২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ব্যাংককে জাতিসঙ্ঘ জলবায়ু সম্মেলন

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাপ

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গত রোববার জরুরি জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ : এএফপি -

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গত রোববার অনুষ্ঠিত হয় জরুরি জলবায়ু সম্মেলন। বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এমন একটি চুক্তি আটকিয়ে রাখার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অভিযুক্ত করেছেন সম্মেলনে অংশ নেয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে করা ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর জন্য একটি বিস্তৃত নীতিমালা তৈরির দাবি জানান সারা বিশ্ব থেকে সম্মেলনে যোগ দেয়া বিশেষজ্ঞরা। তবে জলবায়ু তহবিলের সীমা টানা এবং জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিভিন্ন অবদান যাচাই করার পদ্ধতি নিয়ে সম্মেলনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকটি দরিদ্র ও ছোট রাষ্ট্র থেকে সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রতিনিধিরা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে অতীতে অর্থ ব্যয়ের অঙ্গীকার করলেও তারা তা রক্ষা করছে না। ছোট দ্বীপদেশগুলোর আলোচক গ্রুপের প্রধান আমজাদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিশাল পরিমাণে এবং যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বেশি কার্বন নিঃসরণের জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। তা ছাড়া এমন অনেক দেশ রয়েছে, যারা জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদের মালিক বা ধনী হয়ে গেছে। অথচ আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ফলের মুখে দাঁড়িয়ে আছি এবং চলতি বছরের মধ্যে যদি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু করা না যায়, তাহলে অনেক দেশ ও বিশালসংখ্যক মানুষ সমুদ্রের পানির মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে।’
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ক্রমেই বাড়তে থাকা পৃথিবীর তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা এবং সম্ভব হলে বর্তমান শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা এই চুক্তির প্রধান লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে বার্ষিক ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল প্রতিষ্ঠাসহ একগুচ্ছ অঙ্গীকার করে দেশগুলো। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা মোকাবেলা করাসহ সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এ সম্পর্কে চূড়ান্ত যে নীতিমালা করা হয়েছে সেটা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হতে পারে। প্রতিশ্রুত এই জলবায়ু তহবিল জোগাড় এবং এসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ অর্থায়নের কাঠামোর দিকে কম নজর দেয়া উচিত বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত অর্থনীতির অন্যান্য দেশ দাবি করছে; কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবেলা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিশ্চিত এবং উন্মুক্ত তহবিলের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্মেলনে অংশ নেয়া একজন সিনিয়র জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও আলোচক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আত্ম-নিয়ন্ত্রিত জলবায়ু তহবিলের বিষয়ে আস্থা রাখতে বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলো। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করতে চাই। কিন্তু আমরা কিভাবে তাদের (ধনী দেশগুলোর) ওপর আস্থা রাখব বা বিশ্বাস করব? ইতঃপূর্বে প্রতিশ্রুতি দেয়া তহবিলের টাকা তারা আমাদের সামনে হাজির করুক।’
জাতিসঙ্ঘের জলবায়ুবিষয়ক সেক্রেটারি প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকক জলবায়ু সম্মেলনে ‘বেশির ভাগ ইস্যুতে অগ্রগতি হলেও’ এখন পর্যন্ত কোনো ইস্যু চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় অর্থায়নের বিষয়টি খুব কঠিন এবং রাজনৈতিক স্পর্শকাতর। চূড়ান্ত জলবায়ু নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে এর আগের রাউন্ডের বৈঠকগুলোতে খুব অল্প পরিমাণ অগ্রগতি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যাংকক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে বেঁধে দেয়া সময়সীমা অনুযায়ী ২০১৮ সাল শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে এই গাইডলাইন বা নীতিমালা তৈরি করতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কার্বন বাজারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কিছু অগ্রগতি করতে সক্ষম হলেও কর্মীরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের মৌন সম্মতিকে সাথে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু তহবিল ইস্যুতে যেকোনো ধরনের অগ্রগতির বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করে।
অ্যাকশন এইড এনজিওর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কর্মকর্তা হারজিত সিং গত রোববার বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এখন খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো তাদের করা অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন করছে না এবং জলবায়ু তহবিল ব্যবহারের স্পষ্ট নীতিমালা মেনে চলার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করছে। তারা (উন্নত দেশগুলো) যদি তাদের বর্তমান অবস্থানে অটল থাকে এবং অর্থ খরচ করতে না চায়, তাহলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ভেঙে যেতে পারে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement