২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এরদোগান ও জাতিসঙ্ঘের হুঁশিয়ারি

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ইদলিব

রুশ ও সিরীয় বাহিনীর হামলার পরে ইদলিব থেকে পালিয়ে তুর্কি সীমান্তে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে কয়েকটি পরিবার :এএফপি - ছবি : সংগৃহীত

ইদলিবের ৩০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে উল্লেখ করে জাতিসঙ্ঘ সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান সেখানে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর হামলা বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে এরদোগান সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের উদ্বেগের কথাই পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার সর্বশেষ প্রদেশটির ওপর হামলার ক্ষতিকর প্রভাব তুরস্ক, ইউরোপ ও এর বাইরে ছড়িয়ে পড়বে।

এরদোগান বলেছেন, ‘কেবল নিরপরাধ সিরিয়ানরা নয়, বরং গোটা বিশ্বকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।’ তিনি গত সপ্তাহে তেহরানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ইরানি প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ইদলিবে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় বন্ধ করার দায়িত্ব ইরান ও রাশিয়ার। পল্লী অঞ্চলসংলগ্ন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশটি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সরকারি বাহিনীর একের পর এক সামরিক সাফল্যে ইতোমধ্যে হীনবল হয়ে পড়েছে।

৩০ হাজার বাস্তুচ্যুত : জাতিসঙ্ঘ

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এখন ইদিলেবের ওপর নজর দিয়েছেন। এ মাসের শুরুতে তার বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশটির ওপর বোমাবর্ষণ জোরদার করেছে। সিরিয়ার সরকারি ও মিত্র বাহিনীগুলো নতুন করে অভিযান শুরুর পর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশ থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। সরকারি পক্ষ গত সপ্তাহে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ শুরু করার পর থেকে ইদলিবের এসব বাসিন্দা পালাতে শুরু করে বলে সোমবার জানিয়েছে ওই এলাকায় ত্রাণ উদ্যোগের সমন্বয়রত জাতিসঙ্ঘের একটি সংস্থা। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের শেষ বড় ঘাঁটি ইদলিব পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করেছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত সরকারি সেনা ও মিত্র বাহিনীগুলো। এই অভিযানের মুখে ইদলিব থেকে আট লাখ বেসামরিক বাসিন্দা পালিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘের মানবিক বিষয় সমন্বয় দফতর (ওসিএইচএ)।

এতে একুশ শতকের সবচেয়ে শোচনীয় মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ওসিএইচএ’র প্রধান মার্ক লোকক। রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনপুষ্ট দামেস্ক ইদলিব ও সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারে বড় ধরনের স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

ইদলিবে অস্ত্রবিরতি নিয়ে শুক্রবার তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের এক বৈঠক ব্যর্থ হয়। এরপর সিরিয়া ও রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো ফের প্রদেশটিতে বিমান হামলা শুরু করে। ওসিএইচএ’র মুখপাত্র ডেভিড সোয়ানসন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রোববার পর্যন্ত সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ৩০,৫৪২ জন বাস্তুচ্যুত হয়ে ইদলিবের অন্যান্য এলাকায় চলে গেছে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব ও সংলগ্ন লাতাকিয়া, হামা ও আলেপ্পো প্রদেশের ছোট কয়েকটি অংশে প্রায় ২৯ লাখ মানুষের বাস। এদের অর্ধেকই সিরিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল।

তুরস্ক ও ইরান-রাশিয়ার মতৈক্য

রাশিয়া ও ইরান বাশার সরকারকে এবং তুরস্ক কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপকে সমর্থন করছে। দেড় বছর ধরে দেশ তিনটি সিরিয়া সঙ্কট নিরসনে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করে আসছিল। এ লক্ষ্যে তারা বেশ কয়েকটি তথাকথিত ‘যুদ্ধমুক্ত এলাকা’ গঠনে সম্মত হয়। অনেক দফা আলোচনার পর এই তিন দেশ এসব অঞ্চলের গ্যারান্টার হতে সম্মত হয়। যুদ্ধমুক্ত এলাকার মধ্যে ইদলিবও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রাশিয়া ও ইরান চায় তুর্কি সীমান্তসংলগ্ন প্রদেশটি থেকে ‘সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে’ নির্মূল করতে। অন্য দিকে তুরস্ক ইদলিবে শান্তি বজায় রেখে এসব গ্রুপকে নিরস্ত্র করতে চায়। গত সপ্তাহের তেহরান শীর্ষ বৈঠকে মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় দেশ তিনটি। সেখানে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার তুরস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইরান ও রাশিয়া। গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় সিরিয়া বিষয় জাতিসঙ্ঘ দূত স্তাফান ডি মিস্তুরার সাথে তিন দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকের কথা। তুরস্কের আশঙ্কা, ইদলিবে হামলার কারণে তার দেশের সীমান্তে আরো লাখ লাখ উদ্বাস্তু আসা শুরু হবে। ইতোমধ্যে তুরস্কে ত্রিশ লাখেরও বেশি সিরিয়ান উদ্বাস্তু বসবাস করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement