এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে মার্কিন প্রশাসন ও তার দুর্বৃত্ত সহযোগীরা। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই স্বাভাবিক রাষ্ট্রের মতো কার্যক্রম শুরু করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement