২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মা-বাবার খোঁজে ৪২ বছর পর জার্মান থেকে বাংলাদেশে সেলিনা

মা-বাবার খোঁজে ৪২ বছর পর জার্মান থেকে বাংলাদেশে সেলিনা ম্যাকডোনাল - নয়া দিগন্ত

১৯৭৬ সালের কথা। পাঁচ দিনের শিশু কন্যাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় মা-বাবা। স্থানীয় এক লোক শিশুটিকে কুড়িয়ে একটি এতিমখানায় নিয়ে যাবার সময় ওই পথে যাচ্ছিলেন এক কানাডিয়ান দম্পতি। ওই দম্পতি শিশুটি দেখে দত্তক নিয়ে যেতে চাইলে লোকটি কানাডিয়ান দম্পতির হাতে ওই শিশুকে তুলে দেন। পরবর্তীতে সেই দম্পতি শিশুটিকে নিয়ে কানাডায় চলে যান। এরপর তিনি কানাডাতে সেলিনা ম্যাকডোনাল নামে বড় হতে থাকেন। চাকুরির সুবাদে সেলিনা দত্তক বাবার হাত ধরে জার্মানিতে চলে যান। সেই থেকে জার্মানিতেই বসবাস করছেন তিনি। শিশুটির গ্রামের বাড়ি ছিল জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রামে। ছোটবেলায় কানাডিয়ান দত্তক বাবার কাছে এমন গল্পই শুনেছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এমন গল্প শুনিয়ে সেলিনা ম্যাকডোনাল জানান, ৪২ বছর পর মা-বাবার খোঁজে জার্মানি থেকে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তার দত্তক বাবা জন ম্যাকডোনাল ১৯৭৬ সালের জুন বা জুলাই মাসে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রাম থেকে তাকে দত্তক হিসেবে নিয়ে যান। জন ম্যাকডোনাল তখন একটি বেসরকারি শিশু সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছিলেন। বাংলাদেশে কাজ শেষে জন ম্যাকডোনাল তাকে জার্মানি নিয়ে যান এবং সেলিনা মেগডোনাল নামে একটি স্কুলে ভর্তি করান। তার বয়স যখন ৬ বছর তখন তিনি জানতে পারেন তাকে বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়েছে এবং জন ম্যাকডোনাল তার দত্তক বাবা। তিনি জার্মানিতে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। স্টেফান নামে এক জার্মান নাগরিকের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের এঞ্জেলা (২২) নামে একটি মেয়ে ও ফিন (১৫) নামে পুত্র রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে সেলিনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জামালপুরের সরিষাবাড়ি খোঁজে বের করেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি জার্মান বন্ধু মার্ক সিয়েরারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

সেলিনা জানান, প্রথম স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট শহরের কাছে এক হাসপাতালের চিকিৎসক মার্ক সেয়ারার সাথে তার পরিচয় হয়। একই হাসপাতালে তিনিও চাকরি করেন। তিনি মার্ক সেয়ারারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গত ৪ অক্টোবর তারা ঢাকায় আসেন এবং এক জার্মান প্রবাসীর আশ্রয়ে হোটেলে উঠেন। তারই পরামর্শে জার্মান প্রবাসী ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেনকে সাথে নিয়ে ৭ অক্টোবর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রামে যান।

সেলিনা জানান, জন্মস্থানে মা-বাবাকে খুঁজে না পেয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং গ্রামের মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আবারো জন্মস্থানে আসার কথা বলে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। সেলিনা আরো জানান, দত্তক বাবা জন ম্যাকডোনাল গুগুল ম্যাপের মাধ্যমে জন্মস্থান জামালপুরের সরিষাবাড়ি সনাক্ত করেন এবং ফেসবুকের মাধ্যমে তার জন্মস্থানের একটি মসজিদের ছবি প্রিন্ট করে সেলিনা মেগডোনালকে দেন। এসব সূত্র ধরেই তিনি ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেনের সহায়তায় জামারপুরের গাইতিপাড়া গ্রামের সন্ধান পান।

সেলিনা মেগডোনাল আক্ষেপ নিয়ে জার্মান ফিরে যাবেন এবং আবার তিনি বাংলাদেশে আসবেন। আরো দু’সপ্তাহ তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এসময় তিনি সুন্দরবনসহ বগুড়া ও খুলনার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ শেষে জার্মানীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলেও জানান তিনি।

জার্মান প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জানান, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় চার ঘণ্টা ঘুরাঘুরির পর সেলিনা মেগডোনালের জন্মস্থান গাইতিপাড়া গ্রামের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে সেলিনার ছোট বেলায় ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নিজের মা-বাবার সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি আরো জানান, জার্মানীতে থাকাকালে তিনি ময়মসসিংহ শহর বাইপাস মোড়ে একটি আবাসিক হোটেল ও ব্যবসা করছেন। তার জার্মান প্রবাসী বন্ধুদের অনুরোধে সেলিনা ম্যাকডোনালকে তার হোটেলে স্বল্পমূল্যে থাকার ব্যবস্থা করেন। একই সাথে সেলিনার মা-বাবাকে খুঁজতে তিনিও জামালপুরে যান। 


আরো সংবাদ



premium cement