২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে চীনা ও রুশ কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিরোধে চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তুরস্ক
-

উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুরের তিনটি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পিয়ংইয়ংয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে তার অংশ হিসেবে বুধবার মার্কিন সরকার এ ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন নুচিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে এবং এ নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর কৌশল হিসেবে রাশিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক যেসব কোম্পানি কাজ করছে তাদেরকে মার্কিন আইনের আওতায় আনা হবে। এসব কোম্পানি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ১৩ আগস্ট নতুন একটি প্রকল্প ঘুরে দেখেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, একপর্যায়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় একজন ব্যবসায়ীকে এবং চীন, রাশিয়া ও সিঙ্গাপুরের তিনটি জাহাজ কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো চীনের ডালিয়ান সান মুন স্টার ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিক ট্রেডিং কোম্পানি এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক এসআইএসএমএস লিমিটেড।
দুই কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে উত্তর কোরিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্য দিকে, রাশিয়ার বন্দর সেবা সংস্থা প্রফিনেট লিমিটেডি এবং এর পরিচালক ভ্যাসিলি আলেক্সান্দ্রোভিচকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বেইজিং সব সময় উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে। চীনের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে এমন কার্যকলাপ চালাতে দেয়া হচ্ছে না যা জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞার খেলাপ।
তেমনি রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াকভ গতকাল বলেন, রাশিয়ার কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অরোপের সময়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ ও প্রমাণ ছাড়াই পদক্ষেপ নিয়েছে।
চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তুরস্ক
খ্রিষ্টান এক ধর্মযাজককে আটকে রাখার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতির ফলে ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া ও চীনের সাথে নতুন জোট গড়ার চিন্তাভাবনা করছে তুরস্ক।
দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও তার প্রশাসন সঙ্কট কাটাতে এখনো নমনীয় হতে প্রস্তুত নন। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বিদেশী পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদপে হিসেবে তিনি মার্কিন ইলেকট্রনিক পণ্য বর্জনের ডাক দেয়ার পাশাপাশি সে দেশ থেকে গাড়ি, তামাক, মদসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানির েেত্র শুল্কের হার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়র েেত্র ১৪০ গুণ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, গাড়ির েেত্র তা ১২০ শতাংশ। প্লাস্টিক ও কয়লার েেত্রও শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছেন এরদোগান।
এর আগে মার্কিন প্রশাসন তুরস্ক থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির েেত্র বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে। গত শুক্রবার হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত টুইট করে ঘোষণা করলে রাতারাতি তুরস্কের মুদ্রা লিরার ধস নামে। দু’দিনেই লিরার মূল্যমান ২০ শতাংশ পড়ে যায়। মঙ্গলবার লিরা আবার কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়ালেও সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদপে সত্ত্বেও বাজারে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
কিন্তু তারপর এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের ভীতি বা দুর্বলতা প্রকাশের কোনো লণ দেখাচ্ছেন না তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। গত কয়েক দিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রুদ্ধ ভাষায় আক্রমণের পর বুধবার প্রেসিডেন্ট এরদোগান পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ন্যাটো জোটের দুই সদস্য দেশের মধ্যে অভাবনীয় বৈরিতা শুরু হয়েছে, সেই খ্রিষ্টান যাজক অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে জামিন দেয়ার এক আবেদন বুধবার খারিজ করে দিয়েছে তুরস্কের একটি আদালত।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে এই খ্রিষ্টান যাজককে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তার ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তবে ব্রানসন নিজে এবং মার্কিন সরকার বারবার দাবি করেছে, তুরস্কের অভ্যুত্থানের সাথে তার কোনোই সম্পর্ক ছিল না। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র বলছে, তার মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন করে এরদোগানকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও তা তোয়াক্কা করেননি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। শুল্ক বাড়ানোর জেরে সোমবার লিরার মূল্য রেকর্ড নিচুতে নেমে যাওয়ার পরও আপসের কোনো লণ দেখাচ্ছে না তুরস্কের সরকার।
এ দিকে ব্রানসন মুক্তি না পেলে আরো কড়া অর্থনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ওয়াশিংটনে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সাথে মার্কিন যাজক ব্রানসনের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে তুরস্ক তাদের দেশের বিচারব্যবস্থায় বাইরের হস্তপে অস্বীকার করছে। কাজেই অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা ও উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে রাশিয়া ও চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তুরস্ক।

 


আরো সংবাদ



premium cement