২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আইসিসির ওপর ট্রাম্পের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়

বিশেষজ্ঞদের অভিমত
-

ওয়াশিংটনে গত সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার শিরোনাম ছিলÑ ‘আন্তর্জাতিক হুমকি থেকে মার্কিন সাংবিধানিকতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা’। এই শিরোনামটিকে আপাত দৃষ্টিতে নির্দোষ মনে হয়েছিল। কিন্তু বোল্টনের এ ভাষণ ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে বিধ্বংসী ও অসংযত ভাষণ। এতে বিশ্বজুড়ে আইন-কানুন বিদ্যমান থাকার নজির আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) চরম সমালোচনা করা হয়। আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির বিরোধিতা করলেও এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এই আদালত ও তার বিচার ব্যবস্থার ধারণাকে একেবারেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। এক্ষেত্রে তারা ভীষণভাবে আশাবাদীও।
জন বোল্টনকে চলতি বছরের মার্চেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে বসান আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী ট্রাম্প। বেশির ভাগ রক্ষণশীল মার্কিনীর মতো বোল্টনও সব সময় আইসিসিকে ঘৃণা করে এসেছেন। বরাবরই আইসিসির কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছেন তিনি। এ পদে বসে শুরু থেকেই আগ্রাসী কথাবার্তা বলে চলেছেন ৬৯ বছর বয়সী বোল্টন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের বিরুদ্ধে তার এই হুমকি-ধামকিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম।
রোম স্ট্যাচুট বিধির ভিত্তিতে ২০০২ সালে আত্মপ্রকাশ করে আইসিসি। এতে যোগ দেয় ১২৩টি দেশ। এই আদালত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দায়ীদের অভিযুক্ত করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, ইসরাইলসহ বেশ কিছু দেশ এতে যুক্ত হয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম নীতিমালায় স্বাক্ষর করলেও পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তা প্রত্যাহার করে নেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে থাকে। যখন মার্কিন কোনো স্বার্থ দেখা যায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র আইসিসিকে বেশ জোরালোভাবেই সমর্থন দেয়। শক্তিশালী দেশগুলো এ সংস্থাতে না থাকায় বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসিতে যথেষ্ট দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। এর সমালোচনা রয়েছে, আইসিসি মূলত যেসব দেশের আর্থিক অবস্থা দুর্বল বা প্রভাব-প্রতিপত্তি কম সেক্ষেত্রেই তাদের কাজ চালাতে পারে। ফলে সংস্থাটির কাজ মূলত আফ্রিকা কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল।
হুমকি সত্ত্বেও তদন্ত চালাবে আইসিসি
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসি বলেছে, তারা তাদের কাজ যথারীতি চালিয়ে যাবে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ তদন্তকার্যক্রম অব্যাহত রাখলে আইসিসির বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন হুঁশিয়ারি দেয়ার এক দিন পর গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আদালত এ কথা বলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এটি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান যার সমর্থনে রয়েছে ১২৩টি দেশ। আইনের আদালত হিসেবে সেই নীতিমালা ও আইনের শাসনের অনমনীয় ধারণা অনুযায়ী আইসিসি তার কাজ অব্যাহত রাখবে। আফগান যুদ্ধে বন্দীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর দায়ে সম্প্রতি মার্কিন সেনাদের বিচারের মুখোমুখি করার কথা ভাবছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত।

 


আরো সংবাদ



premium cement