২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অর্গ্যানিক খাদ্য আসলে কী

অর্গ্যানিক খাদ্য আসলে কী - সংগৃহীত

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার জন্য আদালতের আদেশের পর খাদ্যে ভেজাল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে যারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত অর্থাৎ অর্গানিক খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করেন তারা বলছেন সম্প্রতি তাদের ক্রেতা হঠাৎ করেই খানিকটা বেড়ে গেছে।

ফল ও সবজিতে রাসায়নিক পদার্থ বা খাদ্যে ভেজাল নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেকেই এই ব্যবসাতেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কিন্তু তারা নিজেরা আদৌ অর্গানিক সামগ্রী দিচ্ছেন কিনা সেটি কি কোনভাবে নিশ্চিত হচ্ছে?

ক্রেতারা কী বলছেন?

অর্গানিক ফল, সবজি বা খাবার এমন শব্দ লিখে অনলাইনে একটু খুঁজতেই অনেকগুলো সরবরাহকারীর নাম চলে এলো। ফেসবুকেও এরকম নানা নাম চোখে পড়লো।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় এরকম একটি বিপণন কেন্দ্রে সদাই করছিলেন কলাবাগানের একজন বাসিন্দা।

তিনি বলছিলেন কী খাচ্ছেন তা নিয়ে তিনি আজকাল রীতিমতো আতঙ্কিত। তিনি বলছেন, "ভীষণ আতঙ্ক আমার। যেখানে যাই সেখানেই দুষিত জিনিস। আমি জানি না বাংলাদেশে কেন এত নকল, এত ভেজাল আমার মাথায় আসে না। কেন এত ওষুধ দেয়, ইনসেক্টিসাইড দেয় আমি বুঝি না।"

কী ধরনের অর্গানিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে?

অর্গানিক বলে যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার বিপণন কেন্দ্রগুলোতে একটু অন্য আকৃতির লাউ, কলা, কুমড়ো বা মৌসুমি ফল চোখে পড়লো।

একটু জীর্ণ দেখতে সবজিও রয়েছে। এসব দোকানে সরিষার তেল, ঘি বা মধুর বোতলে নেই বাণিজ্যিক পণ্যের চাকচিক্য।

মোড়কে ঝলমলে লোগো, ছবি অথবা মডেলরাও অনুপস্থিত। অর্গানিক সামগ্রীর ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠান হার্ভেস্ট।

এর কর্মী বাসুদেব সরকার বলছেন তারা কিভাবে এসব পণ্য সংগ্রহ করেন।

তিনি বলছেন, "আমাদের নিজেদের ডেইরি খামার আছে। সেখানে দুধ, দই হয়। নিজেদের ঘানিতে সরিষার তেল, নিজেদের ফার্মে ঘি হয়। চালডাল আমরা যেগুলো বিক্রি করি সেগুলো আমরা গ্রামে কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।"

পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেও সংগ্রহ করছেন অনেকে।
সরকারের কাছে জানতে চাইলাম কৃষক তাদের কি দিচ্ছেন কিভাবে যাচাই করা হয়?

তিনি বলছেন, "নির্দিষ্ট কিছু কৃষক আছে আমাদের। আমরা নিজেরা মাঠে গিয়ে পরিদর্শন করি। জিনিসটা দেখে যাচাই বাছাই করেই তারপরই আমাদের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।"

অর্গানিক কিনা সেটি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছে?

যে ভোক্তাদের কথা উল্লেখ করছেন বাসুদেব সরকার তাদের একজন নাইমা খানম কাছাকাছি সময়ে খাদ্য পণ্য নিয়ে আতঙ্কের কারণে এসব দোকানে আসতে শুরু করেছেন।

তিনি বলছেন, "দাম অনেক বেশি। তারপর সব জায়গায় পাওয়াও যায়না। যেসব দোকান অর্গানিক বলে দিচ্ছে আদৌ কি সেগুলো অর্গানিক কিনা সেটাও আমরা জানিনা। তারপরও যাচ্ছি। যেন একটু ভেজাল কম খাই। সেই চিন্তা থেকে যাই।"

নাইমা খানমের এমন সন্দেহ একেবারে অমূলক তা বলা যাবে না।

যেসব খাদ্য সামগ্রী প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত বা অর্গানিক বলে বিক্রি হচ্ছে তা পরীক্ষা করা হয় না বলে জানিয়েছে খাদ্যের মান পরীক্ষা করার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন বা বিএসটিআই।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা আরও বলছেন ফল বা সবজির মতো সামগ্রী তাদের আওতায় পরে না।

ভোক্তারা কিভাবে বুঝবেন তিনি আসলে কি খাচ্ছেন?

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের সমন্বয়কারী দেলোয়ার জাহান বলছেন, সেটি খেয়েই বুঝতে হবে।

সেটি কেমন হতে পারে তার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছেন, "প্রথমত দেখা। বাজারের বেগুন এখানকার বেগুন দেখতে অন্যরকম। ধরুন বাজারের কলা কিভাবে পাকে আর এখানকার কলাগুলো কিভাবে পাকে তার প্রসেস দেখলেই সে বুঝতে পারবে।"

তিনি বলছেন, এর পরে পরীক্ষা হবে রান্নায়। প্রচুর সার বা অন্যান্য রাসায়নিক দেয়া সবজি বা ফল রান্না করার সময় প্রচুর পানি বের হয়।

আর তার মতে শেষ পরীক্ষা হবে খাবার টেবিলে।

তিনি বলছেন, "রাসায়নিক সার যদি দেয়া থাকে তাহলে আদি স্বাদ সে পাবে না। যেমন রাসায়নিক যুক্ত পুইশাক খেতে গেলে রাবারের মতো লাগবে। কিন্তু যদি রাসায়নিক না দেয়া থাকে তাহলে সে পুইশাকের যে আদি স্বাদ যে ঘ্রাণ সেটাই সে পাবে। সে বিশ বছর বা চল্লিশ বছর আগে ফিরে যাবে।"

তিনি বলছেন, বেশিরভাগ লোকে মনে করে সবজি বা ফল চক চক করলে বা তা দেখতে সুন্দর হলে সেগুলোই ভালো। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তার মতে মানুষজনকে বিষয়টা বোঝানো মুশকিল।

দায়ভার পুরোটাই সরকারের?

কিন্তু যেখানে দেশটির খাদ্যসামগ্রীর মান পরীক্ষাকারী সরকারি সংস্থাই বিষয়টি পরীক্ষা করছে না তাহলে অর্গানিক সামগ্রীর মান নিশ্চিত হচ্ছে কিভাবে?

বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ দেশীয় বীজ ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার বলছেন, বাংলাদেশ অর্গানিক খাদ্য সরবরাহ করা বেশ মুশকিল। কেননা ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতা এখানকার কৃষির সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে।

আর এর দায় তিনি পুরোটাই দিচ্ছেন সরকারের উপরে।

তিনি বলছেন, "আমরা এককালে সরকারি নীতি হিসেবেই কিন্তু বিষ ব্যবহার করেছি। এক সরকার না বহু সরকার এবং স্বাধীনতার পর থেকেই হয়েছে। একসময় এটাই বলা হয়েছিলো খাদ্য উৎপাদনে এটাই জরুরি। এর দায় তাই সরকারকেই নিতে হবে।"

তিনি আরো বলছেন, "এই নীতির কারণে এমন এমন সব বিষাক্ত পেস্টিসাইড, ইনসেক্টিসাইড এমনকি হার্বিসাইড ওটা দিয়েও কিন্তু সব নষ্ট করেছে। নিরাপদ খাদ্যের একটা ফরমুলা রয়েছে যে 'ফ্রম ফার্ম টু ফোর্ক' অর্থাৎ কৃষকের মাঠ থেকে খাবারের পাত পর্যন্ত, সেখানে আমার যে একদম শুরুর যায়গা সেটাকেই আমরা বিষাক্ত করে রেখেছি।"

তার প্রভাব পরছে মানুষের স্বাস্থ্যে। যা থেকে মুক্ত নয় কৃষক, বিক্রেতা, ভোক্তা বা কর্তৃপক্ষ কেউই।

এখন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত পণ্যই এর সমাধান বলছিলেন ফরিদা আক্তার।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement