১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেসবুক প্রধানের পদ হারাতে পারেন জাকারবার্গ

ফেসবুক প্রধানের পদ হারাতে পারেন জাকারবার্গ - সংগৃহীত

ফেসবুক প্রধানের পদ হারাতে পারেন এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির অধিকাংশ শেয়ারহুলডার তাকে স্বপদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে। একের পর এক বিতর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি।

মার্কিন নির্বাচনে ভোটারদের তথ্য বেহাত হওয়ার অভিযোগ, কয়েকদিন আগে ‘ভিউ এজ’ ফিচারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দুই কোটি ৯০ লাখ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া, এমনকি এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সহিংসতা ছড়ানোর মতো বিভিন্ন অভিযোগে টালমাটাল হয়ে পড়েছে ফেসবুক। এরইমধ্যে ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব উঠেছে।

জানা গেছে, বুধবার নাকি সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে ফেসবুকে শেয়ার আছে যুক্তরাষ্ট্রের এমন চারটি বড় পাবলিক ফান্ড। যদিও ফেসবুকের সিংহভাগ শেয়ার নিজের করতলে থাকায় কার্যত হয়তো জাকারবার্গের কিছুই হবে না।

সেটি অবশ্য মানছেন রোড আইল্যান্ডের স্টেট ট্রেজারার সেথ মাগাজিনার। তিনি বলেন, জাকারাবার্গকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার এই প্রস্তাব তারপরও অর্থবহ, কেননা এর মাধ্যমে ফেসবুকের সমস্যা ও তা সমাধানে মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে।

মাগাজিনার আরও বলেন, এর ফলে ফেসবুকের বার্ষিক সভায় বিষয়টি আলোচনা করতে সবাই দায়বদ্ধতা অনুভব করবে। তবে এ বিষয়ে ফেসবুকের মুখপাত্র কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ফেসবুকের বিভিন্ন শেয়ারহোল্ডাররা চাইছে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদ থেকে জাকারবার্গকে সরিয়ে সেখানে স্বাধীন কাউকে নিয়োগ দেয়া হোক। যদিও এসব শেয়ারহোল্ডারের ভাষ্যমতে এতে করে হয়তো সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না, তবে শেয়ারবাজারে ফেসবুকের অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে।

যেমনটা বলছিলেন ইলিনয়স স্টেটের ট্রেজারার মাইকেল ফ্রেরিকস। তিনি বলেন, স্বাধীন চেয়ারম্যান হয়তো ফেসবুকের সব ইস্যুর সমাধান করতে পারবেন না। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির হয়তো কম সমস্যা হবে এবং শেয়ারের দরপতনটাও কিছুটা কমে যাবে।

আগামী বছরের মে মাসে ফেসবুকের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভাকে টার্গেট করেই প্রতিষ্ঠান বড় শেয়ারহোল্ডাররা এই পরিবর্তনের পরিকল্পনার আশা করছেন।

চলতি বছর ফেসবুকের শেয়ারদর খুব ওঠানামার মধ্য দিয়ে গেছে। গত মার্চে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার সাথে ফেসবুকের কেলেঙ্কারির পর এক দফায় ফেসবুকের শেয়ারদর বেশ অনেকটাই পড়ে যায়। এরপর বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারলেও জুলাই থেকে আবারও নানা কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল হয়ে পড়ে প্লাটফর্মটি। এমনকি গত জুলাই মাস থেকে কোম্পানিটির ৩০ শতাংশ অর্থমূল্য কমে গেছেও বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালেও স্বাধীন একজন চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডাদের একটি প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। কেননা ফেসবুকে জাকারবার্গের সিংহভাগ শেয়ার থাকার কারণে বাইরে থেকে ওঠা কোনও প্রস্তাব কার্যত প্রতীকী। তবে ফেসবুককে বাঁচাতে মরিয়া জাকারবার্গ এখন কী করবেন সেটাই দেখার বিষয়।

আরো পড়ুন : ফেসবুক নিয়ে নতুন বিতর্ক
জি. মুনীর ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৩৭

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বিজ্ঞানীরা একমত হয়ে বলেছিলেন, ১৯৫০ সালের পর এ পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে। এর সাধারণ অর্থ, মানুষ ১৯৫০ সালের পর আর এ পৃথিবীতে বসবাস করতে পারবে না। কিন্তু ১৯৫০ সালের পর ২০০০ সাল পেরিয়ে আমরা আজকের ২০১৮ সালেও এ পৃথিবীতে বসবাস করছি। এখন আর কেন বিজ্ঞানী এমনটি বলছেন না, ২০৫০ সালে কিংবা ৩০০০ সালের পর এ পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে না। তাহলে প্রশ্ন আসে, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের বিজ্ঞানীরা কি ভুল বলেছিলেন? আসলে এসব বিজ্ঞানী যে সময়টায় দাঁড়িয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তখনকার প্রেক্ষাপটে তাদের এই ভবিষ্যদ্বাণী হয়তো সঠিক ছিল। কারণ, তখন তাদের ধারণায় ছিল না, পরবর্তী সময়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এতটাই অগ্রসর হতে পারে যে, বিজ্ঞানের এ অগ্রগতি পৃথিবীকে আজো আমাদের জন্য বসবাসযোগ্য রাখতে সক্ষম হয়েছে। আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিই মানুষের জন্য বয়ে আনে অনন্য এক সুযোগ। সে সময় যখন দেখা গেল, মানুষ যেমন বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করছে, তেমনি বিজ্ঞানের অপব্যবহারও করছে, বিজ্ঞানকে সরাসরি ব্যবহার করছে মানুষের অস্তিত্ব বিনাশের কাজে; তখন থেকে প্রশ্ন জাগে-বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? সে প্রশ্নে বিজ্ঞানকে মানুষ প্রধানত আশীর্বাদ হিসেবেই নিয়ে পথ চলেছে। যে কারণে মানুষ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে। 

আজ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। আজো একইভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে দু’ভাবে- ইতিবাচক ও নেতিবাচক। তাই তথ্যপ্রযুক্তিকে নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন। সেই সাথে থেকে গেছে সেই পুরনো প্রশ্ন- তথ্যপ্রযুক্তি কি আশীর্বাদ না অভিশাপ? এখানেও তথ্যপ্রযুক্তিকে যথার্থ কারণে আশীর্বাদ হিসেবেই মানুষ নিয়েছে সমধিক মাত্রায়। তথ্যপ্রযুক্তিকে আজ মানুষ বিবেচনা করছে উন্নয়নের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে। আর তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে বিজ্ঞানের বাণিজ্যিক শাখা। তাই তথ্যপ্রযুক্তিকে অস্বীকার করার অপর অর্থ, বিজ্ঞানকেই অস্বীকার করা, যা করার কোনো অবকাশ নেই। এ পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য রাখতে এবং বিশ্বের অন্যান্য জাতির সাথে সমতালে চলতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবন থেকে বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

স¤প্রতি দেশে ফেসবুক নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সে প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই এ কথাগুলো বলা। তথ্যপ্রযুক্তির অনন্য এক উপাদান হচ্ছে ফেসবুক। আমাদের সংস্কৃতিতে ফেসবুকে প্রবেশ ২০০৫-০৬ সালের দিকে। এটি আমাদের জন্য মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে এক অবারিত সুযোগ এনে দিয়েছে। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় অভূতপূর্ব এক মাধ্যম। কিন্তু মাঝে মধ্যেই এর ওপর আসে নানা ধরণের অনাকাংক্ষিত আঘাত।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোরজি ও থ্রিজি সেবা গত ৪ আগস্ট ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে মূলত মোবাইল ফোনভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেটের এমন অবস্থার কারণে এই সময়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। ওই সময় শিক্ষার্থীদের  আন্দোলনের কারণে বেশ কয়েক দিন গণপরিবহন একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তখন রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি উবার ও পাঠাওয়ের মতো রাইড ব্যবহার করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন রাজধানীবাসী।

কিন্তু ফোরজি ও থ্রিজি ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হন এরা। কারণ, মোবাইল ফোন থেকে কোনো রাইডের জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেননি। তবে শহরের মোড়ে মোড়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের চালকেরা ডেকে ডেকে যাত্রী পরিবহন করেছেন। রাইড শেয়ারিং সেবা পুরোপুরি ইন্টারনেট-নির্ভর। ইন্টারনেট সেবা না দিলে এ সেবা দেয়া সম্ভব নয়। এমনকি ইন্টারনেটের গতি ধীর হলে এবং ধারাবাহিকতা না থাকলে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্র্ধারণ করা যায় না। ওই ২৪ ঘণ্টা রাইড শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি পাঠাও পার্সেল, পাঠাও ফুড, পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসও ব্যবহার হয়েছে।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান সূত্র মতে, ঢাকায় প্রতিদিন পাঠাও এবং উবারের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ হাজার রাইড দেন যাত্রীরা। সেটি ওই সময়টায় তিন হাজারে নেমে যায়।

এ ছাড়া, ছোট ছোট অন্য রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের সেবাও একইভাবে কমেছে। রাইড শেয়ারের পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসায়ও গত ৫ আগস্ট ধস নামতে দেখা গেছে। অনলাইন-ভিত্তিক টিকিট বেচাকেনা প্রতিষ্ঠান বিডিটিকিটসে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র তিনটি টিকিট বিক্রি হয়। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ থেকে ২০০ টিকিট বিক্রি করে। গত ৫ আগস্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ওই সময়ে পরিবহন ধর্মঘট চলা ও ইন্টারনেটের ধীরগতির জন্য তা শুরু করা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে জানান, ইন্টারনেট ধীরগতির ধাক্কায় ই-কমার্স ব্যবসায় এক দিনে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ই-ক্যাবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য নিয়ে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়। ই-ক্যাবের নিবন্ধিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন প্রায় ৭৫০। এর বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যেমন বাগডুম ও চালডাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। 

এ তো গেল ই-কমার্সের কথা। আজকাল প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়ই ইন্টারনেট-নির্ভর। অতএব, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে প্রতিটি ব্যবসায়ই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুখের কথা, মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। আমরা জানি, প্রতিটি বিষয়েরই ভালো-খারাপ দু’টি দিক থাকে। মাথা থাকলে মাথাব্যথা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা যাবে না। চেষ্টা করতে হবে, কী করে মাথাব্যথা সারানো যায়। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনের সময় ফেসবুকের অপব্যবহার হচ্ছে বলে সরকারপক্ষের যে দাবি, সেজন্য ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া এবং ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া যৌক্তিক পদক্ষেপ হতে পারে না। যৌক্তিক হবে এর অপব্যবহার যারা করছে, তাদের সেই কাজ বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু গত ৪ আগস্ট ২৪ ঘণ্টার জন্য ফোরজি ও থ্রিজি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি মাথাব্যথা দূর করতে মাথা কেটে ফেলারই শামিল। কারণ, এর ফলে অগুনতি মানুষ দুর্ভোগে পড়বে, ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষতি হবে- সে চিন্তা আমরা মাথায় নিইনি।

এ দিকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ওপর সরকার কড়া নজরদারি বা¯Íবায়ন করতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। অনেকে মনে করেন, এ জন্য সরকার সাইবার পুলিশ সেন্টার গঠন করতে যাচ্ছে। এই সেন্টার সাইবার-ক্রাইম তদন্তে কাজ করবে। সিআইডির অধীনে এর কার্যক্রম চলবে। এরই মধ্যে সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপনে জনবল প্রস্তাবে সায় দিয়েছে প্রশাসন উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি। তাই শিগগিরই সাইবার পুলিশ সেন্টারের জন্য জনবল নিয়োগ করা হবে। এ দিকে পুলিশের জন্য নতুন করে চারটি অতিরিক্ত আইজিপির পদ সৃষ্ট করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগে অনলাইনে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরো চাপের মুখে পড়বে।

সমালোচকেরা বলছেন, সরকার আগামী নির্বাচনে বিরোধী মতকে আরো নিয়ন্ত্রিত করার অংশ হিসেবে এক সময় ফেসবুকও বন্ধ করে দিতে পারে। এরই মধ্যে পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে বলে মনে হয়। কারণ, এরই মধ্যে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় একটি আদেশ জারি করেছে। দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় এ আদেশের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ওপর অনেকটা নিষেধাজ্ঞাই জারি করল বলে মনে হয়। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতামূলক নোটিশ দিয়েছে। এ নিয়ে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের গুজব প্রচারণার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শতাধিক ফেসবুক আইডি চিহ্নিত করে এগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক অফিস আদেশে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্র্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মতামত দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

নির্দেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়। অন্য দিকে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এ ধরনের একটি নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক করেছে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ধারা ৫(ঙ)-এর আলোকে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো প্রচারমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো বক্তব্য, বিবৃতি ও স্ট্যাটাস দেয়া বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী।

মনে হয়, এসব আদেশের মাধ্যমে এসব বিশ্ববিদ্যালয় বাকস্বাধীনতা খর্ব করেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের চাপের মুখে পড়েই অনৈতিক এ আদেশ জারি করেছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ আরো স¤প্রসারিত করতে পারে। তা ছাড়া, গত ৪ আগস্টের মতো, সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে যেকোনো সময় ফেসবুক বন্ধ করে দিতে পারে। তা ছাড়া, যে পুলিশ সাইবার সেন্টার গঠন করা হচ্ছে, তা দিয়ে বিরোধী মত-পথের মানুষকে হয়রানির শিকারে পরিণত করা হতে পারে।

সরকার বারবার বলছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা থাকবে না। কিন্তু এখনো তা বাতিল করা হচ্ছে না, বরং সা¤প্রতিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় এই ৫৭ ধারা প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। তাই অনেকেরই আশঙ্কা, সরকার আগামী নির্বাচনের আগে নানাভাবে বাকস্বাধীনতা সঙ্কুচিত করায় উদ্যোগী হবে। এ জন্যই বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকার ৫৭ ধারা বাতিল করছে না। মনে হয় না, নির্বাচনের আগে এই ৫৭ ধারা বাতিল হবে। এটা আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। বিবেকবান মানুষের প্রত্যাশা, সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। বিশেষ করে এই সময়টায়, যখন আগামী নির্বাচন নিয়ে রয়েছে নানা আশঙ্কা। তা ছাড়া, প্রযুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করার অপর নাম, অগ্রগতিকেই বাধাগ্রস্ত করা। আর ফেসবুক বাধাগ্রস্ত করার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা বাকস্বাধীনতাকে হরণ করারই নামান্তর। এটি যেন আমরা ভুলে না যাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল