২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পুঁজিবাদ ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব

-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সিনিয়র সিনেটর ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এলিজাবেথ ওয়ারেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি সিনিয়র এ মার্কিন সিনেটর আমেরিকান পুঁজিবাদ ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে নতুন একটি আইনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এ আইনের মাধ্যমে তিনি বড় পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টেনে ধরা, সম্পদের পুনর্বণ্টন করা এবং শ্রমিকদের আরও বেশি সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন।
‘অ্যাকাউন্টেবল ক্যাপিটালিজম অ্যাক্ট’ নামক এ প্রস্তাবিত আইনকে ওয়ারেন গত বুধবার পরিচয় করিয়ে দেন। এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, বর্তমান পুঁজিবাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে শ্রমিকদের কথা না ভেবে শেয়ারহোল্ডারদের লাভের জন্য কাজ করা এবং এ ধরনের পুঁজিবাদী মডেলের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়াই তার প্রস্তাবিত আইনের লক্ষ্য।
এ আইন অনুযায়ী, যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক রাজস্ব ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে একটি করপোরেট চার্টার নিতে হবে এবং এর মাধ্যমে এ আদেশ দেয়া হবে যে, কোম্পানিগুলো শুধু শেয়ারহোল্ডারদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে না।
এর পরিবর্তে শ্রমিক, ভোক্তা ও গ্রাহকসহ সব বৃহৎ করপোরেট স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। কোম্পানির পরিচালকেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছেন না বলে যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার মালিক মনে করলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
প্রস্তাবিত এ আইনের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিজ নিজ কোম্পানির কমপক্ষে ৪০ শতাংশ পরিচালক নির্বাচন করতে পারবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুমানিক তিন হাজার ৫০০ সরকারি সংস্থা এবং কয়েক শ’ ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানি এ আইনের আওতায় আসবে।
নিজের লেখা এক নিবন্ধে এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনতেই তিনি এ আইনের কথা ভাবছেন। এটা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং শ্রমিকেরা ভালো বেতন পাবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লেখা নিবন্ধে এ নারী রাজনীতিক আরও বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের লাভের অংশ ফিরিয়ে দেয়ার প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়ার অর্থ হচ্ছে বড় বড় আমেরিকান কোম্পানিগুলো ধনীদের আরও ধনী বানানোর জন্য কাজ করছে।’
এ আইনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি নতুন দফতর চালু করা হবে। দফতরটির কাজ হবে করপোরেট কোম্পানিগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় চার্টার অনুমোদন করা। ওয়ারেন বলেন, বড় বড় আমেরিকান কোম্পানিগুলো ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে তাদের উপার্জনের ৯৩ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে বণ্টন করেছে। কিন্তু ১৯৮০’র দশকের প্রথম দিকে এ চিত্রটি ছিল ভিন্ন। সেই সময় কোম্পানিগুলো তাদের উপার্জনের অর্ধেকেরও কম শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ব্যয় করত এবং বাকি অর্থ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যয় করত।
নিবন্ধে তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের প্রকৃত বেতন থেমে বা স্থির হয়ে থাকলেও তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমিকেরা উৎপাদনে যে অবদান রাখেন, সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান না।’ তিনি বলেন, শ্রমিকদের কম মজুরি দেয়া ও স্থানীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ না করার কৌশল অবলম্বন করে চলা করপোরেশনগুলোর ‘ব্যবসার পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্যই’ নতুন আইনের প্রস্তাব করেছেন তিনি।
অর্থনীতি ও করপোরেট ইতিহাসে বিশেষজ্ঞ কয়েকজন শিাবিদ ওয়ারেনের প্রস্তাবের প্রশংসা করেছেন। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট হকেটের নেতৃত্বে ওয়ারেনকে লিখিত একটি চিঠিতে শিাবিদেরা উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা মনে করি, এমন আইনের প্রয়োজনীয়তা বহু আগে থেকেই বিদ্যমান। আমাদের কেউ কেউ আপনার প্রস্তাবিত বিধির চেয়ে আরও বেশি কিছু করার প।ে তবে আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত, আপনার আনা প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট সাম্রাজ্যের পরিবর্তন ঘটাতে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ পদপে।’
তবে মুনাফার ভিত্তিতে চলা আমেরিকান পুঁজিবাদের সংস্কারের আনা প্রস্তাবটি যে শুধু প্রশংসাই পেয়েছে তা নয়। ওয়ারেনের প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে বেঞ্চমার্ক ইনভেস্টমেন্টের সিইও কেভিন কেলি ফক্স টেলিভিশন চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, ‘করপোরেশনগুলো কী করবে আর কী করবে না তা নির্ধারণ করে দেয়ার েেত্র আমার কাছে ওয়ারেনের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে কম। মুক্তবাজার অর্থনীতি তাদেরই পুরস্কৃত করবে যারা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রা করবে।’
ফোর্বস মিডিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্টিভ ফোর্বস একই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, ‘তিনি যা প্রস্তাব করেছেন তাতে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে। এভাবে কোনো কাজ হবে না।’ সূত্র : গার্ডিয়ান


আরো সংবাদ



premium cement