২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইরানের সাথে সমঝোতা চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র

ব্রায়ান হুক - ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে একটি চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে চায়, যাতে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও তার আঞ্চলিক আচরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনকে সামনে রেখে ইরান বিষয়ক মার্কিন বিশেষদূত ব্রায়ান হুক এ মন্তব্য করেন।

এ বছরের শুরুতে তেহরানের সাথে ছয় জাতিগোষ্ঠীর করা চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উচ্চপর্যায়ের যেকোনো বৈঠকের পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির জন্য ইরানের সামনে এক ডজন শর্তের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে ব্রায়ান হুক নতুন যে বিষয়টি বলেছেন তা হলো, যেকোনো চুক্তিই মার্কিন সিনেট কর্তৃক পাস হতে হবে।

হাডসন ইনস্টিটিউটে দেয়া এক বক্তব্যে ব্রায়ান হুক বলেন, আমরা ইরানের সাথে যে চুক্তি স্বাক্ষরের আশা করছি, তা আগের বারের মতো কোনো ব্যক্তিগত চুক্তি হবে না, বরং এটি হবে দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি। আমরা এমনই একটি চুক্তি চাই। এর আগে পম্পেও যেসব শর্ত উত্থাপন করেছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, তেহরানে যে সব মার্কিনি বন্দী রয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে, পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রাম উচ্ছেদ করতে হবে এবং সিরিয়া ও ইয়েমেনে তারা আর্থিকসহ যেসব সহায়তা প্রদান করছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। কিন্তু হুক স্বীকার করেন, এর আগে ট্রাম্প তার প্রশাসন ইরানের সাথে আলোচনায় আগ্রহী বলে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাতে ইরানের নেতৃবৃন্দ কোনো ধরনের আগ্রহ দেখায়নি।

২০১৫ সালে ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে অংশগ্রহণ ছিল তা দেশটির সিনেট দ্বারা অনুমোদিত ছিল না। উপরন্তু ওই চুক্তিটি কেবল ইরানের পরমাণু কার্যক্রমকেই যুক্ত করেছিল। মার্কিন সংবিধান অনুসারে এ ধরনের যেকোনো চুক্তি সিনেট থেকে অনুমোদিত হতে হয়। কিছু সমালোচক বলেন, ওই চুক্তিটি পাসে সিনেটের অনুমোদন লাভে ওবামার ব্যর্থতার কারণেই ট্রাম্প একতরফাভাবে তা থেকে সরে আসার সুযোগটি পেয়েছেন।

হুক বলেন, তারা (ওবামা প্রশাসন) মার্কিন সিনেটে এটি পাসে ভোট পায়নি, ফলে তারা জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট চেয়েছে। কিন্তু যদি আপনি কোনো কিছুকে স্থায়ী ও টেকসই করতে চান, সেক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মে যথেষ্ট নয়। হুক আরো বলেন, ওয়াশিংটন আশা করছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তেহরানকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করবে। পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অবিশ্বাসী পক্ষ হিসেবে দায়ী করে আসছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের অস্থিতিশীলতার জন্য তারা ওয়াশিংটনকেই দায়ী করে আসছে। তারা মনে করে, ট্রাম্পের আলোচনার আহ্বান তাদের পদক্ষেপের বিপরীত। তাদের অভিযোগ, ওয়াশিংটন ইরানের শাসনক্ষমতা পরিবর্তনে প্ররোচনা দিয়ে আসছে।

গত জুলাইয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, যখনই তারা চায় তখনই তিনি ইরানের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। ধারণা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় সে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে ব্রায়ান হুক বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এ পর্যন্ত বৈঠকের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
হুক বলেন, তাদের সম্মান জানিয়েই বলছি, এগুলোতে আমাদের পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। আমরা অচিরেই দেশটির ওপর আরো শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছি। হুক আরো বলেন, ৪ নভেম্বরের মধ্যে ইরানের তেল ক্রয় করা বহুলাংশে কমেছে কি না তা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করবে। এরপর ওয়াশিংটন তেহরানের ওপর আরেক দফা তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। হুক বলেন, ইরান আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। যদি আমরা একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী মধ্যপ্রাচ্য গড়ে তুলতে চাই, তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ইরানকে দমন করেই তা করতে হবে।

আলোচনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর অংশ নেয়া উচিত
আরব আমিরাতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইরানের সাথে ওয়াশিংটন যে বৈঠকে বসতে চাইছে, তাতে ওয়াশিংটনের উপসাগরীয় মিত্রদেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনওয়ার গারগাস হুকের প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে এক টুইটে বলেন, এ আলোচনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর যুক্ত হওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এ প্রস্তাবটি তেহরানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উচিত এ প্রস্তাবটিকে গুরুত্বের সাথে নেয়া। গত মে মাসে ট্রাম্প যখন ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসছিলেন এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিলেন, তখন আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও বাহরাইন ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানান। এ দেশগুলো ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন স্থানে ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement