২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হুয়াওয়ে এবং মেং ওয়ানঝু

মেং ওয়ানঝু - ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি প্রযুক্তি বিশ্বে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন মেং ওয়ানঝু। বিশ্বের শীর্ষ টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) তিনি। মেং ওয়ানঝুর আরো একটি পরিচয় তিনি হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট রেন ঝেংফেইয়ের বড় মেয়ে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে টেলিকম সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগে ১ ডিসেম্বর কানাডার ভ্যানকুবার বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর কানাডার একটি আদালত গত ১১ ডিসেম্বর মেং ওয়ানঝুর জামিন মঞ্জুর করেছেন।

হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেইয়ের তিন বিয়ে। মেং ওয়ানঝু তার প্রথম স্ত্রী মেং জুনের মেয়ে। হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেং ওয়ানঝু। দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে ঝেংফেইয়ের এনাবেল ইয়াও নামে আরো এক মেয়ে রয়েছে। ১৯৭২ সালে চীনের চেংদুতে মেং ওয়ানঝুর জন্ম। ১৯৮০ সালে তার পরিবার শেনজেনে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে এ শহরেই হুয়াওয়ের প্রধান কার্যালয়।
মায়ের নামের প্রথম অংশজুড়ে দিয়ে তার নাম রাখা হয় মেং ওয়ানঝু। তবে তরুণ বয়সে তাকে ক্যাথি বা সাবরিনা নামেও ডাকা হতো। ৪৬ বছর বয়সী মেং ওয়ানঝু চীনের হুয়াজং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরপরই তিনি হুয়াওয়েতে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে হুয়াওয়েতে যোগ দেয়ার পর মেং ওয়ানঝু ফিন্যান্স বিভাগে কার্যক্রম শুরু করেন। পরে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। হুয়াওয়ের পরিচালনা পর্ষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। চলতি মার্চে রেন ঝেংফেই এ পদ থেকে সরে দাঁড়ালে বাবার স্থলাভিষিক্ত হন মেং ওয়ানঝু।
মেং ওয়ানঝু চার সন্তানের জননী। তার স্বামীর নাম লিউ জিয়াওজং। চীনা এ ব্যবসায়ী দীর্ঘ সময় ধরে হুয়াওয়েতে কর্মরত আছেন। মেং ওয়ানঝু ও তার স্বামী কানাডার ভ্যানকুবারে দু’টি বাড়ির মালিক। যেগুলোর সমন্বিত মূল্য দুই কোটি ডলারের বেশি।

জামিনের জন্য কানাডার আদালতে নেয়া হলে মেং ওয়ানঝুর আইনজীবী দাবি করেন, হুয়াওয়ের সিএফও থাইরয়েড ক্যান্সারের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। পাশাপাশি তিনি কঠিন খাবার খেতে পারেন না। একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তাকে নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ সেবন করতে হয়। এসব দিক বিবেচনায় মেং ওয়ানঝুকে দ্রুত জামিন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কানাডায় গ্রেফতার মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হতে পারে। আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা দাবি করেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইরানে টেলিকম সরঞ্জাম সরবরাহের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।

হুয়াওয়েতে যোগ দেয়ার পর মেং ওয়ানঝুর দ্রুত উত্থানে অনেকেই ধারণা করেছিলেন রেন ঝেংফেই শিগগিরই বড় মেয়েকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর আসনে বসাবেন। ২০১৩ সালে এক অভ্যন্তরীণ ই-মেইল বার্তায় এ বিষয় স্পষ্ট করেন হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা। ই-মেইল বার্তায় তিনি লেখেন, হুয়াওয়ের সিইওর দায়িত্ব নেয়ার মতো গুণাবলি আমার পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে নেই এবং পরে তার পরিবারের কোনো সদস্যের এ পদে বসার সম্ভাবনা নেই।

হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই রেন ঝেংফেই তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ইয়াও লিং। দ্বিতীয় সংসারে রেন ঝেংফেইয়ের আরো এক মেয়ে আছে। যার নাম এনাবেল ইয়াও। মেং ওয়ানঝু হুয়াওয়েতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করলেও ২১ বছর বয়সী সৎ বোন এনাবেল ইয়াও চীনা রাজকুমারীর মতো জীবনযাপন করেন। এনাবেল ইয়াও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেন। পাশাপাশি তিনি ব্যালে ডান্স ও ফ্যাশনের প্রতি ব্যাপক উৎসাহী। মেং ওয়ানঝু যখন কানাডার ভ্যানকুবারে গ্রেফতার হন, ওই সময় এনাবেল ইয়াও প্যারিসে একটি ফ্যাশন শোতে উপস্থিত ছিলেন।

কেন গ্রেফতার হলো
যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে হুয়াওয়ের শীর্ষ নির্বাহীকে ভ্যানকুবার থেকে গ্রেফতার করে কানাডার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গত ১১ ডিসেম্বর কানাডার ভ্যানকুবারে মেং ওয়ানঝুর জামিন শুনানি শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে বেইজিংয়ে কানাডার সাবেক এক কূটনীতিককে আটক করা হয়। মেং ওয়ানঝুর গ্রেফতারের পেছনে এ কূটনীতিকের স্পষ্ট সম্পর্ক আছে বলে দাবি জানিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ।

ভ্যানকুবারের আদালতে টানা তিন দিনের শুনানি শেষে ৭৫ লাখ ডলার মুচলেকা দিয়ে এবং বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন মেং ওয়ানঝু। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- গোড়ালিতে সার্বক্ষণিক এক বিশেষ ব্রেসলেট পরিধান, পাসপোর্ট জমা দেয়া, ভ্যানকুবার না ছাড়ার নিশ্চয়তা এবং রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ভ্যানকুবারে নিজের দুই বাড়িতেই থাকার নিশ্চয়তা।

মেং ওয়ানঝুকে গ্রেফতার নিয়ে চীন ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। চীন এর আগেই হুঁশিয়ার করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কানাডায় গ্রেফতার মেং ওয়ানঝুর ভবিষ্যৎ যেকোনো খারাপ পরিণতির জন্য কানাডাকে চড়া মূল্য দিতে হবে। যদিও চীন-কানাডা উত্তেজনার মধ্যেই কানাডার জননিরাপত্তামন্ত্রী রালফ গুডেল তাদের সাবেক এক কূটনীতিককে বেইজিংয়ে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement