২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভূমিকম্পে লম্বোক দ্বীপের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

-

গত সপ্তাহের রোববার ছিল ইন্দোনেশিয়ার লম্বোক দ্বীপ ও তার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গিলি তারাওয়ানগান দ্বীপের জন্য একটি অন্ধকার রাত। এ রাতেই প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত ও পর্যটনসমৃদ্ধ দ্বীপ দুটিতে আঘাত হানে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প। শক্তিশালী ভূমিকম্পে যখন নিজের ঘরের দেয়ালগুলো কাঁপছিল, সেই ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পর্যটক টোরি টেলর সেখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছিলেন।
সপ্তাহখানেক আগেও এই দ্বীপে ভূমিকম্প হয়েছিল, কিন্তু গত সপ্তাহের ভূমিকম্পটি ছিল আরো ভয়াবহ। ডায়েরিতে আমেরিকান নাগরিক টোরি টেলর ভূমিকম্প নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন এভাবে, ‘এটা ছিল অবিশ্বাস্য ঘটনা। ভীতিকর শব্দ, পৃথিবীর গর্জন ও ঝাঁকুনিতে দেয়াল এবং মেঝের টাইলস, জানালার গ্লাস ও আয়না ভেঙে পড়ছে, কল ভেঙে ফিনকি দিয়ে পানি বেরিয়ে আসছে এবং বাঁচার জন্য মানুষের চিৎকারÑ সব মিলিয়ে খুবই ভয়ঙ্কর রাত ছিল এটা।’ গিলি দ্বীপপুঞ্জ মোট তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপ তিনটি হচ্ছেÑ গিলি তারাওয়ানগান, গিলি মেনো এবং গিলি এয়ার। ভয়ঙ্কর এই দুর্যোগের উপস্থিত এক দম্পতি ও তাদের আট মাসের শিশুসহ কয়েকজন ইউরোপীয় অতিথির সবাই গাদাগাদি করে অ্যান্ডি ডারমিনের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন। এ সময় তার একজন ইউরোপীয় অতিথি বলেন, ‘আপনি কি আমাকে একটা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন? খরচ যা হয়, সব আমি দিয়ে দেবো।’ গত সপ্তাহে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে প্রায় ৩৫০ জন নিহত এবং এক হাজার ৩৩ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিজের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার মানুষ। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ও উদ্ধারকার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মনে করছে ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। উত্তর লম্বোকের ৭৫ শতাংশ বাড়িই ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সমুদ্রসৈকতের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপগুলোতে হানিমুন পালন করতে আসা দম্পতিসহ পর্যটকেরা যদিও দুর্যোগের সবচেয়ে খারাপ সময়টি এরই মধ্যে অতিবাহিত করেছেন, তারপরও এখানে অবস্থানরতরা এখনো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গিলি এয়ার দ্বীপে একজন পশ্চিমা ডাক্তার এবং কয়েকজন ইংরেজ নার্স মিলে আহতদের চিকিৎসা করতে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করেছেন।
তিনটি দ্বীপের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় গিলি তারাওয়ানগান দ্বীপে ভূমিকম্পে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। দ্বীপটিতে অবস্থান করা ডাক্তার, ডুবুরি ও পর্যটকরা অক্সিজেন ও মৌলিক চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে একটি মেডিক্যাল সেন্টার চালু করেছেন।
ভূমিকম্পের পর কিছু মানুষ এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে তারা ঘরের ভেতরে না ঘুমিয়ে সারারাত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। ভূমিকম্পের পরদিনই আতঙ্কগ্রস্ত হাজার হাজার পর্যটক দ্বীপগুলো ছেড়ে চলে যান। কিছু ক্ষেত্রে তারা আগে নৌকায় উঠতে একে অপরের সাথে ঠেলাঠেলিতে লিপ্ত হন। তাদের বেশির ভাগই নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকেই রওনা হন। পরে অনেকে আবার নির্ধারিত ফ্লাইটের অপেক্ষায় বিমানবন্দরের মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়েন।
পর্যটকদের এই গণ-প্রস্থানের কারণে এখানকার পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায় বাণিজ্য অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে। গিলি এয়ার দ্বীপের সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর সুবিধার্থে বাইক ভাড়া দেন ‘ওশানস ফাইভ ডাইভ’ নামক প্রতিষ্ঠানের ডাচ মালিক স্যান্ডার বুইস। তিনি বলেন, ‘আমি যখন ডানে তাকাই, সেদিকে কাউকে দেখতে পাই না। আমি বামে তাকালেও কাউকে দেখতে পাই না। শুধু সমুদ্র সৈকতে আমার শত শত বাইক খালি পড়ে রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, গিলি এয়ার দ্বীপের আনুমানিক প্রায় ৭০ শতাংশ রিসোর্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি দ্বীপের মধ্যভাগে অনেক ইন্দোনেশিয়ান নাগরিকের বাড়িও ধ্বংস হয়ে গেছে।
গিলি তারাওয়ানগান দ্বীপের প্রায় ৩০ শতাংশ বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ মনে করছে, লম্বোক ও গিলি দ্বীপগুলোয় ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি খুব সহজেই ৫৩ মিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে যাবে।
গিলি তারাওয়ানগান ও গিলি এয়ার দ্বীপে গত শুক্রবার তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দেয়। ভূমিকম্পের পর বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত গিলি এয়ার দ্বীপের হিমাগারের মালিকরা সেখানে রাখা গোশত দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করে। অনেকে আবার এই গোশতের একটি অংশ লম্বোক দ্বীপে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। অন্য দিকে লম্বোক দ্বীপের পরিস্থিতি আরো খারাপ। দেশটিতে ভূমিকম্প-পরবর্তী ঝাঁকুনি অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ৪৫০ বারেরও বেশি ছোট কম্পন হয়েছে। পর্যটকরা আপাতত লম্বোক ও গিলি দ্বীপ থেকে দূরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
ছয় সপ্তাহের মধ্যে জীবনযাপন স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বলে আশা করেন বুইস। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু রিসোর্ট খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং ভালো অবস্থায় আছে। অর্থাৎ পর্যটকরা এখানে যেকোনো সময়ই আসতে পারেন।’
সূত্র : গার্ডিয়ান

 


আরো সংবাদ



premium cement
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক আহত অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর সাংবাদিকের বড় ভাই উদ্ধার মালয়েশিয়ায় ২ হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ১০ নৌ-সদস্য নিহত

সকল