উইঘুর মুসলমানদের কমিউনিস্ট মতাদর্শ গ্রহণে বাধ্য করা হচ্ছে : হিউম্যান রাইটস
- রয়টার্স
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের দেশটির কমিউনিস্ট মতবাদ গ্রহণে বাধ্য করা হচ্ছে। আর এটি করতে তাদের ওপর নানা রকমের নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জিনজিয়াং ছেড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া মুলমানদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সোমবার হংকংভিত্তিক সংস্থাটি বলেছে, বেশির ভাগ তুর্কি বংশোদ্ভূত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলমানেরা নির্বিচার আটক, প্রতিদিনকার ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে নিষেধাজ্ঞা, ‘জোরপূর্বক রাজনৈতিক মতাদর্শে দীক্ষাদান’ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের শিকার হচ্ছেন।
এর আগে আগস্ট মাসে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্যানেল বলে, চীন দূরবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে ১০ লাখের বেশি জাতিগত উইঘুরকে গোপনে ‘বন্দী শিবিরে’ আটকে রেখেছে। যেখানে তাদের রাজনৈতিক শিক্ষা (আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট বা দেশটির নেতৃত্বের আনুগত্য গ্রহণে বাধ্যকরণ) দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেইজিং এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তার অংশ হিসেবে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী সরকার। চীনের আরো অভিযোগ, জিনজিয়াং ‘ইসলামপন্থী মিলিট্যান্ট’ (উইঘুর মুসলিম) ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (স্বাধীনতাকামী) ব্যাপক হুমকি মুখে রয়েছে। তারা সেখানে হামলা ও উত্তেজনা বাড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে।
উল্লেখ্য, জিনজিয়াং উইঘুর মুসলমানদের মাতৃভূমি। এ ছাড়া সেখানে রয়েছে জাতিগত হান। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়েছে, উইঘুর ও অন্য মুসলমানদের ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ইসলামিক রীতিনীতি-সম্ভাষণ পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চীনা মান্দারিন ভাষা শেখা এবং তাদের প্রচার গান (চীনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ সংক্রান্ত প্রচার) গাওয়া বাধ্যমূলক করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, জিনজিয়াংয়ে বসবাসরতদের মধ্যে যাদের আত্মীয়স্বজন কাজাখস্তান, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়াসহ ২৬টি ‘স্পর্শকাতর দেশে’ থাকে তাদের নিয়মিত টার্গেট করছে কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যেই কোনো বিচার ছাড়াই তাদের মাসের পর মাস আটক রাখা হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্যাম্প তথা বন্দিশিবিরের কড়া নিয়মকানুন যারা মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়, এমনকি ২৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে অথবা নির্জন কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। এক সময় জিনজিয়াংয়ের বাসিন্দা ছিলেন কিন্তু এখন বিদেশে অবস্থান করছেন এমন ৫৮ জনের সঙ্গে কথা বলে ওই রিপোর্ট তৈরি করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক মায়া ওয়াং। তিনি বলছেন, ক্যাম্পের (বন্দিশিবির) বাইরেও নিরাপত্তা এতটাই জোরদার করা হয়েছে যে, এখন ভেতর ও বাইরের অবস্থা প্রায় একই। এতে আরো বলা হয়েছে, যারা এখন জিনজিয়াংয়ে ঢুকতে পারছেন না এবং তারা ঢুকলে যারা বর্তমানে যারা আছেন তাদের সমস্যা হবে ভেবে ঢুকছেন না- এমন লোকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়াং ও তার টিম।
নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীরা বলেছেন, ব্যাপকহারে চেক পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে, আর এসব চেক পয়েন্টে মুখ দেখে চেনার প্রযুক্তি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক পুলিশ মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে, যার অংশ হিসেবে প্রত্যেক বাড়িতে রয়েছে কিউআর কোড। যার স্ক্যানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, ওই বাড়িতে কারা অবস্থান করছে। ওয়াং বলছেন, ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি পর্যবেক্ষণ, মসজিদ বন্ধ করে দেয়া এবং জিনজিয়াংয়ের পশ্চিমাংশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত দলীয় নেতা তথা সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের অর্থ দাঁড়ায়, ‘ইসলাম মানা কার্যত নিষিদ্ধ’।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা