১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক বাড়িতে ১১ জন বাক প্রতিবন্ধী, এলাকাবাসীর কাছে ‘আব্রাদের বাড়ি’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহানাটি ইউনিয়নের পলটিপাড়া গ্রামের একই বাড়ির ১১ জন বাসিন্দাই বাক প্রতিবন্ধী। এ কারণে এলাকাবাসী ওই বাড়িটিকে ‘আব্রাদের বাড়ি’ বলে ডাকে। সেই বাড়িতে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ৩০ জনের মতো বাসিন্দা বসবাস করেন।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ জেসমিন নাহার (৩৫) এর সাথে কথা জানা যায়, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিকার বাড়ির বাসিন্দাদের সাথে ইশারায় কথা বলতে হয়। কারণ তারা কানে শুনে না। এই জন্য তিনি তাদের সাথে কথা বলার জন্য সাংবাদিকদের সহায়তা করেন।

এ সময় গৃহবধু জেসমিন বলেন, তিনি এখানে বধূ হিসেবে আসার পর থেকে এই বাড়ি বাসিন্দাদের সাথে ইশারা ভাষায় কথা বলতে গিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি তাদের সুখ-দুঃখের কথা বুঝতে পারেন। তার ইশারাও বাকপ্রতিবন্ধীরা বুঝতে পারেন।

জেসমিন আরো বলেন, এই বাড়ির তিন মেয়ে হচ্ছেন চান বানু (৬৫), তাহের বানু (৫৫) ও জাহের বানু (৪৫)। তারা তিনজনই বাকপ্রতিবন্ধী। চান বানুর দুই সন্তান হচ্ছেন মো. আবদুল মালেক (৩৩) ও আবদুল খালেক (৩৬)। তারা দুজনই বাকপ্রতিবন্ধী। তাহের বানুর এক সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক। জাহের বানু নিঃসন্তান।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের কেউ কাজে নেয় না। ফলে তারা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই নারীদের বিয়ে হলেও শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশিদিন স্বামীর ঘর করার সৌভাগ্য হয়নি। স্বামীরা তাদেরকে বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে গেছে। ফলে ভাইদের আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে তাদেরকে।

এদিকে চান বানু ছেলে আবদুল মালেকের তিন সন্তানের মধ্যে আবার দু’জনই বাকপ্রতিবন্ধী। আরেক ছেলে আবদুল খালেকের তিন সন্তানের মধ্যে একজন বাকপ্রতিবন্ধী।

প্রতিবেশী গৃহবধূর মাধ্যমে কথা বলে জানা যায়, অন্যের জমিতে মজুর খেটে সংসার চলে তাদের। তাদের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে শ্রবণ সমস্যা। কেউ কাজে নিলেও ডেকে তাদের সাড়া পান না। ছোট কিছু দিয়ে শরীরে ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে সাড়া পেতে হয়।

ওই বাড়ির দুই ছেলে (চান বানুদের ভাই) হচ্ছেন, মো. মেরাজ মিয়া (৬৫) ও আবদুস সাত্তার (৫৫)। তারা দুজনও বাকপ্রতিবন্ধী। মেরাজ মিয়া বিয়ে করলেও বাকপ্রতিবন্ধকতার কারণে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। আবুদস সাত্তারের এক সন্তানও বাকপ্রতিবন্ধী।

উল্লিখিত ১১ জন বাতপ্রতিবন্ধীর মধ্যে কেবল আবদুস সাত্তার সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে সাত্তারের এক বছরের (জুলাই ১৫ থেকে জুন ১৬) ভাতা সহনাটি ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ প্রতিনিধি যখন তাদের (প্রতিবন্ধী) তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তখন বাকপ্রতিবন্ধীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে দোভাষীর দায়িত্ব পালনকারী গৃহবধূ জেসমিন বলেন, অর্থ আত্মসাত ও সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে একাধিকবার বাকপ্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলে নিলেও সরকারি কোনো ভাতা না পাওয়ার কারণে এ সাংবাদিককে ইউপির লোক মনে করে ক্ষোভ দেখান তারা। পরে বুঝিয়ে বললে তারা শান্ত হন।

বাড়ির অন্য বাসিন্দারা বলেন, আমাদের বাড়িতে নলকূপ নেই। খাবার পানির তীব্র সংকট। বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। বসতঘর ভেঙে পড়ছে। হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য হলেও দালালকে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে হয়েছে।

প্রতিবেশী মো. ইসলাম উদ্দিন ও আবদুর রশিদ বলেন, টেলিভিশনে দেখি সরকার হতদরিদ্রদের এত সাহায্য-সহযোগীতা করছে। তাহলে গৌরীপুরের পলটি পাড়ার এই বাড়ির ১০ জন বাকপ্রতিবন্ধী বাসিন্দা কেন সরকারের প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আপনারা (সাংবাদিক) দূর থেকে বাড়িতে এসে খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের লোকজন কেন খোঁজ নিতে আসেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মুঠোফোনে বলেন, আমার কাছে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডই আসে কম। তাই সারা ইউনিয়নের প্রতিবন্ধীর সংখ্যা মাথায় রেখে বিতরণের কাজটি করতে হয়। সুযোগ পেলে ওই বাড়িতে সরকারি ভাতার একাধিক কার্ড দেবেন বলে জানান।


আরো সংবাদ



premium cement